• ঢাকা শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধ অকার্যকর, বিকল্প ভাবুন

আরটিভি নিউজ

  ২২ আগস্ট ২০২১, ১৫:১০
পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধ অকার্যকর, বিকল্প ভাবুন
ফাইল ছবি

জনপ্রিয় ইন্টারনেটভিত্তিক গেম পাবজি ও ফ্রি ফায়ার আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) হয়তো শীঘ্রই পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু বিটিআরসির সামর্থ্য আর প্রযুক্তির অগ্রগতি বিবেচনায় বলা যায়, পাবজি বা ফ্রি ফায়ারের মতো গেম বা অ্যাপগুলো বন্ধ করা সহজ নয়। আপাতত বাংলাদেশ যে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে তা নিছক ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’ ছাড়া কিছুই না।

গেল বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার হাইকোর্ট বেঞ্চ লিখিত আদেশ প্রকাশ করেছেন। এর আগে গত ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর সকল গেম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে অনলাইন প্লাটফর্মে লাইকি, টিকটক, বিগো লাইভসহ ক্ষতিকর অ্যাপ এবং পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের জন্য নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আর চার সপ্তাহের মধ্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘সময় টিভি’র হেড অব আইটি সালাউদ্দীন সেলিম জানান, “টিকটক, লাইকি, বিগোলাইভের মতো অ্যাপগুলো বন্ধ নয়, ডিজিটাল কনটেন্ট ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করলেই কিন্তু সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তবে এই প্ল্যাটফর্মগুলোর সুবিধা নিয়ে অনেকেই ক্যারিয়ার গড়েছেন এবং এটার ভালো দিকগুলো ব্যবহার করেই আরও অনেক সুবিধা পাওয়া সম্ভব।”

তিনি বলেন, “বর্তমানে কয়েক বিলিয়ন ব্যবহারকারী নিয়ে টিকটক এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোশ্যাল কমিউনিটি নেটওয়ার্ক। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কম নয়। ভালো খারাপ দুটোই থাকবেই। তবে ডিজিটাল কনটেন্ট ফিল্টারিং পলিসি তৈরি করে সেগুলো মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ক্ষতিকর কনটেন্টগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ধীরে ধীরে একটা সময় আর ক্ষতিকর কনটেন্টও তৈরি হবে না।”

তিনি আরও বলেন, “মাত্র গত কয়েক বছরেই দেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মাধ্যমেই বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে। তাই বন্ধ না করে পলিসি মেকার ও যারা আইডল কনটেন্ট ক্রিয়েটর তারা উদ্যোগী হয়ে তরুণ সমাজকে ভালো মানের কনটেন্ট তৈরিতে উৎসাহিত করতে পারেন। তাহলে সেটা হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।”

‘অন্যদিকে পাবজি, ফ্রি-ফায়ারের মতো অ্যাটাকিং গেমস বন্ধ করার ব্যাপারে যে সুপারিশ আসছে সেক্ষেত্রেও একটু ভাবার দরকার আছে। এগুলো বন্ধ না করে বয়সভিত্তিক বিবেচনায় আনা যেতে পারে। অর্থাৎ এগুলো শুধু ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সের ব্যবহারকারীদের জন্য নিয়ম বেধে দিলে শিশুদের ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে না। অপরিণত বয়সেই যে সব শিশুরা আসক্ত হয়ে পড়ছে সেটা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।”

এ বিষয়ে বাংলাদেশে ফেসবুক স্বীকৃত ডিজিটাল মার্কেটার পলাশ মাহমুদ বলেন, আদালত যে রায় দিয়েছে সেটি তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল প্লেগ্রাউন্ড বন্ধ করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত হয় কিভাবে? এখানে সমস্যাটা হচ্ছে, কিশোর-তরুণরা গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। কিন্ত সাধারণ স্মার্টফোনে অনেক গেম থাকে। ফ্রি ফায়ার বা পাবজি বন্ধ করলেও অন্যান্য গেম তো আপনি বন্ধ করবেন না। তখন এই দুটি বাদ দিয়ে অন্য গেম খেলবে। এছাড়া যারা এই গেম ভালোবাসে তারা ভিপিএন ব্যবহার করবে। তখন সরকারের কিছু করার থাকবে না। এজন্য ফ্রি ফায়ার বা পাবজি বন্ধের মতো অকার্যর সিদ্ধান্ত না বরং বিকল্প ভাবা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ‘সাইবার-৭১’ এর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, গেমস বা কোনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপ ব্লক করে কোনও সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। বর্তমান সময়ে ব্লক করলেও বিভিন্নভাবে এসব ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। হুট করে কিছু বন্ধ করে দেওয়া অনেকটা অসম্ভব। যেখানে টেকনোলজির বিপ্লব হচ্ছে সেখানে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিত। প্রতিটি জিনিসের খারাপ বা ভালো দিক আছে। এটাই সাধারণ নিয়ম। এজন্য বন্ধ করে না দিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।”

জাবের আরও বলেন, “এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির দিক থেকেও অনেক বিষয় আছে। যেমন, একটি অ্যাপ ব্লক করলে সেটি আবার ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের (ভিপিএন) মাধ্যমে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। যেটা অবৈধ পন্থা। বৈধ পন্থা বন্ধের বলে এই অ্যাপ ব্যবহারকারীরা অবৈধ পথে হাঁটতে পারে। তাহলে বন্ধ করে কী লাভ?’

তবে কিছু ফায়ারওয়াল সিস্টেম আছে যার মাধ্যমে ভিপিএন বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের হাতে সেই প্রযুক্তি নেই বলে জানান জাবের। ফলে অ্যাপ বন্ধ করলেই বাংলাদেশে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি বন্ধ হবে এমন নয়। এজন্য বন্ধ না করে অ্যাপগুলো সঠিক গাইডলাইনের মধ্যে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানা তিনি।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গ্রিস থেকে পালতোলা জাহাজ বেলেমে অলিম্পিক শিখা যাচ্ছে ফ্রান্সে
X
Fresh