• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ঈদের আনন্দ নেই ভিটে-মাটি হারা মানুষগুলোর  

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা, আরটিভি নিউজ

  ১৮ জুলাই ২০২১, ২০:৪৯
ঈদের আনন্দ নেই ভিটে-মাটি হারা মানুষগুলোর  
ছবি- আরটিভি নিউজ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের নদী পাড়ের মানুষের এবার নেই ঈদ আনন্দ। একদিকে করোনা ভাইরাস, অন্যদিকে ভাঙ্গন। কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো মানবেতর জীবন যাপন করায় এবার ঈদের আনন্দে ভাটা পড়েছে। নদী ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব এসব মানুষের ঠাঁই হয়েছে জালালপুরের জরাজীর্ণ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। সেখানে গবাদি পশু আর মানুষ বাস করছে এক সঙ্গে।

আর অব্যাহত নদী ভাঙনে এ আশ্রয়ণ কেন্দ্র রয়েছে হুমকির মুখে। এতে শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও হারানোর শঙ্কায় এখানকার বাসিন্দারা। এ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে বসবাস করছেন নদী-ভাঙন কবলিত ৫টি গ্রামের মানুষ। ভরা সংসার নদীতে চলে যাবার পর নির্ঘুম রাত কাটে ভাঙা চালের নিচে জরাজীর্ণ এমন ঘরে। বৃষ্টি নামলে যেন দুর্ভোগের কমতি থাকে না তাদের।

আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া শাহজাদপুর উপজেলার পাকোড় তলা গ্রামের লাইলি বেগম আরটিভি নিউজকে জানান, এক সময় বাড়ি-ঘর থেকে শুরু করে পূর্ণ সংসার ছিল তার। স্বামীও কৃষি কাজ করায় ৩ কন্যা সন্তান নিয়ে বেশ আনন্দেই সংসার চলছিল। যমুনার ভাঙনে প্রথম বার বাড়ি-ঘর বিলীন হলেও কিছু জায়গা ছিল। সেখানে আবারও নতুন ঘর তৈরি করে থাকতেন তারা। যমুনা নদী কেড়ে নিয়েছে তার শেষ ভিটে মাটি টুকু। সব হারিয়ে আশ্রয় হয়েছে পাশের গ্রাম জালালপুরের জরাজীর্ণ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। সেখানে তারা বর্তমানে একটি কক্ষে গরু-ছাগল ও ৩ কন্যা সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। করোনার কারণে স্বামী মুজিবরের আয় রোজগার না থাকায় এবারের ঈদ যেন তাদের কাছে সাধারণ দিনের মতই।

স্বামী পরিত্যক্তা আশি বছরের বৃদ্ধা সাধনা ঘোষের অবস্থা আরও করুণ! তিনিও এ আশ্রয়ণ কেন্দ্রের একজন বাসিন্দা। স্বামী মারা গিয়েছে অনেক আগে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য নিয়ে বিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়ের। বিয়ের পর জানেন এক মেয়ের স্বামী আয় রোজগার করেন না, বখাটে ধরনের। যার কারণে ওই মেয়ের ভার এখন বৃদ্ধা সাধনার কাঁধে। যেখানে একাই দু বেলা দু মুঠো ভাত পাওয়া দুষ্কর আর সেখানে টানতে হচ্ছে মেয়েকেও। অন্যদিকে নদী ভাঙনে সব হারিয়ে ঠাঁই হয়েছে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। ঝুঁকিপূর্ণ এ আশ্রয়ণ কেন্দ্রও ভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলে শেষ আশ্রয়স্থল টুকুও হারানো শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটে তার।

একই এলাকার কাশেম কোহিনুর দম্পতি। সম্প্রতি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বাড়ি-ঘর। এনিয়ে ৫ বার বিলীন হয়েছে বাড়ি-ঘর। সব হারিয়ে আজ নিঃস্ব কাশেম দম্পতি। ঠাঁই হয়েছে জরাজীর্ণ আশ্রয়ণে। কাশেম আরটিভি নিউজকে জানান, আমাদের আবার কিসের ঈদ! কোন দিন ভাবি নাই নিজের ঘর বাড়ি থাকবে না। গবাদি পশু আর আমরা এক সঙ্গে থাকবো। তবুও বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে। ঈদ বলতে কিছু নেই।

খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রের আরেকজন বাসিন্দা বাঁশি-ওয়ালা মনতাজ আলী। বিভিন্ন হাটে বাজারে বাঁশি বাজিয়ে যা আয় রোজগার হয় তা দিয়ে কোন মতে দিনাতিপাত করতেন তিনি। কিন্তু এখন আর যে দিন নেই। মনতাজ আলী আরটিভি নিউজকে জানান, করোনার কারণে অনেকদিন আয় রোজগার নেই। খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছি। কেউ আমাদের খবর নেয় না। এবারের ঈদ পালনের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, বাবারে চালের বদলে আটা কিনে নিয়ে যাচ্ছি। দেখছেন না গায়ে ছেড়া শার্ট। টাকা থাকলে এই অবস্থায় থাকি?
তিনি আরও জানান, জরাজীর্ণ এমন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে এখানকার বাসিন্দারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করলেও এদের ব্যাপারে তেমন কোন উদ্যোগ নেননি সরকারি কোন কর্মকর্তা। সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেনি স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা আরটিভি নিউজকে জানান, ঘরগুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আশ্রয়ণে চিঠি পাঠানো হয়েছিল কিন্তু বরাদ্দ না আসায় ঘরগুলো সংস্কার করা হয়নি। আর তাছাড়া ঘরগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন আর সংস্কারের কোন সুযোগ নেই। তবে সেখানে স্থায়ীভাবে কিছু করা যায় কিনা সে ব্যাপারে আশ্রয়ণের সাথে কথা বলা হবে। বরাদ্দ আসলে নতুন ঘর তৈরি করা হবে বলে তিনি জানান।

এছাড়া জরাজীর্ণ এ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে দেড়শ পরিবারের প্রায় সাড়ে ৭শ মানুষ বসবাস করছে। এসব নদী-ভাঙন কবলিত মানুষদের মৌলিক অধিকার বাসস্থান গড়ে দিয়ে সরকার তাদের নিরাপদে বসবাসের সুযোগ করে দিবে এমনটাই প্রত্যাশা নদী-ভাঙনে বাস্তুহারা এসব মানুষের।

জিএম

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh