• ঢাকা বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ফেলানী হত্যার ১০ বছর, করোনা ছুতোয় বিচার প্রক্রিয়া

কাজী ফয়সাল ও আব্দুল কুদ্দুস চঞ্চল

  ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ২৩:৫১
ফাইল ছবি।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ইতিহাসের নৃশংসতম দিন আজ সেই ৭ জানুয়ারি। ২০১১ সালের এই দিনেই কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির রামখানা অনন্তপুর সীমান্তে ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এই বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হওয়ার পরও প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল ফেলানীর নিথর দেহ।

এ ঘটনায় গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। ফেলানী হত্যার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বিচার না পাওয়ায় হতাশ ফেলানীর পরিবারসহ সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে মহামারি করোনাভাইরাসের ছুতোয় অনিশ্চয়তায় রয়েছে পুরো বিচার প্রক্রিয়া। কেননা এই হত্যা মামলার পুনর্বিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে আনা রিটের (রিট নম্বর- ডব্লিউপি (সিআরএল)- নং-০০০৪১/১৫) শুনানি হওয়ার দিন ধার্য ছিল ২০২০ সালের ১৮ মার্চ, কিন্তু তা হয়নি। বরং রিটের শুনানি করোনার দোহাই দিয়ে কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।

ওই সময়েই বিষয়টি কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকনকে নিশ্চিত করেছিলেন কোলকাতার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সাধারণ সম্পাদক কিরীটি রায়। এমন পরিস্থিতিতে ফেলানী হত্যার সুবিচার পাওয়ার বিষয়টি এখনও অন্ধকারেই রয়েছে।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) সকালে ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে কিশোরী ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা ফেলানীর নিথর দেহ কাঁটাতারের ওপর ঝুলে থাকার পর তার লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ। এর প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর ৮ (জানুয়ারি) শনিবার লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ।

এর ২ বছর পর মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অব্যাহত চাপের মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করে ভারত সরকার। ওই আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম এবং মামা হানিফ। তবে একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ এর বিশেষ আদালত।

এরপর রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনর্বিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা। এর প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আবারও বিচারকাজ শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। কিন্তু ২০১৫ সালের ২ জুলাই আসামি অমিয় ঘোষকে পুনরায় খালাস দেন আদালত। এই রায়ের পর একই বছরের ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে একাধিকবার শুনানি পিছিয়ে তা আজ পর্যন্ত হয়নি। এর ফলে থমকে রয়েছে ফেলানী খাতুন হত্যার বিচার প্রক্রিয়া। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম ঝুলে থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী।

মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করে ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, ফেলানী হত্যার বিচার চেয়ে অনেক ঘুরেছি, মানবাধিকার সংস্থাসহ বহু জনের কাছে গেছি, বিচার পেলাম না। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনার পূর্বে শুনানির তারিখ থাকলে তা হয়নি। এখন আর কোনও খোঁজ খবর জানি না।

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম আরটিভি নিউজকে বলেন, ফেলানী হত্যার ১০ বছর হয়ে গেছে আজও বিচার পাইনি। আমি দুই দেশের সরকারের কাছে সঠিক বিচার দাবি করছি।

একইভাবে সীমান্তের অধিবাসীরা জানান, ফেলানী হত্যার বিচার দ্রুত বিচার সম্পন্ন হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়ে যেত।

এ বিষয়ে ফেলানী হত্যা মামলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন আরটিভি নিউজকে বলেন, ভারতের সুপ্রিমকোর্টে ফেলানী হত্যার রীটটি কার্যতালিকার ৩ নম্বরে ছিল। কয়েকদফা শুনানির তারিখ পিছিয়ে গেছে। বর্তমান কোভিট-১৯ এর জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট চলছে। পরিস্থিতি ভালো হলে রীটটি শুনানি হবে বলে জানতে পেরেছি। আশা করছি ফেলানীর পরিবার ন্যায় বিচার পাবে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে ফেলানী হত্যাকাণ্ডের রিটের শুনানি ও বিচারকার্য দ্রুত সম্পন্ন হলে তা উভয় দেশের সীমান্তের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

উল্লেখ্য, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতে বঙ্গাইগাঁও গ্রামে। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। তাই ২০১১সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে রওনা হয় দেশের উদ্দেশ্যে। ৭ জানুয়ারি ভোরে ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের উপর মই বেয়ে আসার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফেলানীর।

কেএফ/এম/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
প্রবাসী স্বামীর পরকীয়ার জেরে নোবিপ্রবি ছাত্রীর আত্মহত্যা
জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
শিশু সুফিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা, জড়িতদের ফাঁসি চায় এলাকাবাসী
টেকনাফে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ নেতা নিহত
X
Fresh