• ঢাকা রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভেজাল ওষুধ বিক্রির চেয়ে মাদকের কারবার ভালো : ভোক্তা অধিকার

আরটিভি নিউজ

  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:৪৩
ভেজাল ওষুধ
ফাইল ছবি

মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছে দেশের একটি অসাধু চক্র। ভেজাল পণ্যের রমরমা কারবার থেকে বাদ যাচ্ছে না স্বাস্থ্য সেবার উপকরণও। নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ, ভুয়া চিকিৎসা সরঞ্জাম বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে ভরে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসি ও দোকানে।

এমন সব নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ বিক্রিকে মানুষ হত্যার মতো অপরাধ উল্লেখ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ভেজাল ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বিক্রির চেয়ে মাদকের কারবার ভালো।

একইসঙ্গে হুশিয়ারী দিয়ে তিনি বলেছেন, যারা নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ বিক্রি করছেন, তাদের লাইসেন্স অচিরেই বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

এদেশে ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছেই। আক্রান্ত রোগীদের জন্য সবচেয়ে জরুরি নিয়মিত ডায়াবেটিসের মাত্রা পরীক্ষা করানো। ভোগান্তি এড়াতে অনেকে বিভিন্ন কোম্পানির ‘কুইক স্ট্রিপ’ কিনে ঘরে বসেই ডায়াবেটিসের মাত্রা পরীক্ষা করেন। এর ওপর ভরসা করেই চিকিৎসা, খাদ্যগ্রহণসহ দৈনন্দিন জীবনযাপন করেন।

অথচ প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির নকল হচ্ছে দেদার। নকল ডায়াবেটিকস স্ট্রিপসে সয়লাব বাজার। ফলে হাসপাতাল-ক্লিনিকে হরহামেশাই ডায়াবেটিকসের মাত্রা পরীক্ষার ভুলভাল রিপোর্ট নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে রোগীরা। এমন ঘটনা ৬ ফেব্রুয়ারি হাতেনাতে ধরেন ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

যে স্ট্রিপগুলো বাজারে সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার মধ্যে অন্যতম ‘আকু-চেক অ্যাকটিভ স্ট্রিপ’। অথচ এ স্ট্রিপটি চোরাইপথে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। এরপর রাজধানীর নয়াপল্টন, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন এলাকার প্রেস থেকে ব্যাচ নম্বর, বার কোডসহ মোড়ক তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে সেগুলো।

আবার, বিদেশ থেকে অনুমোদন ছাড়া ডায়াবেটিস স্ট্রিপ দেশে এনে বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির নকল মোড়কে বাজারে ছাড়ছে ফার্মা সল্যুশনস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটির পাশাপাশি অন্যরাও এমন কাজ করছে কি না, তার অনুসন্ধান চলছে।

এরই ধারাবাহিকতায় নকল ডায়াবেটিকস স্ট্রিপ বিক্রয় প্রতিরোধে আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে ভোক্তা অধিদপ্তর। রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও অংশ নেয়।

সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচলক ডায়াবেটিস মাপার নকল স্ট্রিপ বাজারজাত করার কারসাজির ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ডায়াবেটিসের নকল স্ট্রিপ বিক্রি নিয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে আমাদের একটি টিম তদন্ত শুরু করে। এতে দেখা যায় যে, ফার্মা সলিউশন নামের ওষুধ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এ স্ট্রিপ আমদানি করে বিক্রি করছে। আকু চেক অ্যাকটিভ নামের স্ট্রিপের মোড়কে ‘মেইড ইন জার্মানি’ লেখা। এটার উৎপাদক নাকি জার্মানির প্রতিষ্ঠান রোস।

সফিকুজ্জামান বলেন, সন্দেহ হবার পর লাজ-ফার্মা থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়। লাজ-ফার্মাকে ডেকে আনা হয়। তারা জানায়, এটার আমদানিকারক ফার্মা সলিউশন। ঢাকায় ফার্মা সলিউশনের ৪-৫টা ডিপো রয়েছে। তেজকুনিপাড়ার ডিপোতে অভিযান চালানো হলো। কিন্তু তারা মুখে কুলুপ এটে বসলো।

আকু চেক স্ট্রিপ নিয়ে জার্মানির রোস কোম্পানির সঙ্গেও ভোক্তা অধিকারের যোগাযোগ হয়। প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত করেছে, তারা এ ব্যাচধারী কোনো স্ট্রিপ উৎপাদনই করেন না। তাহলে দেশের বাজারে এগুলো কোথা থেকে এলো, গায়েবিভাবে এলো কি না, এমন প্রশ্ন রাখেন ভোক্তার অধিকারের ডিজি।

তিনি বলেন, সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে যেটা বেরিয়ে এলো, তা হলো এগুলো তারা লাগেজ পার্টির মাধ্যমে দেশে এনেছে। ভারত থেকে নকল এসব স্ট্রিপ কাপড়ের লাগেজের মধ্যে করে আসে। তারা শুধু স্ট্রিপ কৌটায় করে নিয়ে আসে। পরে নয়াপল্টনের প্রিন্ট ওয়ান নামের প্রেসে সব কারসাজি করা হয়।

ফার্মাসি খাতে কারসাজি চরম হতাশাজনক উল্লেখ করে সফিকুজ্জামান বলেন, জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আপনি জাল টাকা উৎপাদন করে যতটা না ক্ষতি করতে পারবেন, তার চেয়ে নকল ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরিতে বেশি ক্ষতি হবে। এর চেয়ে খারাপ কাজ আর কিছু হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ বিক্রি মানুষ হত্যার মতো অপরাধ। নকল মেডিকেল সামগ্রী বা ওষুধ বিক্রির চেয়ে মাদকের ব্যবসা করা ভালো। চাল-ডালের দাম বাড়ানোর থেকেও অনেক ভয়াবহ অপরাধ এটি। ডায়াবেটিস স্ট্রিপের ভুল রিপোর্টের ফলে ভুল চিকিৎসা পেয়ে মানুষ যেকোনো সময় মারা যেতে পারে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ফার্মা সলিউশনের প্রধান নির্বাহী পল্লব চক্রবর্তী ও প্রিন্ট ওয়ানের সত্ত্বাধিকারী লুৎফর রহমান। তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করেন এবং ক্ষমাও চান। পল্লব চক্রবর্তী নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপের প্যাকেটের বিষয়ে দায় স্বীকার করেন। তবে এ ঘটনায় তার প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মীকে দায়ী করেন। বিভিন্ন যুক্তিও দেন।

লুৎফর রহমান বলেন, ফার্মা সলিউশনকে আমরা বিশ্বাস করে কাজ নিয়েছিলাম। তাদের লেনদেন প্রক্রিয়াও ভালো। আমরা বিশ্বাস করে তাদের কাজ নিয়েছি। দুই ধাপে ১০-১২ হাজার টাকার প্রিন্টিংয়ের বিল পেয়েছি। এরপরও আমাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। তবে আমরা দায় এড়াতে পারি না।

মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই’র পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এলসি জটিলতার কারণে নকল স্ট্রিপ দেশে আসছে। কিন্তু সেটি রোগীর জন্য ভোগান্তি, যা এফবিসিসিআই সমর্থন করে না। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের দায় এফবিসিসিআই নেবে না।

সভায় সবাই নকল স্ট্রিপ আমদানি, তৈরি ও বিক্রি প্রতিরোধের ওপর জোর দেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির দাবি করেন উপস্থিত সবাই। তারা বলেন, বিদেশ থেকে লাগেজের মাধ্যমে যে পণ্যগুলো ঢুকছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে এই বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে। মূল কাজটা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের।

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মাদকসহ সংগীতশিল্পী গ্রেপ্তারের ঘটনায় যা জানা গেল 
কোটি টাকার মাদকসহ সংগীতশিল্পী গ্রেপ্তার 
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার বিষয়ক সম্মেলনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী
নড়াইলে মাদক মামলায় চারজনের যাবজ্জীবন
X
Fresh