মিয়ানমারে সংঘাত / ‘বাংলাদেশ ও ভারতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা’
মিয়ানমারে অভ্যন্তরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর ব্যাপক লড়াই চলছে। মিয়ানমারের এই সংঘাতময় পরিস্থিতির প্রভাব বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায়ও পড়েছে। তাদের এই সংঘাতের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
আনিসুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করেছে। এ ব্যাপারে আমাদের আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক যেসব গোষ্ঠী আছে, বিশেষ করে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের কাছে বিষয়টা উপস্থাপন করা উচিত। একইসঙ্গে এ বিষয়ে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে একটা যৌথ উদ্যোগ নেওয়া প্রায়োজন।
সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা আরও বলেন, রাখাইনরা তাদের যুদ্ধ আমাদের সীমান্তের ওপর ফোকাস করেছে। এটার একটা কারণ হলো- সীমান্তে বিচ্ছিন্নভাবে থাকা চৌকিগুলো তারা খুব সহজে দখল করতে পারে। আরেকটা জিনিস হচ্ছে- তাদের এই যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বাংলাদেশ যদি এর সঙ্গে জড়িয়ে যায় তাহলে রাখাইনরা এটার একটা অ্যাডভানটেস নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
আনিসুল ইসলাম আরও বলেন, কক্সবাজার-মিয়ানমার পাশাপাশি এবং ১২ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে আমাদের এখানে আছে। ফলে সেখানে কিছু সন্ত্রাস হচ্ছে, জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে। এগুলো পরবর্তী সময়ে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে এক শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেন, মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতির সহসাই উন্নতি হচ্ছে না। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, যার প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতে অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য যে রোহিঙ্গা সংকট ও নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যা সামনে আরও গভীর হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে আলোচনার জন্য আমি যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছি। একইসঙ্গে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও মিয়ানমারে অস্থিরতা এই অঞ্চলের জন্য কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়েও অনেক সময় ব্যয় করেছি।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলে আমাদের অংশীদারদের বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতকে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদের সমর্থন করতে হবে, যাতে তারা তাদের দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা বাড়তে না দিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারে।
উল্লেখ্য, গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছে দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর। ২০২১ সালে ক্যুর মাধ্যমে জান্তার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর এ সংঘাত বেড়ে যায়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের সঙ্গে।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০৮