৬৩ বছর বয়সে প্রাইমারির ছাত্রী!
শিক্ষা অর্জনের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। এর নির্ধারিত সীমা নেই। মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করতে পারে। এ প্রবাদপ্রতিম কথাগুলো এবার স্মরণ করিয়ে দিলেন মেহেরপুরের বাশিরন নেসা।
যখন স্কুলে যাওয়া-আসা শুরু করার কথা, তখন তার বিয়ে হয়। শুনলে হয়তো অবাক-ই হবেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর বুঝতেই পারছেন পরবর্তীতে কি ঘটেছে। বাংলাদেশের সহস্র নারীর মতো তারও কোল আলোকিত করে এসেছে সন্তান। আর তাদের লালন-পালন ও সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। এরমধ্যে আবার পড়াশোনার সময় কই!
এখন তার ছেলে-মেয়েরা বড় হয়েছে। ১ ছেলে ও ২ মেয়ে সংসারী হয়েছে। বাশিরন নেসার হাতে এখন অফুরন্ত সময়। তাই বসে না থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পড়ালেখা শিখবেন। অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে আসবেন। আর নিরক্ষর থাকবেন না।
সিদ্ধান্তমতো ভর্তি হলেন স্কুলে। মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়ার গ্রামের বাসিন্দা বাশিরন নেসা। হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া স্কুলের শিক্ষার্থী তিনি। ভর্তি হবার জন্য ২০১০ সালে এখানে প্রথম আসেন। কিন্তু ওই বছর তাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। পরের বছর আবার আসেন। আগ্রহ দেখে এবার তারা আর না করেননি। সঙ্গে তখন দু’ নাতিও একই স্কুলে যেতো।
সম্প্রতি ক্লাসের ফাঁকে খানিকটা সময় দেন বাশিরন নেসা। বললেন, আমি একটু শিক্ষিত হবো। আর কিছু না। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে। এখন নিজের স্বাধীনতা মতো কাজ করি।
তিনি বলেন, আমি বুড়ো মানুষ। ওরা আমার থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। স্কুল থেকে বেরও হয়ে গেছে।
বাশিরন নেসার পড়তে সবচেয়ে ভালো লাগে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা। বাচ্চাদের সঙ্গে স্কুলে পড়তে কেমন লাগে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওদের সঙ্গে আমার খুব ভাব। ভাব না থাকলে হয়। ওরা সবাই আমার বান্ধবী।
মাটির মেঝে, টিনের চাল আর বাঁশের চটা দিয়ে বেড়া দেয়া জরাজীর্ণ হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া স্কুল। সেখানে ২০১১ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে সব ক্লাস পাশ করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন এবং পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ মাসের ২০ তারিখ পরীক্ষা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বললেন, তিনি যখন প্রথম আসেন; তখন আমরা ভেবেছিলাম; বয়স্ক মানুষ ঠিকমতো কি পারবেন? তাই শুরুতে আগ্রহ দেখাইনি। এখন সকাল ও বিকেল দু’ শিফটেই তিনি স্কুলে থাকেন।
বাশিরন নেসা সেই সকাল ৯টায় স্কুলে আসেন আর বিকেল ৪টায় ছুটি হলে বাড়ি যান। তিনিই সম্ভবত বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে এখন সবচেয়ে বয়স্ক শিক্ষার্থী।
প্রধানশিক্ষক জানান, পড়াশোনায় তিনি মোটামুটি। অনেক বয়স হয়েছে।এ বয়সে ইংরেজি আর অংকটা তার জন্য কষ্টকর। তবে বাংলা তিনি ভালোই শিখেছেন। এখন স্কুলে তার প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে, যাতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন।
প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে বাশিরন নেসা বলেন, এভাবে গল্প করলে হবে? আমার পড়াশোনা করতে হবে না?
ডিএইচ
মন্তব্য করুন