চার ফেরি বিকলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় তীব্র যানজট
ফেরি স্বল্পতার কারণে দৌলতদিয়ায় ও পাটুরিয়া ঘাটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে গেলো ৩-৪ দিন ধরে দৌলতদিয়ায় ঢাকামুখী যানবাহনের লম্বা লাইন পরেছে।
যাত্রীবাহী ও ছোট গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার হলেও পণ্যবাহী পরিবহনকে নদী পাড়ি দিতে দুই থেকে তিন দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছেন এক চালক। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট এলাকায় এরকম চিত্র দেখা যায়।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরির তীব্র সংকট, ফেরির যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নান জটিলতায় উভয় ঘাটে যানজট কাটছে না।
আরও পড়ুন : আমি শিক্ষামন্ত্রীর ষড়যন্ত্র ও রাজনীতির শিকার: ভিসি কলিমুল্লাহ
মানুষের দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো অগ্রাধিকারভাবে পারাপার করায় পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো ঘাটে আটকা পড়ে আছে।
বৃহস্পতিবার দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে ঢাকামুখী বিভিন্ন পণ্যবোঝাই শত শত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান।
আর যানজট কমাতে রাজবাড়ীর পুলিশ প্রশাসন ঘাট থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়-কুষ্টিয়া রোডে আরও ২-৩শ’ পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।
বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট অফিস সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ছয় হাজারের বেশি গাড়ি ফেরি পারাপার হয়।
আরও পড়ুন : আমি শিক্ষামন্ত্রীর ষড়যন্ত্র ও রাজনীতির শিকার: ভিসি কলিমুল্লাহ
কিন্তু এই রুটে নৌপথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রো রো (বড়) ফেরি নেই।
চলাচলকারী ফেরিগুলো অনেক পুরানো। সার্বক্ষণিক সচল রাখতে গিয়ে অনেক ফেরি ঘন ঘন বিকল হয়ে পড়ছে। বর্তমান বহরে থাকা ১০টি রো রো (বড়) ফেরির মধ্যে ভাষা শহীদ বরকত ও কেরামত আলী নামের দুটি ফেরি বিকল হয়ে আছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে ১০টি রো রো (বড়), সাতটি ইউটিলিটি (ছোট), একটি মাঝারিসহ ১৮টি ফেরি চালু রাখা হয়। অনেক দিনের পুরানো ফেরি হওয়ায় অধিকাংশ ফেরির যন্ত্রাংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এ কারণে মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে পড়ছে ফেরি। এতে ফেরির সংখ্যা কমে গিয়ে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্রটি আরও জানায়, এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে ‘কেরামত আলী’ ও ‘ভাষা শহীদ বরকত’ নামের দুটি রো রো ফেরি বিকল হয়ে পড়ে।
‘কেরামত আলী’ ফেরিকে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতীতে রেখে মেরামতের কাজ চলছে।
‘ভাষাশহীদ বরকত’ ফেরিকে মেরামতের জন্য নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। প্রপেলশানের পাখা ভেঙে যাওয়ায় গেলো মঙ্গলবার সকালে রো রো ফেরি ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে’ মধুমতী কারখানায় রাখা হয়েছে।
পরদিন বুধবার সকাল থেকে মাঝারি ফেরি ‘ঢাকা’ যান্ত্রিক ত্রুটিতে বসে আছে। চারটি ফেরি বিকল থাকায় এই নৌপথে ফেরি সংকট বেড়ে যায়।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চালু করায় গেলো ২৭ ফেব্রুয়ারি এই রুট থেকে ‘কপোতী’ ও ‘কেতকী’ নামের দুটি ইউটিলিটি ফেরি সরিয়ে নেওয়া হয়। এ কারণে ফেরিসংকট আরও বেড়ে যায়।বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে সাতটি বড় ও পাঁচটি ছোট ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
ফেরি সংকটের কারণে স্বাভাবিক পারাপার ব্যাহত হওয়ায় উভয় ঘাটে যানজট লেগেই থাকছে।
আরও পড়ুন : নারী কেলেঙ্কারি: জামালপুরের সেই ডিসির বেতন কমে অর্ধেক
মানুষের দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো অগ্রাধিকারভাবে পরাপার করায় পণ্যবাহী গাড়িগুলো ফেরি পারের অপেক্ষায় দিনের পর দিন ঘাটে আটকা পড়ে থাকছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঢাকাগামী তিন কিলোমিটার লম্বা যানবাহনের লাইন।
এর মধ্যে বেশির ভাগ পণ্যবাহী গাড়ি। অনেক গাড়ির চালক ও সহকারী গাড়ির ভেতর বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।
খুলনার সরকারি পণ্যবাহী একটি ট্রাক নিয়ে গেলো সোমবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করেন চালক মোতালেব হোসেন।
তিনি বলেন, মোট তিনটি গাড়ি নিয়ে তারা রওয়ানা করেন। আজ সোমবার রাতে ঘাট থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ আটকে দেয়। দুই দিন থাকার পর আজ ভোরে তাদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু ঘাটের কাছে এসেও আরেকবার লম্বা লাইনে আটকা পড়েন। প্রায় তিন দিন মহাসড়কে অপেক্ষা করতে করতে তার কাছে থাকা টাকাপয়সা প্রায় শেষ।
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি স্বল্পতার কারণে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।এক সপ্তাহ ধরে দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহীসহ বিভিন্ন গাড়ি আটকা পড়ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দৌলতদিয়া প্রান্তে তিন কিলোমিটার লম্বা লাইনে গাড়ি আটকে আছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে চালক ও যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম আরটিভি নিউজকে বলেন, ছোট-বড় মিলে ১৮টি ফেরি চলতো। এর মধ্যে দুটি ছোট ফেরি আরিচা-কাজিরহাট রুটে নিয়ে গেছে। বাকি ১৬টির মধ্যে চারটি বড় ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল হওয়ায় একটি ডকইয়ার্ডে ও বাকি তিনটি ফেরি ভাসমান কারখানা মধুমতীতে রাখা হয়েছে। ফেরি স্বল্পতার কারণে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
আরও পড়ুন : শিক্ষিকাকে বিয়ে করলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা রুবেল
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার আরটিভি নিউজকে বলেন, অধিকাংশ ফেরির যন্ত্রাংশ দুর্বল হয়ে গেছে।এছাড়া দীর্ঘদিন একটানা চলতে গেলেও যন্ত্রাংশে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কেরামত আলী, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও ভাষা শহিদ বরকত ঠিক হয়ে নৌপথে যুক্ত হবে।
ফেরি স্বল্পতা কেটে গেলে যানবাহন পারাপার অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
জেবি
মন্তব্য করুন