• ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
logo

স্বজনদের অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না

আরটিভি নিউজ

  ১৪ মে ২০২৪, ১২:৩১
ফাইল ছবি

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর সেই ২৩ নাবিক আজ বাড়ি ফিরবেন। জিম্মি ঘটনার ৬৩ দিন পর আজ অবশেষে তাদের সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। নাবিকদের বরণ করে নিতে তাদের স্বজনরা অপেক্ষায় আছেন। তাদের যেন আর অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না।

সোমালিয়ার দস্যুদের থেকে মুক্ত হওয়া ছেলে আইনুল হক অভির মা লুৎফা আরা বেগমের যেন আর অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। কখন ছেলে বাসায় আসবে, কখন বুকে জড়িয়ে ধরবেন, সেই সময় গুনছেন তিনি। দস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাস পর আজ সন্তানের সঙ্গে দেখা হবে মায়ের।

লুৎফা আরা বেগম বলেন, ছেলেকে কখন বুকে জুড়িয়ে নেব, সেই অপেক্ষায় আছি। তাকে ফিরে পাচ্ছি, এটিই সবচেয়ে বড় পাওয়া। ছেলের প্রিয় খাবার শুঁটকি ভর্তা ও চিংড়ি মাছ রান্না করব।

একমাস আগেও চট্টগ্রাম নগরের আসকারদীঘির বাসায় লুৎফা আরা বেগমের দিন কেটেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে কেএসআরএম গ্রুপের এই জাহাজ জিম্মি করার পর তার উদ্বেগ শুরু হয়েছিল। জিম্মিদশা শুরু হওয়ার পর তখন মায়ের অপেক্ষা ছিল কখন ফোন আসবে ছেলের। আইনুল হক দস্যুদের ফাঁকি দিয়ে সপ্তাহে এক-দুবার মায়ের সঙ্গে কথা বলতেন। দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করতেন।

জিম্মিদশা থেকে নাবিকেরা মুক্তি পাওয়ার প্রায় এক মাস পার হতে চলেছে। এখন প্রতিদিনই হোয়াটসঅ্যাপে সন্তানের সঙ্গে কথা হয় মায়ের। তবু মায়ের মন মানে না। লুৎফা আরা বেগম বলেন, কখন দেখা হবে ছেলের সঙ্গে; অপেক্ষা যেন শেষ হতে চাইছে না।

আরেক নাবিক নুর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের খুশির শেষ নেই। জান্নাতুল ফেরদৌস থাকেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায়। তিনি বলেন, আড়াই বছরের সন্তান সাদ বিন নুরকে নিয়ে মঙ্গলবার বন্দর জেটিতে যাব। অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছে না। তবে এবারের অপেক্ষা আনন্দের, খুশির।

এদিকে আরএক নাবিক আতিকুল্লাহ খানের স্ত্রী মিনা আজমিন বলেন, ঈদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু এবারের ঈদ বিষাদময় ছিল আমাদের কাছে। স্বামী জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকলে ঈদের আনন্দ তো আর থাকে না মনে। আমাদের ঘরে ঈদ হবে আজ । আমরা তাই সেমাই রেঁধেছি। নতুন কাপড় পড়বো। রেঁধেছি গরুর গোশতের কালো ভুনা। পুঁটি মাছের ফ্রাইও করেছি। এসব খুব পছন্দ করে আতিকুল্লাহ।

স্বামীকে বরণে নিজের সাজানো পরিকল্পনার কথা এভাবেই গড় গড় করে বলছিলেন তিনি।

অন্যরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জাহাজের আরেক নাবিক সাজ্জাদের পরিবার। নিকটাত্মীয় নুপুরের সঙ্গে আকদ অনুষ্ঠান করেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে উঠেছিল সাজ্জাদ। কথা ছিল দুবাই থেকে জাহাজে ফেরার পর হবে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ায় সব ছক এলোমেলো হয়ে যায় সাজ্জাদ ও নুপুরের। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কাটতে থাকে তাদের দিন। সব উৎকণ্ঠার অবসান হচ্ছে আজ। সাজ্জাদ ঘরে ফিরবে। আর সে ফিরলেই বাজবে বিয়ের সানাই। এরই মধ্যে বিয়ের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রেখেছে দুই পরিবারের স্বজনরা। এখন দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেই শুভ অনুষ্ঠানটা শেষ করতে চায় তারা।

সাজ্জাদের মা শামসাদ বেগম বলেন, শুনেছি মঙ্গলবার ঘরে ফিরবে সাজ্জাদ। অনেকদিন পর আমার ছেলে আমাদের বুকে ফিরবে; তাতেই শুকরিয়া আমার আর কিছু দরকার নাই। সে খবর শুনে আমার মনটা শান্ত হয়ে গেল। এবার বাড়ি ফিরলেই জমকালো আয়োজনে ছেলের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলবো।

সাজ্জাদের বড় ভাই মোস্তাক হোসেন বলেন, সাজ্জাদকে রিসিভ করতে আমরা সপরিবারে শহর থেকে আনতে যাবো। অনেকদিনের অপেক্ষার পর ভাই আমাদের মাঝে ফিরবে এতে পরিবারের সবাই অনেক খুশি।

জাহাজের অয়েল কর্মকর্তা শামসুদ্দিন শিমুলের স্ত্রী ফারজানা সুলতানা বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তার বাড়ি ফেরার কথা শুনে সবাই খুবই আনন্দিত। ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে বাড়িতে। সাগরে জলদস্যুরদের হাতে জিম্মিদশার দীর্ঘদিনের কঠিন মুহূর্তের পর তিনি আমাদের মাঝে ফিরবেন এটা ভাবতেও আমাদের খুব আনন্দ অনুভব হচ্ছে। এই আনন্দ দিনের সময়টুকু জীবনে মধ্যে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ আয়োজনের চিন্তাভাবনা আছে আমাদের।

সোমালিয়া জলদস্যুর হাত থেকে মুক্ত হয়ে ফেরা জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ কুতুবদিয়ায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যা ৬টায় কুতুবদিয়ায় পৌঁছে জাহাজটি। রাত সাড়ে ১১টায় লাইটার জাহাজে করে চট্টগ্রাম থেকে আসা জাহাজ কর্তৃপক্ষকে এমভি আব্দুল্লাহর দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে ২৩ নাবিক।


মন্তব্য করুন

  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ভিসার অপেক্ষায় দিন গুনছেন সাইফউদ্দিন ও রিশাদ
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা 
সবার মতো আমিও মু্ক্তির অপেক্ষায় রয়েছি:  চঞ্চল চৌধুরী
শেষের অপেক্ষায় বিশ্ব ফুটবলে ডি মারিয়া অধ্যায়