• ঢাকা রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
logo

ঝালকাঠিতে গুচ্ছগ্রামের ঘর নির্মাণ ও বিতরণে অনিয়ম

ঝালকাঠি প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৫ জুলাই ২০২০, ১৮:৩৬
Jhalokati
ছবি সংগৃহীত

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের চরপালটে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প ভূমি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গুচ্ছগ্রাম-২ (সিভিআরপি) এর আওতায় গৃহনির্মাণ ও উপকারভোগীর মধ্যে গৃহ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পিআইও অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রাজাপুরের পাঁচ নম্বর বড়ইয়া ইউনিয়নের ৭০ নম্বর চল্লিশ কাহনিয়া মৌজায় এক নম্বর খতিয়ানভুক্ত বিএস ২৪১১ নম্বর দাগে মাটির কাজের নিমিও কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ২৬৫.২৯৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। মাটি ভরাটে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে মাটি ভরাটের কাজ শেষে ওই স্থানে প্রতিটি ঘরের জন্য দেড় লাখ টাকা করে ৭০ টি ঘরে মোট এক কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ কাজেরও দায়িত্ব মৌখিক ভাবে উপজেলা প্রশাসন ওই কমিটিকেই দেয়। ইতোমধ্যে গুচ্ছগ্রামে ৭০টি উপকারভোগীকে থাকার জন্য চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তারা বসবাস শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে অপরিকল্পিতভাবে মাটি ভরাটের কাজ করায় এখন একটু বৃষ্টি হলেই অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও পূর্ণিমার জোয়ার অথবা একটু বন্যা হলেই আশ্রয়কেন্দ্রের ঘরগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে আশ্রয়ণবাসী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

এদিকে উপজেলা প্রশাসন গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে পুনর্বাসনের নিমিত্তে এ উপজেলার প্রকৃত ভূমিহীন ও ছিন্নমূল পরিবারের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করলে ১৬২ জন আবেদনপত্র জমা দেয়। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এদের সবাইকেই ভূমিহীন বলে সনদ দেয়। ১৬২ জনের আবেদনের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে ৭০ জন উপকারভোগীকে নির্বাচন করা হয়। উপকারভোগী ৭০টি পরিবারের মধ্যে বিত্তবানরাও রয়েছে। অর্থের বিনিময় স্থানীয় প্রভাবশালী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের নাম ভাঙিয়ে বৃত্তবানদের নাম তালিকাভুক্ত করেছে। এদের মধ্যে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, অর্থ সম্পদের মালিকরাও রয়েছে। এদের অনেকের বাড়িতে সিঁড়ি বাঁধানো নিচ পাকা বড় ঘর, আধাপাকা ভবনও রয়েছে।

এছাড়াও আগে সরকারি জমির বরাদ্ধ পেয়েছে এমন ব্যক্তিও এখানে ঘর প্রাপ্ত হয়েছে। অপরদিকে নির্বাচিত ৭০টি উপকারভোগী পরিবারের তালিকায় নাম থাকলেও প্রভাবশালী মহলকে টাকা দিতে না পারায় তালিকা থেকে তাদের নামে বরাদ্দ ঘরখানা টাকার বিনিময়ে অন্য লোককে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই গ্রামের লাকি বেগম, মনির হোসেন, হেলাল হাওলাদার। যারা ঘরের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে তাদের মধ্যে স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী, জেলে, নদী ভাঙ্গা অসহায় পরিবারও রয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম মন্টু বলেছেন, ঘরের চাবি হস্তান্তর হয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে গৃহনির্মাণ কমিটিতে আইনিভাবে ইউপি চেয়ারম্যান সভাপতি হওয়ার কথা থাকলেও যে কমিটি হয়েছে তাতে একজন ইউপি সদস্য মো. আহসান কবিরকে সভাপতি করা হয়েছে।

ওই কমিটির সদস্য ও ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম জানান, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে পুনর্বাসনের কাজ শুরু থেকে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। কারণ আমি তাদের অনিয়মের প্রতিবাদ করতে পারি তাই। প্রভাবশালী বা দালাল চক্র অর্থ আদায় করে বিত্তবান যাদের ঘর জমি আছে তাদেরকে ঘর বরাদ্ধ দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাদিক ব্যক্তির কাছ থেকে জানা গেছে, গুচ্ছগ্রামের ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে ঘর হস্তান্তর করার কথা থাকলেও কাজ অসমাপ্ত রেখেই ৭০টি উপকারভোগী পরিবারকে চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে প্রতিটি পরিবারকে তাদের ঘরের বাকি কাজ গুলো নিজ খরচে সমাপ্ত করতে চাপ প্রয়োগ করছে। কিন্তু ভয়ে প্রভাবশালীদের নাম প্রকাশ করতে পারছে না উপকারভোগীরা। এ কারণে অনেকেই কিস্তিতে, মোটা অংকের সুধে টাকা সংগ্রহ করে নিজ নিজ ঘরের কাজ সমাপ্ত করছে। আবার অনেকে ঋণ না পেয়ে বেড়াবিহীর ঘরে পুরাতন টিন অথবা পলিথি টাঙ্গিয়ে ঠাঁই নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানায় গুচ্ছগ্রামে ঘর পেতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলকে তারা ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নগদ ক্যাশ দিয়ে ঘর পেলেও এখন ঘরের বাকি কাজগুলো নিজ খরচে সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এ কথা বলার পরে তারা কেঁদে কেঁদে জানায় এ কথা গুলো স্থানীয় ওই প্রভাবশালী মহলটি জানতে পারলে তাদের ওপর বড় রকমের বিপদ আসতে পারে। ইতোমধ্যে ঘর দেয়ার কথা বলে নগদ টাকা দিতে না পারায় কৌশলে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত এক মহিলা ইউপি সদস্যকে জরিমানা করেছে।

স্বামী পরিত্যক্তা প্রতিবন্ধী বিউটি বেগমের মেয়ে রেখা জানায়, আমার মা প্রতিবন্ধী। আমার বাবা ছোট বেলায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আমার নানী ভিক্ষা করে আমাদের খাওয়ায় এবং লেখা-পড়া করায়। গুচ্ছগ্রামে ঘর পাওয়ার জন্য আমার মা আবেদন করেছিল। ইউএনও স্যার যাচাই-বাছাই করে আমার মায়ের নামে একটি ঘর বরাদ্দ দেয়। কিন্তু কি কারণে আমার মায়ের নাম তালিকা থেকে বাদ পরেছে সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখার জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আল মামুন-অর রশিদের কাছে অর্থ আদায়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি সারাসরি জানান, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, রাজাপুর উপজেলার পাঁচ নম্বর বড়ইয়া ইউনিয়নের চরপালট গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে আমরা ইউনিয়ন পরিষদে প্রকাশ্যে বাছাইয়ের মাধ্যমে ৭০ জন উপকারভোগী নির্বাচন করেছি। বাছাইতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিারা উপস্থিত ছিলেন। প্রকাশ্য বাছাইয়ের সময় সকল শ্রেণির মানুষের কাছে জিজ্ঞাসার মাধ্যমে উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়েছে। এর পরেও আমরা বিভিন্ন কথা শুনতেছি যে এলাকার লোকজন ঘর দেয়ার কথা বলে টাকা-পয়সা নিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পাইনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাটি ভরাট বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য আহসান কবির দাবি করে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ঘরগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এই ভয়ে দ্রুত উপকারভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের ঘরে রেখেই বাকি কাজগুলো চলমান। বিষখালী নদী দিয়ে বালু উত্তোলন করে গুচ্ছগ্রামের জায়গা ভরাট করা হয়েছে। আম্পানে অনেক বালুমাটি ধুয়ে গেছে। আমরা কোনও অনিয়ম করিনি। তবে কিছু স্বচ্ছল ব্যক্তি ঘর পেয়েছেন।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে
বরিশালে বাস-মাহিন্দ্রা শ্রমিকদের সংঘর্ষ, আহত ৩
গৌরনদীতে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৩
লঞ্চে উঠতে গিয়ে নদীতে পড়ে নারী নিখোঁজ
X
Fresh