• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
logo

গরুর খামার করে জিরো থেকে হিরো শাহ নেওয়াজ

আব্দুল আজিজ

  ২০ জুন ২০২১, ১৫:৫১
গরুর খামার করে জিরো থেকে হিরো শাহ নেওয়াজ

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বড়গলি (মেলার বাগান) গ্রামের সফল উদ্যোক্তা শাহ নেওয়াজ। গেল ২০১৩ সালে দুই লাখ টাকা পুঁজিতে বাজার থেকে কিনেছিলেন বিদেশি জাতের দুটি গরু। সেই দুটি গরু থেকে ৮ বছরের মাথায় তার নিজস্ব বাড়িতে গড়ে উঠেছে ‘নেচার ফ্রেশ ডেইরি ফার্ম’। তিন ভাই সমন্বয়ে শখের বসে মাত্র দুটি গরু কেনার মধ্যে দিয়ে বিদেশি গরু পালন শুরু করেছিল শাহ নেওয়াজ। সেই দুটি গরু খুলে দিয়েছে তার ভাগ্যের চাকা। গড়ে তুলেছেন বৃহৎ দুগ্ধজাত গরুর খামার। যা থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে শত শত যুবক।

গরুর খামার ঘুরে দেখা যায়, তিনটি আলাদা শেডে গরু রয়েছে ৭০টি। এসব গরুর লালন পালন এবং যত্নে কাজ করছে ১০ জন শ্রমিক। খামারে ঢুকেই প্রথম শেডে রয়েছে ১৬টি বকনা বাছুর। দ্বিতীয় শেডে রাখা হয়েছে বাচ্চা প্রসবে অপেক্ষমান গাভী। সেই শেডে বর্তমানে রয়েছে ৩টি গাভী। আগামী দুই এক মাসের মধ্যেই বাচ্চা প্রসব করবে এই তিনটি গাভী। তৃতীয় এবং বৃহত্তম শেডে রাখা হয়েছে শুধু দুগ্ধজাত গাভী। এসব গাভী প্রতিদিন প্রায় ২শ’ লিটার দুধ দেয়।

খামারে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, এসব বিদেশী জাতের গরু লালন পালনে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। গরু থেকে দুধ সংগ্রহ করতে তুরস্ক থেকে অর্ধ লাখ টাকা মূল্যে কিনে আনা হয়েছে আধুনিক ‘মিলকিং’ যন্ত্র। ফলে এসব গাভী থেকে দুধ সংগ্রহ করতে বাড়তি কোনও ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না তাদেরকে। এছাড়াও গো খাদ্যে হিসেবে নিজস্ব ৯ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে নেপিয়ার এবং সুইট লেমন জাতের ঘাস। প্রতিদিন শ্রমিকরা জমি থেকে এসব ঘাস কেটে নিয়ে আসে। এরপর আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সাইজে এসব ঘাস কেটে গরু গুলোকে খাওয়ানো হয়।

‘নেচার ফ্রেশ ডেইরি ফার্ম’ এর মালিক শাহ নেওয়াজের ভাই সাজ্জাদ আহম্মেদ জানান, আশপাশের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি এই গরুর ফার্ম দেখতে আসে। এছাড়াও গরুর ফার্মের নামে খোলা ফেসবুক আইডির ম্যাসেঞ্জারে প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন ব্যক্তি এসব গরু লালন পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি জানতে চেয়ে ম্যাসেজ করে। খামার পরিদর্শনে এসে অনেক লোক দুগ্ধজাত গরুর খামার করার ইচ্ছা পোষণ করেছে। ইতোমধ্যে ৪ থেকে ৫ জন স্থানীয় বেকার যুবক তাদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে বিদেশি জাতের গরু লালন পালন শুরু করেছে।

ঘোড়াঘাট উপজেলা ডেইরি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ‘নেচার ফ্রেশ ডেইরি ফার্ম’ এর মালিক শাহ নেওয়াজ জানান, মাত্র ২ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ২ কোটি টাকার গরু আছে। আমার পুরো প্রকল্পটি প্রায় ৩ কোটি টাকার। শুরু থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল যেন আমার খামারে একশ গরু থাকে। তবে খুব অল্প দিনেই আমি সফল হয়েছি। বিদেশি জাতের এসব গরু লালন পালনে শুরু থেকেই উপজেলা এবং জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় আমাকে সার্বিক সহযোগীতা এবং পরামর্শ প্রদান করে আসছে। তবে গরুর খুরা রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে আমি খুবই ভোগান্তিতে আছি। সরকারি ভাবে এই রোগের ভ্যাকসিন এখন দেওয়া শুরু করেনি সরকার। আবার বিভিন্ন কোম্পানি এই রোগের ভ্যাকসিন বিক্রয় করলেও, তা ঢাকা ছাড়া পাওয়া যায় না। এই ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে ঢাকায় যেতে হয়। দেখা যায় ভ্যাকসিনের মূল্যের চেয়ে যাতায়াতের খরচই বেশি হয়ে যায়।

তিনি অভিযোগ করে আরও জানান, আমাদের উপজেলায় গরুর দুধ সংগ্রহের জন্য সিলিম সেন্টার নেই। ফলে আমিসহ উপজেলার ১১৪টি খামারের মালিককে গরুর দুধ বাজার করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (এলডিডিপি) ডা. রাকিবা খাতুন আরটিভি নিউজকে জানান, আমরা এই উপজেলার সকল খামারীকে নিয়মিত বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছি। পাশাপাশি বিনামূল্যে বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও আমরা খামারীদেরকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যাতে করে তারা দুগ্ধজাত গাভী পালনে বিভিন্ন বিষয় জানতে পারে। শাহ নেওয়াজ একজন সফল খামারী। তবে ঘোড়াঘাটে সিলিম সেন্টার (দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র) না থাকায় গাভীর দুধ বিপণনে খামারীরা কিছুটা সমস্যায় ভূগছেন। সিলিম সেন্টার নির্মানে আমরা উদ্দ্যেগ গ্রহণ করেছি।

ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিউল আলম জানান, ঘোড়াঘাট উপজেলার আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় সিলিম সেন্টার (দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র) আছে। তবে আমাদের ঘোড়াঘাট উপজেলায় সিলিম সেন্টার নেই। সিলিম সেন্টার নির্মানে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তারে চিঠি পাঠিয়েছি। পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও‘র সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করছি।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh