• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মধ্যরাতে চেকপোস্টে পুলিশ ও তরুণীর তর্ক-বিতর্কের ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:০০

মধ্যরাতে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে তল্লাশির নামে তরুণীর সঙ্গে পুলিশের অশোভন তর্ক-বিতর্কের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি করার পর পুলিশ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। এই কাজটিকে সম্পূর্ণ আইনবিরোধী বলেছে মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী এলিনা খান।

তিনি বলেন, ‘পুলিশ যদি কোনও মেয়েকে তল্লাশি করতে চায় অবশ্যই তার সঙ্গে নারী পুলিশ থাকতে হবে। যদি সেটা না থাকে তাহলে আশেপাশে কোনও নারী থাকলে তার সাহায্যে তাকে তল্লাশি করতে পারে। তাছাড়া কোনওভাবেই একজন মেয়েকে এইভাবে তল্লাশি করতে পারে না। এটা আইনি পরিপন্থী।’

‘পুলিশ যদি নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের তল্লাশি করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাদের শোভন আচরণের মধ্যে থেকে করতে হবে। ভিডিওটিতে যে মেয়েটির সাথে অশোভন আচরণ করা হয়েছে, এর জন্য মেয়েটি আইনের আশ্রয় নিতে পারে। আইনের লোককে আইনের আওতায় আনতে আমরা ভয় পাই। এতে তারা আপরাধ করতে প্রশ্রয় পায়।’

ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তরুণীকে ইচ্ছা করে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা। আর তাকে নানা আপত্তিকর কথাও বলতে শোনা যায়।

ভিডিওটির মধ্যে একবার পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, রাত আড়াইটার দিকে কোনও ভদ্র ঘরের মেয়ে রাস্তায় থাকে না। পুলিশ সদস্যরা ওই মেয়েটিকে বারবার ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করছেন, এত রাতে তিনি কেন বের হয়েছেন, কোথা থেকে এসেছেন, আর কোথায় যাবেন। পুলিশ সদস্যদের বক্তব্যের ভঙ্গিও ছিল আক্রমণাত্মক ও আপত্তিকর। আর এতেই ক্ষেপে যান ওই নারী।

-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : এতিম শিশুকে এ কেমন নির্যাতন?
-------------------------------------------------------

তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে মেয়েটিকে অভদ্র, বেয়াদব ইত্যাদি নানা কথা বলার পাশাপাশি একজন পুলিশ সদস্য এমনও বলেছেন, ‘মনে হয় আপনি বিশ্বসুন্দরী’, ‘আমি কি আপনার সাথে টাংকি মারছি?’।

রাজধানীতে পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে ভিডিওটি করা হয়। তবে সেটি কোথায় করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ভিডিওটিতে মেয়েটি জিজ্ঞাসা করে আপনারা কোন থানার পুলিশ? খিলক্ষেত না উত্তরা। এটি থেকে ধারণা করা হয় চেকপোস্টটি উত্তরা বা খিলক্ষেতের আশেপাশের এলাকার হবে। আর ভিডিওতে পুলিশ সদস্যদের চেহারাও দেখা যায়নি। তবে মেয়েটির মুখে আলো ফেলে তার পুরো চেহারা দেখানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ।

মুখে আলো ফেলে ভিডিও করায় আপত্তি করে ওই তরুণী বারবার বলছিলেন, তার ব্যাগ তল্লাশি করুক কিন্তু এই কাজ পুলিশ করতে পারে না। ফেসবুকে ভিডিওটি প্রচার করে এটি পুলিশের দায়িত্ব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বহু মানুষ। এভাবে একজন মানুষের সম্মানহানি করায় পুলিশ সদস্যদের শাস্তিও দাবি করেন তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের সংশ্লিষ্ট থানা ও সাইবার ক্রাইম বিভাগে জানানো হয়েছে। এটা আইনবিরুদ্ধ কাজ। আমরা সংশ্লিষ্ট পুলিশদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।

ভিডিওটিতে মেয়েটি বার বার ভিডিওটি করতে আপত্তি করলেও পুলিশ সদস্যরা ভিডিও চালিয়ে যায়। পুলিশ তার ব্যাগ তল্লাশি করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশ ব্যাগ তল্লাশি করে না। কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডা করে মেয়েটিকে ছেড়ে দেয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন- ‘‘পুলিশের চেকপোস্টে গভীর রাতে একজন ভদ্র মহিলার সাথে কিছু পুলিশ সদস্যদের ভিডিওসহ কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে একটি পেশাদারী সেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বিষয়টি নিয়ে অবগত। এ নিয়ে অনলাইনে ঘৃণাবোধ না ছড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। নিরপেক্ষ ও সঠিক অনুসন্ধান সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আস্থা রাখুন!!’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভিডিওটিতে পুলিশ তার পেশাগত দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে মেয়েটির সাথে অশোভন আচরণ করেছে। পুলিশ যদি তার ব্যাগ বা বডিও চেক করতে চায়, সে ক্ষেত্রে তার সাথে নারী পুলিশ থাকতে হবে। পুলিশ কোনোভাবেই তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করতে পারে না। ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, পুলিশ ওই মহিলার সঙ্গে যে অশোভন আচরণ করেছে, এটার শুরু করেছে পুলিশ। মেয়েটিও কোনও কোনও ক্ষেত্রে অশোভন আচরণ করেছে।’

‘ভিডিওটিতে পুলিশ তার পেশাদারী আচরণ থেকে সরে গেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে যে কোনও পুলিশ তল্লাশি করতে চাইলে তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে করতে হবে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে মধ্যরাতে পুলিশ একা একটা মেয়েকে পেয়ে কিছুটা মজা নিয়েছে। তারা মেয়েটির সাথে সময়টা উপভোগ করেছে।’

‘ভিডিওটি দেখে মনে হয়েছে এখানে পুলিশ নিরাপত্তার কাজের থেকে অতিরিক্ত কথা বলেছে বেশি যেটা পুলিশের কাছ থেকে সাধারণ জনগণ প্রত্যাশা করে না। পুলিশ যদি নিরাপত্তার খাতিরে কোনও ভিডিও করেই থাকে, তাহলে সেটা এইভাবে ফেসবুকে দিতে পারে না। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। পুলিশ সেটা আইনি কাজে সংরক্ষণ করে রাখবে।’

আরও পড়ুন :

আরসি/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় চলাচল বন্ধ
মধ্যরাতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের যে বার্তা পাঠাল হিযবুত তাহরীর
মধ্যরাতে ঢাকায় ঝড়, শিলাবৃষ্টি
মধ্যরাত থেকে ইজতেমার আশপাশে গণপরিবহন বন্ধ
X
Fresh