• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

উদ্ধার হতে না হতেই লৌহজং নদ দখলের পায়তারা

টাঙ্গাইল ( উত্তর) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ৩০ নভেম্বর ২০২০, ১২:৫৭
Payatara to capture, the Lohajang river, rtv news
ছবি সংগৃহীত

টাঙ্গাইলে লৌহজং নদী উদ্ধার অভিযান শুরুর চার বছর পূর্তি হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে নদটি উদ্ধার অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন। প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদটি উদ্ধারের কথা থাকলেও অভিযান শুরুর চার বছর পূর্তিতে অগ্রগতি বলতে নদীর দুই তীরে প্রায় চার কিলোমিটার অংশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ।

কিছু অংশে নদী খনন ও তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ। তবে এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে নদটি উদ্ধারসহ সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সরেজমিন ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার ঢালান শিবপুর থেকে মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীতে মিলিত হওয়ার পূর্বে লৌহজং নদটি দীর্ঘ প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। টাঙ্গাইল জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে পৌর এলাকার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা এক সময়ের খরস্রোতা লৌহজং নদটি দখলে, দূষণে সরু খালে পরিণত হয়ে যায়।

শুধুমাত্র শহরের অংশে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়েই অসংখ্য ছোট-বড় স্থাপনা ও ভবন নির্মাণ করে বেদখলে নেয়। আর এতেই পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে, নাব্য হারিয়ে নদটি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। মৃতপ্রায় নদটিকে উদ্ধারের জন্য টাঙ্গাইলের সর্বস্তরের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে নদটি উদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি অফিস যৌথভাবে নদীর সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম শুরু করে। একইসঙ্গে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও এই উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পরামর্শ সভা, সেমিনার, প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ, মানববন্ধন, আলোকচিত্র প্রদর্শনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রায় দুই বছর ধরে চলে এই কার্যক্রম। ফলশ্রুতিতে ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে উঠে লৌহজং নদের তীর। এরই মধ্য দিয়ে শুরু হয় নদটির দখল ও দূষণমুক্ত অভিযান।

বেড়াডোমা এলাকার বাসিন্দা ফজলু মিয়া ও রহিজ উদ্দিন বলেন, যেভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছিলো তা অনেকটাই থমকে গেছে। কাজটি পুরোপুরি শেষ করতে না পারলে মানুষের কাছে অভিযানটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।

কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, আমরা আমাদের বাড়ি-ঘর হারিয়ে অসহায় নিঃস্ব হয়েছি। কিন্তু কোনও ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। আশ্রয়ের জন্য কোনও জায়গাও পাইনি।

নদী-খাল-বীল, জলাশয়, বন ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি অধ্যক্ষ এনামুল করিম শহিদ আরটিভি নিউজকে বলেন, আমরা টাঙ্গাইলবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে লৌহজং নদটি উদ্ধারে যে অভিযান শুরু করেছিলাম তা অব্যাহত আছে। এতে পুরো জেলাবাসী উপকৃত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই কাজকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক রতন সিদ্দিকী বলেন, আমরা সম্মিলিতভাবে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের কাছে লৌহজং নদটি উদ্ধারের দাবি জানাই। তিনি আমাদের ডাকে সারা দিয়ে প্রশাসনের সকল দপ্তর, পুলিশ প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নদটি উদ্ধারে নেতৃত্ব দেন। এখনও তিনি নিয়মিত এই কার্যক্রমের খোঁজ-খবর রাখেন। এজন্য আমরা টাঙ্গাইলবাসী তার কাছে কৃতজ্ঞ।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, লৌহজং নদ পুনখননের জন্য প্রায় পৌনে দুইশ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। প্রকল্পটি বর্তমানে প্ল্যানিং কমিশনে রয়েছে।একনেকে পাস হলে নদটি দখল মুক্ত করে পূন:খনন করা সম্ভব হবে।

জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম আজম বলেন, এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ের একজন প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) মাধ্যমে লৌহজং নদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি স্থানীয় পৌরসভার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে স্থানীয় এলজিইডির এখানে কোনও সম্পৃক্ততা নেই।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি বলেন, বর্তমান সরকার ও প্রশাসন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন ও সোচ্চার। যেকোনো ধরনের অবৈধ দখল ও দূষণ রোধে আমরা ব্যাপক তৎপর রয়েছি। লৌহজং নদটি উদ্ধারের যে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, আমি টাঙ্গাইলের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নদটি উদ্ধার অভিযান শুরু করেছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের উৎসাহিত করেছেন। এখন এটা স্বাভাবিক নিয়মেই চলমান থাকবে। গৃহহীনদের আবাসন, ক্ষতিপূরণসহ সকল উন্নয়ন কার্যক্রম স্থানীয় মেয়র, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক দেখভাল করবেন এবং এগিয়ে নিবেন বলেও জানান তিনি।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নওগাঁয় নদী, খাল-বিল দখল ও দূষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন
বাসের ধাক্কায় ফেরিতে থাকা ৪ মোটরসাইকেল নদীতে
ডাকাতিয়া নদীতে নিখোঁজ শিশুর মরদেহ উদ্ধার 
নৌকা থেকে নদীতে পড়ে শিশু নিখোঁজ
X
Fresh