• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভুয়া নবাবের নাতি প্রতারণার ফাঁদ পাতে শ্বশুরবাড়িতেও (ভিডিও)

  ০৯ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৩৯

নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নাতি পরিচয় দেয়া আলী হাসান আসকারী প্রতারণার জাল বিছাতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন চুয়াডাঙ্গায়। নিজেকে প্রভাবশালী দাবী করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকায় তার গ্রেপ্তারের পর প্রতারণার বিষয়টি পরিষ্কার হলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামালা করেন এক ভুক্তভোগীর পরিবার। অভিযুক্ত আসকারী ও তার সহযোগীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

আরটিভি নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, নবাবের নাতি পরিচয় দেয়া আলী হাসান আসকারী তার অফিসের এক কর্মচারীর স্ত্রীকে দেখে লালায়িত হন। জোরপূর্বক তালাক দিতে বাধ্য করান। একাধিক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আনুমানিক ৩ বছর আগে ওই কর্মচারীর স্ত্রী চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সবুজ-পাড়ার হাতেম আলীর মেয়ে মেরিনা আক্তার হেনাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি।
যখনই চুয়াডাঙ্গাস্থ তার শ্বশুরবাড়ি আসতেন তখনই ফুটিয়ে তুলতেন উৎসবের আমেজ। তার সঙ্গে থাকতো বেশ কয়েকটি দামি গাড়ি ও ১০-১২ জন গানম্যান।

স্বাস্থ্য বিভাগ সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের চাকরি দেয়ার নাম করে শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় স্বজন ও এলাকার বেশ কিছু যুবকের কাছ থেকে কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। তার শ্বশুর ছিলেন একজন মুদি দোকানী। কিন্তু মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর দোতালা বাড়ি নির্মাণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে থাকেন তিনি। এছাড়াও শ্যালক জনিরও রয়েছে পোল্ট্রি ফিডের ব্যবসা।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসাকারীর স্ত্রী মেরিনা আক্তার হেনা চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী হয়ে পরিচিতি পান। মুসলিম লীগ মনোনীত হারিকেন মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নামলেও ভোট পেয়েছিলেন মাত্র কয়েকটি।

সম্প্রতি ঢাকায় প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে অনেকেরই ভুল ভাঙে। মাথায় হাত ওঠে চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর গ্রামের সহিদুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলামের। তিনিও প্রতারিত হয়েছেন। রফিকুল ইসলামের বোনকে স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি দেয়ার নাম করে তিন দফায় মোট ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই প্রতারক। চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে পুলিশ দিয়ে হয়রানি ও খুনের হুমকি দেন আসকারী ও তার স্ত্রী হেনা। তার গ্রেপ্তারের পর মুখ খুলছেন তারা।

গেল সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আসকারী, তার স্ত্রী হেনা ও শ্যালক জনিকে আসামি করে একটি মামলা করেন দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর গ্রামের সহিদুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম। পরে কোর্ট রোড থেকে আসকারীর শ্যালক জনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে গাঢাকা দিয়েছে আসকারীর স্ত্রী হেনা।

মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম জানান, নবাবসলিমুল্লাহর নাতি পরিচয় দিয়ে আসকারী চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখায়। গত ২০১৮ সালের ২৩ মে স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি দেয়ার নাম করে তিন দফায় ব্যাংক ও নগদে ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক। তার সঙ্গে প্রতারণায় অংশ নেয় তার দ্বিতীয় স্ত্রী মেরিনা আক্তার হেনা আসকারী ও তার শ্যালক জনি।

মামলার বাদী রফিকুল ইসলামের বোন ভুক্তভোগী লোটাস খাতুন অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রথমে ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা নেন আসকারী। পরে দু’দফায় তার স্ত্রী হেনা ও জনির হাতে আরও ৬ লাখ টাকা দেয়া হয়। চাকরি দিতে না পারায় টাকা ফেরত চাইলে প্রাণনাশের হুমকি দিতেন আসকারী ও তার স্ত্রী।

এদিকে হেনা ও জনির নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন আসকারীর শ্বশুর হাতেম আলী। তিনি বলেন, টাকা লেনদেন হয়েছে তার জামাতা আলী হাসান আসকারীর সঙ্গে। এতে তার মেয়ে হেনা ও ছেলে জনি জড়িত নয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান জানান, ওই মামলায় আসকারীর শ্যালক জনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও মামলাটি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি জনির রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে। আর পলাতক আসামি হেনাকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

জিএম/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh