• ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

করোনা হেরে গেল অপরাধের কাছে

আরটিভি ডেস্ক

  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:৪১
National Women's Commission
প্রতীকী ছবি।

একটি অ্যাম্বুলেন্সে দুইজন করোনায় আক্রান্ত নারীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ তাদের আলাদা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল৷ প্রথমে বছর চল্লিশের করোনা আক্রান্ত নারীকে অ্যাম্বুলেন্স চালক হাসপাতালে নামিয়ে দেয়৷ তারপর ১৯ বছরের তরুণীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে৷ তারপর তাকে হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়৷

আর এই ঘটনাটি ঘটেছে কেরালায়৷ কয়েকদিন আগে৷ পরে অবশ্য সেই চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ করোনাকালে এমন নানা অপরাধ নিয়ে ডয়চে ভেলের রিপোর্টটি তুলে ধরা হলো।

অভিযোগ উঠেছে, ২১ আগস্ট গরু চুরির অপবাদ দিয়ে পারভিন বেগম, তার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও ছেলের বন্ধুকে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে রাস্তায় হাঁটিয়ে মারধর করতে করতে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ আর সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরানও তাদের মারধর করেন৷ বুধবার মিরানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়৷

দিল্লিতে করোনা-কেন্দ্রের ভেতরে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল দুই যুবক৷ কিছুদিন আগে৷ সেই করোনা-কেন্দ্রে আরও রোগী ছিলেন৷ বাইরে নিরাপত্তারক্ষী ছিল৷ করোনা-কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো৷ তা সত্ত্বেও বাথরুমের কাছে নিরালা জায়গা বেছে ধর্ষণ করে ওই দুই যুবক তাই করোনা নামক ভয়ংকর মহামারিও হেরে যাচ্ছে এই অপরাধীদের কাছে৷ তারা ধরা পড়বে জানে, ধর্ষণের আইন এখন খুব কড়া, সে সবও তাদের অজানা নয়, তা সত্ত্বেও এই ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে৷ বস্তুত, করোনাকালে কোন অপরাধটাই বা কমেছে ভারতে?

উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে খুন লেগেই আছে৷ তিনজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন খুব কম সময়ের ব্যবধানে৷ দিন দুয়েক আগেই বুলন্দশহর থেকে দিল্লি ফেরার পথে এক ট্যাক্সিচালক খুন হয়েছেন৷ পরিবারের অভিযোগ, ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় তাকে খুন করে দুই সওয়ারি৷ পুলিশ অবশ্য তা মানতে চায়নি৷ নিজের মেয়েকে বেচে দিয়েছেন এই গুজবের ভিত্তিতে মৈনপুরিতে একজন দলিতকে তারই বাড়ির ছাদে পিটিয়ে মেরেছে পাঁচজন লোক৷ কুশীনগরে তো পুলিশের সামনেই খুনের দায়ে এক অভিযুক্তকে পিটিয়ে মারা হয়েছে৷ লকডাউন হওয়ার আগে গত জানুয়ারিতে উত্তর প্রদেশে একদিনে ১৩টা খুন হয়েছিল৷ দেখা যাচ্ছে, করোনার সময়েও যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে সেই চরিত্রের বদল হয়নি৷

রাজধানী দিল্লিই বা কম যায় কীসে? পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১ জুন থেকে দিল্লিতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি করে ছিনতাই হচ্ছে৷ দিন কয়েক আগের ঘটনা৷ মূলচন্দ থেকে নেহরু প্লেস আসার পথে অটোতে বসা এক বাঙালি মেয়ের হাত থেকে ব্যাগ টান মারে এক বাইক আরোহী৷ মেয়েটিও পাল্টা টান দেয়, তখন তাঁর হাত চেপে ধরে দুষ্কৃতী৷ ভয়ে মেয়েটি ব্যাগ ছেড়ে দেয়৷ এটিএমে গিয়ে পিন বদলে ১৫ হাজার টাকা তুলে নেয় দুষ্কৃতীরা৷ রাস্তায় চলার সময় মোবাইল, গলার হার ছিনতাই তো নিত্যদিনের ঘটনা৷ সেই সঙ্গে গাড়ি চুরি, ডাকাতি, হত্যা, মহিলা নির্যাতন সহ সব ধরনের অপরাধেরই বাড়বাড়ন্ত৷

সাইকোলজি অব ভায়োলেন্স জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শেরি হামবির মতে, ‘‘ধর্ষণ যৌনসুখের উদ্দেশ্যে নয়, বরং অপরপক্ষকে দমিয়ে রাখতে ক্ষমতার প্রদর্শন হিসাবে করা হয়৷’’ কিছু ক্ষেত্রে এই ক্ষমতার প্রকাশ শুধু নারীদের বিরুদ্ধে হয়৷ অন্যদিকে, ধর্ষণ কাজ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘জাতে ওঠার’ পন্থা হিসাবে৷ এছাড়া ধর্ষণের পেছনে রয়েছে নানাবিধ মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, যা বুঝতে বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন৷

কেন এই অবস্থা? দিল্লি পুলিশের একটা ব্যাখ্যা হলো, করোনার পর জেলগুলোকে খালি করার দরকার হয়৷ কারণ, রাজধানীর জেলে উপচে পড়া ভিড় ছিল৷ সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য যে সব অপরাধীর সাত বছরের কম হাজতবাসের সাজা ছিল, তাদের অনেককেই প্যারোলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ ছাড়া পেয়ে তারা আবার অপরাধ করতে শুরু করেছে৷ আইজি জেল রাজ কুমার সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-কে জানায়, ‘‘দিল্লির জেল থেকে চার হাজার ৩০০ জনকে ছাড়া হয়েছিল৷ তারপর আবার ৫০ জনকে বিভিন্ন অপরাধের কারণে ধরা হয়েছে৷’’

এদিকে লকডাউনের ফলে প্রচুর লোকের চাকরি গেছে৷ ব্যবসা মার খেয়েছে৷ আনলকের পর সব খুলেছে ঠিকই, কিন্তু চাকরি, ব্যবসা কিছুই আর আগের মতো নেই। তাই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এ সব বাড়বে তা জানা কথা৷ তা সত্ত্বেও করোনার বাজারে অপরাধের সংখ্যা মাত্রাছাড়াভাবে বেড়েছে৷ ১ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত দিল্লিতে ৪৭১টা ছিনতাই হয়েছে৷ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২২৬টা খুন, ২৩৬টা খুনের চেষ্টা, প্রায় ৫৭ হাজার চুরি, ৭০০ ডাকাতি এবং ১৩ হাজারেরও বেশি গাড়ি চুরি হয়েছে৷

পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও৷ সেখানে আবার রাজনৈতিক খুন লেগেই আছে৷ বিজেপি-র অভিযোগ, তাদের হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়কে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে৷ অবশ্য এটাকে আত্মহত্যা বলেছে৷ আরও কিছু বিজেপি নেতা ও কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ করোনাকালেও নিয়মিত তৃণমূল বনাম বিজেপি কর্মীদের লড়াই হয়েছে৷ সব মিলিয়ে অপরাধের হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও খারাপ৷

জাতীয় মহিলা কমিশনের তথ্য বলছে, ২৩ মার্চ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে তারা নারী নির্যাতনের ৫৮৭টি অভিযোগ পেয়েছে৷ তার মধ্যে ২৩৯টি গার্হস্থ হিংসার৷ করোনা কেটে গেলে যখন পুরো হিসাব আসবে, তখন বোঝা যাবে, গার্হস্থ হিংসার প্রকৃত ছবি৷
ফলে করোনাকালে অপরাধের বাড়বাড়ন্ত ভারতে৷ কোনো অপরাধই কমেনি৷ বরং তা বাড়ছে৷

এম

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বাংলাদেশসহ ৬ দেশে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিল ভারত 
প্রথম বাংলাদেশি রেফারি হিসেবে মাসফিয়ার ইতিহাস
আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিলেন রেড ক্রিসেন্টের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান
৫ বলে ওভার!
X
Fresh