• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘এই গোশতো আন্না করি স্বামী-ছোল নিয়্যা আত্মা ভরি খামো বাবা’

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০৩ আগস্ট ২০২০, ১২:০৯
Gaibandha
ছবি সংগৃহীত

নুরজাহান বেগম আজ রোববার গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিনের হাত থেকে এক প্যাকেট গোশতো পাওয়ার পর ছল ছল চোখে এক প্রকার আনন্দ অশ্রু ঢেলে তার ভাষায় বললেন, ডিসি স্যার আজ এই গোশতের প্যাকেট দিলে। বাড়িত যায়া আন্না (রান্না) করি ছোলপোলক নিয়্যা আত্মা ভরি খামো বাবা। তিনি আরও বলেন, হামার (আমার) সোয়ামী (স্বামী) শহরোত কাম করে (দিনমজুর)।

করোনার কারণে সরকার কাজ-কাম বন্দ (বন্ধ) করি দেওয়ায় (লকডাউন) পর কাজ কাম না থাকায় স্বামী সন্তান নিয়্যা অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছি (কাটাচ্ছি) বাবা।

শনিবার ঈদের সগলে (সবাই) মিলে দুপুরোত (দুপুর বেলা) ডাল, আলু ভর্তা দিয়্যা ভাত খাছোম (খেয়েছি) বাবা।

নুরজাহান বেগম। স্বামী সন্তান নিয়ে ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত চর কাবিলপুরে বসবাস করেন। বন্যার কারণে কাজকর্ম বন্ধ। মহামারি করোনার সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদী বন্যার কষাঘাতে সব কিছু লণ্ডভণ্ড। স্বামীরও কর্ম না থাকায় রোজগার নেই। গেল সাড়ে চার মাসে ভালো খাবার জোটেনি তাদের পেটে। এমনকি শনিবার কুরবানির ঈদের দিনও হাড়িতে গোশতো (মাংস) তুলতে পারেননি তারা। নুরজাহান বেগমের মতো করিমা বেগম, আয়না বেগম, জরিনা বেগম, আজগর আলী, শাহজাহান মিয়া, আলেফা বেগম, ছালেহা সালহা বেগমেরও একই অবস্থা। ফুলছড়ি উপজেলার ফুডব্যাংক থেকে এক কেজি করে গরুর মাংস পেয়ে আনন্দে আত্মহারা চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাবিলপুর চরের মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ফুলছড়ি ফুডব্যাংকের উদ্যোগে ফুলছড়ি ভলান্টিয়ার্স গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে ৩২৩ পরিবারকে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন, ফুলছড়ি ফুড ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন গতকাল রোববার কাবিলপুর চরে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বানভাসিদের হাতে মাংস পৌঁছে দেন এবং ওই চরের উপস্থিত সকল মানুষের মুখে মাস্ক পরিয়ে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ফুলছড়ি থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাওছার আলী, মেডিকেল অফিসার ইলতুতমিশ পিন্টু, স্থানীয় সমাজ সেবক প্রভাষক গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা, স্থানীয় ইউপি সদস্য সাদেক খান, ফুলছড়ি ভলান্টিয়ার্স গ্রুপের আহ্বায়ক আশিকুর রহমান মুন।

স্থানীয়রা জানান, দফায় দফায় বন্যার ধাক্কায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষগুলোর এখন ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। ফুলছড়ি উপজেলার কাবিলপুর চরের একদিকে শ্রমজীবী মানুষগুলো হয়েছে কর্মহীন। অন্যদিকে প্রান্তিক চাষিদের নেই রোজগার। তার মধ্যে অনেকেই গার্মেন্টসের চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে এলাকায় ফিরেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও তা অপ্রতুল। কাবিলপুর চরের সাড়ে ৫০০ পরিবার পড়েছে দূর্বিপাকে। করোনা আর বন্যার কারণে ঈদ তাদের জন্য আনন্দ বয়ে আনে নাই। কুরবানির ঈদ হলেও তাদের ভাগ্যে গোশত জোটেনি। তাই নিরানন্দেই কাটে তাদের কোরবানির ঈদ। এই চরে কুরবানি দেওয়ার মতো সামর্থ্যবান কেউ নেই বললেই চলে। যারা আছে তারা বন্যা ও নদী ভাঙনের কবলে অনেকটা নিরুপায়।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় গঠিত ফুলছড়ি ফুডব্যাংকের উদ্যোগে ফুলছড়ি ভলান্টিয়ার্সের মাধ্যমে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন ওই চরের পরিবারগুলোকে মাংস পৌঁছে দেয়ার জন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা চান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকে ফুলছড়ি ফুডব্যাংকে সহযোগিতা করেন। বিত্তবানদের সহায়তায় গতকাল রোববার ওই চরের অতি দরিদ্র ৩০০ পরিবারকে দেয়া হলো এক কেজি করে মাংস।

এছাড়া উড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সমাজসেবক প্রভাষক গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঈদের দিন এই চরের পার্শ্ববর্তী রতনপুর চরের শাপলা বাজার এলাকার ১৫০ পরিবারকে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করেন। তিনি বলেন, ঈদের দিন তার আত্মীয়-স্বজনের করা কুরবানির মাংস চেয়ে এনে এবং নিজের করা কুরবানির মাংস থেকে ১৫০ পরিবারকে কুরবানির মাংস পৌঁছে দেন।

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন বলেন, বিত্তবানদের সহায়তায় ফুলছড়ি ফুডব্যাংক থেকে ওই গ্রামের ৩০০ পরিবারে তারা মাংস পৌছাতে পেরেছেন। তিনি আরও বলেন, সমাজের বিত্তবানদের একটু ত্যাগের মধ্য দিয়ে হাজারো অসচ্ছল মানুষের মুখে আনন্দের হাসি ফোটানো সম্ভব। সবাই এগিয়ে এলে ফুড ব্যাংকের মাধ্যমে এসব চরাঞ্চলের মানুষের কল্যাণে আরও অনেক কিছুই করা সম্ভব।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রিকশাচালকের মৃত্যু
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীর গোপনাঙ্গ কাটলেন প্রথম স্ত্রী
বিয়ের আগেই সন্তান জন্ম, স্বামীকে নিয়ে মুখ খুললেন সেই অভিনেত্রী
খাটের ওপর পড়ে ছিল গৃহবধূ, স্বামী ঝুলছিল ওড়নায় 
X
Fresh