• ঢাকা সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মা-যমুনার চরে বসছে ইলিশ মাছের মেলা

জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ

  ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:৪৯

প্রশাসনের কঠোর নজরদারির মধ্যেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনা নদীতে মা ইলিশ ধরছে জেলে ও সৌখিন শিকারিরা। জরিমানা, জাল পুড়িয়ে এবং নৌকা বিনষ্ট করেও থামানো যাচ্ছে ইলিশ মাছ ধরা থেকে।

নদী তীরবর্তী এলাকায় বসেছে ইলিশ মাছের মেলা। ভোরবেলা এবং বিকেল থেকে রাতভর চলে মাছ কেনাবেচা। দাম অনেক কম হওয়াতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে। নারী ক্রেতারাও ভিড় করছেন সেখানে।

ইলিশ কিনতে আসা আসলাম হোসেন বলেন, স্বাভাবিক সময়ে যে ইলিশের কেজি আটশ’ থেকে ১২,০০ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকায়। মাছের দাম কম হওয়ায় তিনি ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে এসেছেন ইলিশ কিনতে।

-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : বেনাপোল সীমান্তে ৫ কেজি স্বর্ণের বারসহ পাচারকারী আটক​
-------------------------------------------------------

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মায় মাছ শিকারি জেলেরা বেশির ভাগই দরিদ্র। ঋণ করে জাল-নৌকা ক্রয় করে নদীতে মাছ ধরেন। ফলে এসব ঋণ পরিশোধের কিস্তি দিতে হয়। তাছাড়া সংসারের খরচতো আছেই। তাই জেল জরিমানা মাথায় নিয়ে তারা নদীতে মাছ ধরছেন। এসময়ে সরকারিভাবে সাহায্য দেয়ার কথা থাকলেও তারা এ পর্যন্ত কোনও সাহায্য পাননি। সরকার যদি প্রতি জেলেকে এক মাসের জন্য ৬-৭ হাজার করে টাকা দিত তাহলে কেউ সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে ইলিশ মাছ ধরতো না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলোকদিয়া চরের এক জেলে বলেন, আমি প্রথম দিকে মাঝ ধরতে যেতাম না। গত বছরও ধরিনি। কিন্তু অন্যরাতো ঠিকই ধরছে। তারা মাছ ধরে মোটা অংকের টাকা কামাচ্ছে। তাই এবার আমিও মাছ ধরতে নেমেছি। তবে অনেক সর্তকতার সঙ্গে মাছ ধরছি।

পুলিশের হাতে ধরা পড়লে অনেক হয়রানি শিকার হতে হয়। তাদের হাতে ধরা পড়লে মাছও নিয়ে যায় আবার মোটার অংকের টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেতে হয়। টাকা না দিলে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে জেল দিয়ে দেয়।

মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার পাশ দিয়ে পদ্মা ও যমুনা নদী প্রবাহিত। ইলিশের প্রজননের এ মৌসুমে এখানে প্রচুর মা ইলিশ ধরা পড়ছে। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় নির্বিচারে চলছে মা ইলিশ নিধন। নদীতে জাল ফেললেই ধরা পড়ছে চকচকে রূপালী ইলিশ। দিনের বেলায় প্রশাসন তৎপর থাকায় রাতের অন্ধকারে জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ মাছ ধরে মাটির নিচে, ঝোপের ধারে কিংবা বাড়ির বিভিন্ন গোপন স্থানে মজুদ করছে। যখন কোনও ক্রেতা ফোন দেয় তখন ব্যাগে করে মাছ তার নিকট পৌঁছে দেয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে সরকারদলীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি জেলেদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের দিয়ে মা ইলিশ মাছ শিকার করাচ্ছেন। রাতের বেলায় প্রশাসনের তেমন তৎপরতা না থাকায় জেলেরা নির্ভয়ে মাছ ধরছে। মাছের পাইকাররা ফোনের মাধ্যমে মাছ ক্রয় করে তা ভোর হবার আগেই পিকআপভ্যান ও সিএনজিতে করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে।

শিবালয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল আলম বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা প্রতিদিনই পদ্মা-যমুনা নদীর বিভিন্ন অংশে অভিযান চালাচ্ছি। দিনের পুরোটা সময় আমরা নজর রাখছি। তাছাড়া জেলেদের মাছ ধরা বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যারা মাছ কিনতে আসছেন তাদেরও সচেতন করার চেষ্টা করছি। তবুও মাছ ধরা ও বিক্রি কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না।

মানিকগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মনিরুজ্জামান বলেন, জেলার পদ্মা-যমুনার বক্ষে প্রায় দেড়শ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গত ৭ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১৮৯ টি অভিযান পরিচালনা করা হযেছে। এতে ২৮০ ব্যক্তিকে কারাদণ্ড ও ৭৪ জনকে অর্থদণ্ড করা হয়। ৭৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন লাখ ৫৬ হাজার টাকা আদায় ও এক টন ৯৩২ কেজি ইলিশ উদ্ধার হয়। উদ্ধারকৃত ইলিশ স্থানীয় এতিমখানা, মাদরাসা, জেলখানাসহ ধাতব্য প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হয়। এছাড়া প্রায় ১৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ৬৬ লাখ ৫১৫ ঘনমিটার জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

আরও পড়ুন :

জেবি/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরা শুরু
চাঁদপুরে ৬ লাখ টন ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা
বাংলা নববর্ষে পান্তা-ইলিশের একাল-সেকাল
বাজারে বৈশাখী হাওয়ায় বেড়েছে ইলিশ-পোলট্রি মুরগির দাম
X
Fresh