• ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কেএনএফকে অস্ত্র ছাড়ার আহ্বান

আরটিভি নিউজ

  ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:৩২
কেএনএফ
সংগৃহীত

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের ওপর চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান। একের পর এক সন্ত্রাসীরা আটক হচ্ছে। সঙ্গে উদ্ধার করা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র।

এরই মধ্যে তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেঙ্গে দিয়ে অস্ত্র সমর্পনে আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। রোববার (৭ এপ্রিল) দুপুরে কমিটির আহ্বায়ক, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, কমিটির সদস্যসচিব লালজার লম বম স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে তারা কেএনএফ এর সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বলেছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, কেএনএফের দাবি অনুযায়ী বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সমন্বয়ে এ পর্যন্ত বম জনগোষ্ঠীর জন্য রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার ৯৬৮টি বম পরিবারের মধ্যে ১৩৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য, নগদ অর্থ, শীতবস্ত্র, চিকিৎসা সহায়তাসহ তাদের কারান্তরীণ দুজন সদস্যকে জামিনে মুক্তি লাভে সহায়তা করা হয়।

অবশিষ্ট কারান্তরীণ সদস্যদের মুক্তির বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত বম জনগোষ্ঠীদের সহায়তায় খাদ্যশস্য এরইমধ্যে এলাকায় পৌঁছানো হয়েছে। তাদের দাবিগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানানো হয়েছে। তারপরও রুমায় অতর্কিতভাবে সশস্ত্র অবস্থায় বর্বরোচিত হামলা, সরকারি কর্মকর্তা ও পথচারীদের জিম্মি করে হামলা, অর্থ লুটের উদ্দেশে সোনালী ব্যাংকে হামলা, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট করে নেওয়া এবং থানচিতে স্থানীয়দের জিম্মি করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ ও দুটি ব্যাংক লুটের মতো জঘন্যতম ঘটনায় জাতি স্তম্ভিত ও মর্মাহত হয়েছে।

এসব ঘটনা সমঝোতা চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘন উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অপহরণের শিকার ব্যাংক কর্মকর্তাকে উদ্ধার করা গেলেও পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর লুট হওয়া ১৪টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ও এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন বিবৃতিদাতারা।

এদিকে, দেশের পার্বত্য অঞ্চলের ত্রাস হয়ে ওঠা গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে নেমেছে প্রতিরক্ষা বাহিনী; শনিবার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রুমা সফরে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সেখানে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ধারণা হচ্ছে যে কেএনএফের সন্ত্রাসীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থ সংগ্রহ করা। তাদের দমনে যা যা করা দরকার তার সবই করবে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী।

তবে এবার কেএনএফই নিজেদের সাম্প্রতিক তৎপরতার কারণ স্পষ্ট করেছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে অর্থ নয়, বরং পার্বত্য অঞ্চল দখলই মূল উদ্দেশ্য তাদের। শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে পাহাড়ের শান্তির জন্য হুমকি হয়ে ওঠা সংগঠনটি। রাত ১২টার কাছাকাছি সময়ে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে সামনে এসেছে এমনই দাবি সংবলিত একটি পোস্ট।

দেশের বিজ্ঞ মহল, বিশ্লেষক ও সাংবাদিকগণের জ্ঞাতার্থে এবং টকশোর আলোচনায় বিশেষ সুবিধার্থে পোস্টটি করা হয়েছে দাবি করে তাতে বলা হয়, আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে নয়টি উপজেলা নিয়ে নিজেদের পৃথক রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে এলেও এখন সাতটি উপজেলা নিয়ে ‘স্বশাসিত পরিষদ’ চায় কেএনএফ, যার নাম হবে ‘কুকি-চিন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল’ (কেটিসি)।

ছয় দফা দাবি সংবলিত পোস্টটিতে বলা হয়, দাবিকৃত অঞ্চলে শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেখানকার ভূমি ও পর্যটন বিষয়ক সংক্রান্ত সব কর্মকাণ্ডের সর্বময় ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে কেটিসিকে দিতে হবে সরকারের। এছাড়া দাবি অনুযায়ী, কেটিসি’র অঞ্চলে পুলিশ বাহিনীর নিয়োগ প্রদানসহ সব ক্ষমতা কেএনএফেরই থাকবে।

কেএনএফের অতীতের সব হামলা ও অন্যান্য আইন লঙ্ঘনকারী কর্মকাণ্ডকে আন্দোলন দাবি করে আরেকটি দফায় এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

পরবর্তী দফায় দাবি করা হয়েছে, যেন বিভিন্ন সময়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল তথা ভারতের মিজোরামে পালিয়ে যাওয়া বম জনগোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের পালেতুয়া এলাকায় পালিয়ে যাওয়া খুমি ও ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজনকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসনের সুযোগ ও সুব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

আর পোস্টের সবশেষ দফায় নিজেদের সশস্ত্র বাহিনী গঠনের সুযোগ দাবি করা হয়েছে কেএনএফের পক্ষ থেকে, যার নাম হবে কুকি-চিন আর্মড ব্যাটেলিয়ন (কেএবি)।

ফেসবুক পোস্টটি থেকে জানা যায়, বান্দরবানে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী এ সশস্ত্র সংগঠনটির সঙ্গে দুই দফায় মুখোমুখি সংলাপ হয় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির।

ঈদের পর এপ্রিলের মাঝামাঝি আরেক দফায় উভয়পক্ষের সংলাপে বসার কথা থাকলেও হঠাৎ গত মঙ্গলবার বান্দরবানের রুমায় ও বুধবার থানচিতে দফায় দফায় সশস্ত্র হামলা চালায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। তিন ব্যাংকে লুটপাট চালানোর পর অপহরণ করে নিয়ে যায় সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজারকে। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় র‍্যাবের মধ্যস্থতায় রুমা বাজারে নেজাম উদ্দিন নামে ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিলেও ওইদিনই রাতে দুই দফায় থানচি ও আলীকদমে সংগঠনটির পৃথক দুটি গ্রুপ চড়াও হয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যদের ওপর।

এ পর্যন্ত কেএনএফের আকস্মিক এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পেছনে তাদের অর্থাভাবের বিষয়টিকেই মূল কারণ হিসেবে ধারণা করা হলেও নিজেদের ফেসবুক পেইজ থেকে শেষ পর্যন্ত ভিন্ন ইঙ্গিত দিলো পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীটি।

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
কেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রী লাপাত্তা
কেএনএফের আরও ৩ নারী সহযোগী গ্রেপ্তার
সেনা অভিযানে কেএনএফের ৮ সদস্য আটক, অস্ত্র উদ্ধার 
কেএনএফকে নির্মূল করা হবে : বিজিবি মহাপরিচালক
X
Fresh