• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কেন এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠলো টিকটক  

আরটিভি নিউজ

  ০৪ আগস্ট ২০২০, ২৩:৪৬
কেন এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠলো টিকটক  
টিকটক  

আলোচিত অ্যাপের নাম টিকটক। ভিডিও তৈরি ও শেয়ার করার অ্যাপ। অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষ করে তরুণদের কাছে। সম্প্রতি চীনের তৈরি এই অ্যাপটি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের অপারেশন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু মার্কিন কোম্পানি মাইক্রোসফট এটি কেনার জন্য দরকষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে।

ট্রাম্প এখন তার কথার সুর কিছুটা পরিবর্তন করে বলছেন, আমেরিকান কোনও প্রতিষ্ঠান যদি শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ইউনিট ক্রয় করে তাহলে এই বিক্রি থেকে তার সরকারের একটা ভাগ দিতে হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, মাইক্রোসফটের প্রধানকে টেলিফোন করে তিনি এই অর্থ দাবি করেছেন।

তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন কোন সমঝোতা না হলে তিনি চীনের বাইটড্যান্স মালিকানাধীন এই অ্যাপটি ১৫ সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ করে দেবেন।

টিকটকের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ হচ্ছে এই অ্যাপটি চীনা সরকারের কাছে তথ্য পাচার করছে। তবে বেইজিং এবং টিকটক উভয়েই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই অর্থ দাবির সমালোচনা করছেন অনেকে। তারা বলছেন এর ফলে টিকটক ও মাইক্রোসফটের মধ্যে সমঝোতার পথ আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

একজন আইনজীবী নিকোলাস ক্লেইন বলছেন, বেসরকারি কোনও সমঝোতা থেকে সরকারের অর্থ দাবি করার কোনও এখতিয়ার নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কী কারণে চীনা এই অ্যাপটি সারা বিশ্বে এতোটা জনপ্রিয় ও সফল হতে পারলো?

টিকটক কী

ভাইরাল হওয়া মজার মজার নাচ ও ঠোঁট মেলানো হাস্যকৌতুকের ভিডিও তৈরি ও শেয়ার হয় এই টিকটক অ্যাপে। অল্প বয়সী ছেলে মেয়েদর কাছে এই অ্যাপ খুবই জনপ্রিয়। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর চাহিদা মতো যেকোনো কিছুর সঙ্গে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে ছোট ভিডিও তৈরি করে তা শেয়ার করা যায়। আবার এই অ্যাপের সাহায্যে নিজের পছন্দের গানের সঙ্গে নাচ বা নানা ধরনের কমেডিও তৈরি করা সম্ভব। স্টিকার, ফিল্টার ও অগম্যান্টেড রিয়েলিটিও ব্যবহার করা যায় এসব ভিডিওতে।

টিকটক ব্যবহারকারীরা এখানে এক মিনিট লম্বা ভিডিও পোস্ট করতে পারেন এবং এখানকার বিশাল তথ্যভাণ্ডার থেকে গান ও ফিল্টার বাছাই করতে পারেন। এই অ্যাপস দিয়ে অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েরা পরিচিত ফিল্মি ডায়লগ বা গানের সঙ্গে নিজেরা অভিনয় করে মজার মজার ভিডিও তৈরি করে থাকেন। একজন ব্যবহারকারীর যখন এক হাজারের বেশি ফলোয়ার হয় তখন তিনি তার ভক্তদের জন্য লাইভে আসতে পারেন। এছাড়া এখানে তিনি ডিজিটাল উপহারও গ্রহণ করতে পারেন যা অর্থের সাথেও বিনিময় করা যায়।

একজন ব্যবহারকারী যাকে অনুসরণ করেন তিনি তার ভিডিও দেখতে পারেন। এছাড়াও তিনি আগে যেসব বিষয়ে ভিডিও দেখেছেন তার ওপর ভিত্তি করেও তিনি নতুন নতুন ভিডিও দেখতে পারেন। ব্যবহারকারীরা নিজেদের মধ্যেও ব্যক্তিগত বার্তা আদান প্রদান করতে পারেন এই অ্যাপের মাধ্যমে। যারা কিছুটা অভিনয় করেন বা কমেডি করতে পারেন, তাদের নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরার জন্য এই টিকটক একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উঠে এসেছে।

টিকটকের জনপ্রিয়তার পেছনে কারণগুলো হচ্ছে:

এসব ভিডিও আকারে ছোট, ব্যবহার করা সহজ, সবসময় এতে যুক্ত হয় নতুন নতুন ফিচার, ভিডিওতে নিজের কণ্ঠ মেলানো যাকে বলা হয় লিপ সিঙ্ক। ভিডিওতে অন্যের কণ্ঠ ব্যবহার।

২০১৯ সালের শুরু থেকেই ডাউনলোড চার্টের শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান করছে টিকটক। গত বছর ইন্সটাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটকে টপকে বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ ডাউনলোডকারী অ্যাপে পরিণত হয় এটি। এই কোম্পানির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৫ বিলিয়ন ডলার যা রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবারের চেয়েও বেশি।

করোনাভাইরাস সঙ্কটের সময় টিকটকের জনপ্রিয়তা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। লকডাউনের কারণে ঘরবন্দি মানুষের তীব্র আগ্রহ তৈরি হয় এই অ্যাপের প্রতি। বলা হচ্ছে, টিকটক ও তার সহযোগী অ্যাপ দোইনের মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ কোটি। দোইন অ্যাপটি শুধু চীনেই ব্যবহার করা যায়।

জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ভারতে টিকটক নিষিদ্ধ করার আগে এটি সেখানে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সেদেশে দশ কোটিরও বেশি মানুষ ইতোমধ্যে টিকটক ডাউনলোড করেছে।

২০১৮ সালে আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা অ্যাপ ছিল এই টিকটক। ইকোনমিক টাইমস পত্রিকা লিখছে, প্রতিমাসে গড়ে প্রায় দুই কোটি মানুষ টিকটক ব্যবহার করছে।

টিকটকের যাত্রা শুরু হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন তিনটি অ্যাপ হিসেবে।
প্রথমটি ছিল মার্কিন একটি অ্যাপ যার নাম মিউজিক্যাল ডট লি। এটি শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে।

প্রযুক্তি বিষয়ক চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স ২০১৬ সালে একই ধরনের একটি অ্যাপ চালু করে যার নাম দোইন। পরে বাইটড্যান্স টিকটক নাম নিয়ে সারা বিশ্বে তার প্রসার ঘটাতে শুরু করে এবং ২০১৮ সালে মিউজিক্যাল ডট লিকে কিনে নিয়ে তাকেও টিকটকের সঙ্গে একীভূত করে ফেলে।

বাইটড্যান্স তার অ্যাপগুলোকে চীনা মালিকানা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। এরই অংশ হিসেবে ডিজনির শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা কেভিন মায়ারকে টিকটকের প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিযুক্ত করেছে।

একজন ব্যবহারকারী যখন টিকটক ব্যবহার করেন তখন তার প্রচুর ডাটা খরচ হয়। ডাটার এই খরচ নির্ভর করে কোন ভিডিও দেখা হচ্ছে এবং মন্তব্য করা হচ্ছে, ব্যবহারকারীর লোকেশন বা অবস্থানের ডাটা, ফোনের মডেল এবং কোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে, লোকজন যখন টাইপ করে তখন তার কীস্ট্রোক রিদম কেমন অর্থাৎ ব্যবহারকারীর টাইপ করার ধরন।

অ্যাপটির কিছু কিছু ডাটা খরচের ধরন দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। খুব সম্প্রতি জানা গেছে এটি ব্যবহারকারীর কপি ও পেস্ট নিয়মিত মনে রাখে। রেডিট, লিঙ্কডিনসহ আরও বহু অ্যাপেও এরকমটা হয়ে থাকে।

টিকটক কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে বহু প্রশ্ন আছে। ডাটা সংরক্ষণ থেকে শুরু করে এর এলগরিদম নিয়েও রয়েছে অনেক রহস্য। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও অভিযোগ করেছেন, যারা টিকটক ব্যবহার করেন শেষ পর্যন্ত তাদের সব তথ্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টির হাতে গিয়ে পড়তে পারে। কিন্তু টিকটক কর্তৃপক্ষ বলে আসছে, ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তারা যেসব তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো চীনের বাইরে সংরক্ষণ করা হয়।

তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডাটা যুক্তরাষ্ট্রেই সংরক্ষণ করা হয়। তার ব্যাকআপ রাখা হয় সিঙ্গাপুরে। ইউরোপের গোপনীয়তা সংক্রান্ত ইউনিটও সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলা।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
টিকটক নিষিদ্ধে বিল পাস যুক্তরাষ্ট্রের
আমেরিকার পর ইউরোপেও চাপের মুখে টিকটক
কুড়িগ্রামে নদীতে গোসল করতে নেমে কিশোরের মৃত্যু
টিকটক ট্রলে দুর্বিষহ যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি নারীদের জীবন
X
Fresh