৫৮ জেলায় কেউ গৃহ ও ভূমিহীন থাকছে না
![](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/06/10/image-277699-1718014833.jpg)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার– ‘এ দেশে কেউ ভূমি-গৃহহীন থাকবে না।’ সেই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় দেশের ৫৮টি জেলা ভূমি-গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে মঙ্গলবার (১০ জুন)।
প্রধানমন্ত্রী এদিন লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ, কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও এবং ভোলা জেলার চর ফ্যাশনে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর হস্তান্তর করবেন। সেই হিসেবে আগে ঘোষিত জেলা-উপজেলাসহ মোট ৫৮টি জেলা ও ৪৬৪টি উপজেলা ভূমি-গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য শেখ হাসিনা সরকার গত ১৫ বছরে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ভূমি-গৃহহীন মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়ে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে সারাবিশ্বে প্রশংসিত দারিদ্র্য বিমোচনে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে ‘শেখ হাসিনা মডেল।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমান লক্ষীপুর) জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে ভূমি-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী। আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে ঘর দেওয়ায় এখন পর্যন্ত ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ভূমি-গৃহহীন মানুষ পুনর্বাসিত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়েছেন ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জন মানুষ।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ৫ম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে মঙ্গলবার (১১ জুন) সারাদেশে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম। আগামীকাল ঘর ও জমি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে আরও ২৬টি জেলা ও ৭০টি উপজেলা। এর আগে ছয় দফায় ৩২টি জেলার সব উপজেলাসহ ৩৯৪টি উপজেলাকে ভূমি-গৃহহীন মুক্ত করা হচ্ছে। নতুন করে ভূমি-গৃহহীন মুক্ত জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোণা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ।
আশ্রয়ণ প্রকল্প সুত্রে জানা যায়, শুধু মুজিববর্ষের বিশেষ কর্মসূচির দ্বারা পুনর্বাসিত হয়েছে ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৬০ জন ছিন্নমূল মানুষ। এদেরকে বরাদ্দ দেওয়া ঘরের সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি। এসব ঘর ও জমি বরাদ্দ দিতে গিয়ে উদ্ধার করতে হয়েছে ৬ হাজার ৯৪৫ একর সরকারি খাস জমি, যার বাজার মুল্য ৩ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া জমি কিনেও অসহায় মানুষকে পুনর্বাসন করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৩৭১ দশমিক ১০ একর জমি কেনা হয়েছে, এসব জমি কিনতে খরচ হয়েছে ২৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। কেনা জমিতে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসিত ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৪৫টি। এছাড়া জরাজীর্ণ ব্যারাক প্রতিস্থাপন করে একক ঘর নির্মাণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৮১১টি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকান্ডের পর জাতির পিতা কর্তৃক গৃহীত জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো স্থবির হয়ে পড়ে। ভূমি-গৃহহীন ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সংগ্রাম ও আন্দোলনের পথ পেরিয়ে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো পুনরায় চালু করেন। ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন পরিদর্শন করেন এবং ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেন। তাঁর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতার দান করা জমিতে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় ও নদী ভাঙ্গন কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এই বছরের জুন পর্যন্ত ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসন করা হয়েছে।
এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক নির্মাণের কাজ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে এবং ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ ও দুই কক্ষ বিশিষ্ট একক ঘর নির্মাণকাজটি উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয় যাদের জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এমন পরিবারকেও ঘর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৩টি। এছাড়া জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের জন্য কক্সবাজারের খুরুশকূলে নির্মিত বহুতল ভবনে বিনামূল্যে ৬৪০টি ফ্ল্যাট, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের জন্য বিশেষ ডিজাইনের ঘর ৬০০টিনদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ১০০টি পরিবারকে ঘর এবং ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার পরিবারকে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু ঘর উপহার দেননি। তাদের জীবনমান উন্নয়নে দেওয়া হয়েছে পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও ঋণ। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর খামার এবং দেওয়া হয়েছে সেলাই মেশিনের কাজ। এ ছাড়া হাঁস-মুরগি, কবুতর পালন ও শাকসবজি উৎপাদনসহ কৃষি কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শুধু গৃহ-ভূমিহীন নয়, সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকেও দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। এর মধ্যে মান্তা, বেদে ও হিজড়া সম্প্রদায়, কুষ্ঠ রোগীদের জন্য রংপুরে বান্দাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প, তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের জন্য বিশেষ নকশার ঘর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় কয়লা খনির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (রাখাইন) পরিবারের জন্য বিশেষ নকশার টং ঘর নির্মাণ, ভিক্ষুক পুনর্বাসন, হরিজন সম্প্রদায়, বাগদী সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী পরিবার, জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে।
আগামীকাল ভূমি-গৃহহীন মুক্ত হচ্ছে ঢাকা জেলা। এই প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ, দোহার, সাভার ও কেরাণীগঞ্জ উপজেলায় কোনো ভূমিহীন পরিবার না পাওয়ায় ইতোমধ্যে ভূমি-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ধামরাই উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবনা অনুযায়ী শিগগিরই ধামরাই উপজেলাকে ভূমি-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে সৃজনশীল কর্মের মেধাস্বত্বের স্বত্বাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘আশ্রয়ণ : অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’-কে সৃজনশীল মেধাকর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প বিশ্বের মধ্যে একটি অনন্য প্রকল্প। কারণ, পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত বিপুলসংখ্যক ভূমি-গৃহহীন পরিবারের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ঘর বিতরণ করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার শুধু খাসজমিতে প্রকল্পের জন্য ঘর নির্মাণ করছে না, এর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছ থেকে জমি কেনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও অনুদান পাওয়া যাচ্ছে।’
মন্তব্য করুন
‘শরীফার গল্প’ বাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
![‘শরীফার গল্প’ বাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/06/28/image-280306-1719583836.jpg)
দেশে ব্রাহমা প্রজাতির গরু যে কারণে নিষিদ্ধ
![দেশে ব্রাহমা প্রজাতির গরু যে কারণে নিষিদ্ধ](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/01/image-280773-1719854167.jpg)
মডেল মসজিদ নির্মাণে প্রকৌশলীর কুকীর্তি প্রকাশ্যে আনলেন স্ত্রী
![মডেল মসজিদ নির্মাণে প্রকৌশলীর কুকীর্তি প্রকাশ্যে আনলেন স্ত্রী](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/03/image-281000-1720004425.jpg)
কোটা নিয়ে এত কীসের আন্দোলন: প্রধান বিচারপতি
![কোটা নিয়ে এত কীসের আন্দোলন: প্রধান বিচারপতি](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/04/image-281103-1720080523.jpg)
এবার কোকা-কোলাকে লিগ্যাল নোটিশ, ১ লাখ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি
![এবার কোকা-কোলাকে লিগ্যাল নোটিশ, ১ লাখ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/07/image-281643-1720371734.jpg)
পিএসসির প্রশ্নফাঁস: গাড়িচালক আবেদ আলীকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস
![পিএসসির প্রশ্নফাঁস: গাড়িচালক আবেদ আলীকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/08/image-281781-1720449202.jpg)
‘আমার অফিসের ড্রাইভার যদি কামায় কোটি কোটি, আমি তো বিলিয়ন বিলিয়ন’
![‘আমার অফিসের ড্রাইভার যদি কামায় কোটি কোটি, আমি তো বিলিয়ন বিলিয়ন’](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/09/image-281803-1720463352.jpg)