• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo
শতভাগ কারখানায় বেতন ও ভাতা পরিশোধ : বিজিএমইএ
৯৫ শতাংশ কারখানা বোনাস দিয়েছে  
পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে ৯৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ পোশাক কারখানা শ্রমিকদের বোনাস দিয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।  মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত ৭৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ কারখানা মার্চের বেতন পরিশোধ করেছে বলেও জানায় পুলিশ।  শিল্পাঞ্চল পুলিশের পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া যায়। তারা বলছে, এই পরিসংখ্যান এই পরিসংখ্যান বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও বেপজার সদস্য, পাটকল ও অন্যান্য কারখানার। এসব সংগঠনের সদস্যভুক্ত দেশে মোট কারখানা আছে ৯ হাজার ৪৬৯টি। এর বাইরেও দেশে অনেক কারখানা আছে। তাদের হিসাব এই পরিসংখ্যানে নেই। শিল্প পুলিশের পাঠানো পরিসংখ্যানে কোন সংগঠনের সদস্য কতগুলো কারখানা বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেছে, সেই হিসাবও আছে। এতে দেখা গেছে, বিজিএমইএ’র সদস্য কারখানাগুলোর মধ্যে মোট ৭৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে।  বিকেএমইএর সদস্য কারখানাগুলোর মধ্যে ৭৩ দশমিক ১৬ শতাংশ কারখানা, বিটিএমএ’র ৮২ দশমিক ৭১ শতাংশ, বেপজার ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ, পাটকলগুলোর মধ্যে ৬৫ শতাংশ ও অন্যান্য কারখানার মধ্যে ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশ কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে। অন্যদিকে বোনাস পরিশোধের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিজিএমইএ’র সদস্য কারখানাগুলোর মধ্যে ৯৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ কারখানা, বিকেএমইএ’র ৯৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বিটিএমএ’র ৯৭ দশমিক ১২ শতাংশ, বেপজা’র ৯৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ, পাটকলগুলোর মধ্যে ৯৫ শতাংশ আর অন্যান্য কারখানাগুলোর মধ্যে ৯৫ দশমিক ২০ শতাংশ কারখানা বোনাস পরিশোধ করেছে। শিল্প পুলিশের তথ্যানুসারে, গতকাল পর্যন্ত সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ২ হাজার ৫৩৪ কারখানার মধ্যে ১ হাজার ৯টি মার্চের বেতন দিয়েছে। উৎসব ভাতা দিয়েছে ২ হাজার ১৮৩টি কারখানা। কারখানামালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর শীর্ষ নেতাদের দাবি, বেতন ও উৎসব ভাতা নিয়ে বড় সমস্যা নেই; আজকের মধ্যে সব কারখানা বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে। রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান কচি জানান,  যেসব কারখানা বেতন-ভাতা দেয়নি, তারা মঙ্গলবার পরিশোধ করবে। যেসব কারখানায় বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল, সেগুলোর সমস্যা আমরা সমাধান করেছি। মিরপুরের একটি কারখানার মেশিন (যন্ত্রপাতি) বিক্রি করে আমরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিয়েছি।   
পোশাকশিল্প : ১৪ বছরে নতুন বাজারে ১০ গুণ রপ্তানি বেড়েছে
পোশাক শিল্প নিয়ে ভুল তথ্য যাচ্ছে বিদেশে 
আরও ২ পোশাক কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব সনদ
বিজিএমইএ নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে জয়ী সম্মিলিত পরিষদ
বৈশ্বিক পোশাকখাতের পাওয়ার হাউস বাংলাদেশ : ডব্লিউইএফ
বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প বৈশ্বিক পোশাকখাতের পাওয়ার হাউসে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক সংস্থা (ডব্লিউইএফ)। সম্প্রতি ডব্লিউইএফ ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য থেকে টেক্সটাইল পাওয়ার হাউসে অতিক্রম করণ আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য শিক্ষার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পের পাওয়ার হাউসে পরিণত হওয়ায় বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নেমেছে এবং মোট দেশজ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারমুখী নীতি, বেসরকারিকরণ, বাণিজ্য উদারীকরণ এবং কৌশলগত বৈদেশিক বিনিয়োগ বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ও শিল্প প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার মূল চাবিকাঠি ছিল। ডব্লিউইএফ’র ব্লগে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) ম্যানুফ্যাকচারিং ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড সাপ্লায়ার ফাইন্যান্সের গ্লোবাল ম্যানেজার ফেমি আকিনরেবিয়ো বলেছেন, যেহুতু বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় এবং ভ্যালু চেইনে আরোহণ করতে চায়, সে জন্য আফ্রিকা পোশাক শিল্পের পরবর্তী সীমানা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যা একই ধরনের আন্তর্জাতিক সমর্থন থেকে উপকৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সত্তরের দশকের শুরুতে ৯ মাস যুদ্ধের পর পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। সে সময় দেশটি অত্যন্ত দরিদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। তখন দেশেটির অর্থনীতির মুলভিত্তি ছিল পাট, যা জনগণকে খাদ্য যোগাতেও অক্ষম ছিল। এরপর ১৯৭৪ সালে দেশটি এমন একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে যাকে ‘পরমাণু হামলার পরের সকালের মতো’ বর্ণনা করেছিলেন ওই সময় দেশটিতে সফররত বিশ্বব্যাংকের একজন অর্থনীতিবিদ। এর কিছু বছর পর বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একটি সরকারী প্রচারণা ফলপ্রসূ হয়েছিল। যা দেশটির কৃষি অর্থনীতিকে টেক্সটাইল এবং পোশাক উৎপাদনে পাওয়ার হাউসে রূপান্তরিত করেছে। এ শিল্পকে এমন একটি অলৌকিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রত্যাবর্তন হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে যা আজ উন্নয়নশীল দেশগুলো অনুকরণ করার চেষ্টা করছে। আকিনরেবিয়ো বলেন, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির মূলে রয়েছে দেশটির শিল্পের বেসরকারিকরণ, বাণিজ্য উদারীকরণ ও বাজারমুখী নীতি। রেডি-টু-ওয়্যার পোশাক বৃদ্ধির ‘ইঞ্জিন’ হয়ে সুতির টি-শার্ট, প্যান্ট, পুলওভার এবং ডেনিম তার প্রিয় স্পট হয়ে উঠেছে। গত এক দশকে দেশটি তার অর্থনীতিকে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম দেশে উন্নীত করেছে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে এবং দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর আগে দেশটির অর্থনীতি বার্ষিক ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল, জিডিপি বেড়ে প্রায় ২ হাজার ৫০০ ডলারে উন্নীত হয়েছিল, যা ভারতকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই আসে শুধু পোশাক থেকে। চূড়ান্তভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের লক্ষ্য উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়া। আর এর মুল অস্ত্র দেশটির পোশাক খাত। তবে সফল শিল্পায়ন নীতির জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য বাংলাদেশ। এগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা এবং রফতানি অঞ্চলগুলোতে যন্ত্রপাতি আমদানির শুল্কমুক্ত অনুমতি দেওয়া। আইএফসি‘র এ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ৩ হাজার ৫০০টিরও বেশি কারখানায় ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করেছে। দেশটি ১৬৭টি দেশে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। পোশাক কাটা, সেলাই ও একত্রিত করা কঠিন এবং ক্লান্তিকর ও সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভর করে সাধারণত রফতানি-নেতৃত্বাধীন বৃদ্ধির মডেলগুলো চিরকাল স্থায়ী হয় না। তবে বাংলাদেশ সাফল্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ আসেন ফেমি আকিনরেবিয়ো। সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে মূলত নারী শ্রমশক্তির আধিপত্য রয়েছে, যাদের কাজে কারখানার ফ্লোর থেকে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি উপকৃত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএফসি) কর্মসূচি কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নত করেছে, লিঙ্গ বৈচিত্র্যকে উন্নত করেছে এবং নারীদের জন্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই অভিন্ন সমৃদ্ধির সামাজিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের নারীরা বেশি শিক্ষিত, দেশটির তিন-চতুর্থাংশ নারী শিক্ষিত। প্রতিবেশিদের তুলনায় দেশটির নারীদের শিক্ষা গ্রহণ, উচ্চ বেতনের চাকরি এবং স্বাস্থ্যবান সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বেশি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামান্য সহায়তায় উন্নয়নের সামাজিক ও টেকসই সুফল পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর পরবর্তী ক্লাস্টারে স্থানান্তরিত হবে।  সূত্র : ডব্লিউইএফ ওয়েবসাইট
জানুয়ারিতে পোশাক রপ্তানি ও আয়ে রেকর্ড 
দেশে প্রথমবারের মতো একক মাস জানুয়ারিতে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, মূলত একক মাসের সর্বোচ্চ রপ্তানির রেকর্ড হয়েছে জানুয়ারিতে। এই মাসে ৪ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন বা প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাকপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটা বড় একটি মাইলফলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি আমাদের ধারাবাহিক উন্নতির প্রমাণ। নতুন বাজারে শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিতও আসছে এই তথ্য থেকে। চলতি মাসের শুরুতে জানুয়ারির পণ্য রপ্তানির যে তথ্য ইপিবি প্রকাশ করেছে, সেখানে সার্বিক রপ্তানি আয়েও রেকর্ড দেখা গেছে। জানুয়ারিতে মোট ৫৭২ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগে কখনও হয়নি। ওই মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে পোশাক রপ্তানির চিত্র হতাশাজনক হলেও জানুয়ারিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক সূচকের দিকে বাঁক নিয়েছে। এই মাসে পোশাক রপ্তানিতে ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওভেন পোশাকে ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও নিট পোশাকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। বছরের বাকি সময়ে আরও ভালো খবর আসবে এমন আশা প্রকাশ করে ফারুক হাসান বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্য এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। গত বছরের হলিডে সিজনে আমাদের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র্র ও যুক্তরাজ্যে ব্যাপক বেচাকেনা হয়েছে। এতদিন তাদের ইনভেনটরিতে যেসব পণ্য জমা ছিল, সেগুলোও কমে এসেছে। ফলে এখন নতুন ক্রয়াদেশ আসার প্রবণতাও বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০২৪ সালটি আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর বছর হতে পারে বলেই মনে হচ্ছে। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ, প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন। বর্তমানে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যেখানে চীনের অংশ ৩১ শতাংশের কিছু বেশি।
টেক্সটাইল ও পোশাকের বৈশ্বিক শিল্প পাওয়ার হাউসে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি
বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে পাট ও জীবিকা নির্বাহের উপর নির্ভরশীলতা থেকে টেক্সটাইল ও পোশাকের বৈশ্বিক শিল্প পাওয়ার হাউসে পরিণত করেছে, দারিদ্র্যের হার অর্ধেক করেছে এবং মোট দেশজ উৎপাদনকে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া বাজারমুখী নীতি, বেসরকারিকরণ, বাণিজ্য উদারীকরণ এবং কৌশলগত বৈদেশিক বিনিয়োগ বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ও শিল্প প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার মূল চাবিকাঠি ছিল। বাংলাদেশের লক্ষ্য যেহেতু তার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করা এবং ভ্যালু চেইনে আরোহণ করা, তাই আফ্রিকা পোশাক শিল্পের পরবর্তী সীমানা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যা একই ধরনের প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিল্পায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন থেকে উপকৃত হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ব্লগে এমন কথাগুলো লিখেছেন ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) ম্যানুফ্যাকচারিং ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড সাপ্লায়ার ফাইন্যান্স- এর গ্লোবাল ম্যানেজার ফেমি আকিনরেবিয়ো।  তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। নয় মাসের যুদ্ধে তারা সবেমাত্র পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এটি একটি অত্যন্ত দরিদ্র, ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল যা মূলত পাট উৎপাদন এবং জীবিকা নির্বাহের উপর নির্ভরশীল কিন্তু তার জনগণকে খাদ্য জোগানে অক্ষম। ১৯৭৪ সালে এটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে দেশ। ওই সময় দেশটির পশ্চিমাঞ্চল সফররত বিশ্বব্যাংকের একজন অর্থনীতিবিদ একে ‘পরমাণু হামলার পরের সকালের মতো’ বর্ণনা করেছিলেন। তারপরে, এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একটি সরকারী প্রচারণা ফলপ্রসূ হয়েছিল এবং বাংলাদেশ এমন একটি পথে যাত্রা শুরু করেছিল যা দেশটিকে কৃষি অর্থনীতি থেকে শিল্প পাওয়ার হাউসে রূপান্তরিত করবে। টেক্সটাইল এবং পোশাক উৎপাদন এমন একটি অলৌকিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রত্যাবর্তন হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে যা আজ উন্নয়নশীল দেশগুলো অনুকরণ করার চেষ্টা করে। শিল্পের বেসরকারিকরণ এবং বাণিজ্য উদারীকরণসহ বাজারমুখী নীতিতে বাংলাদেশের পরিবর্তনের ফলে পোশাক রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে।  রেডি-টু-ওয়্যার পোশাক বৃদ্ধির ‘ইঞ্জিন’ হয়ে ওঠে এবং সুতির টি-শার্ট, প্যান্ট, পুলওভার এবং ডেনিম তার প্রিয় স্পট হয়ে ওঠে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম দেশে উন্নীত করেছে, দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে এবং লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর আগের দশকে অর্থনীতি বার্ষিক ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়ে প্রায় ২ হাজার ৫০০ ডলারে উন্নীত হয়েছিল, যা প্রতিবেশী ভারতকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এ ধরনের ট্র্যাক রেকর্ড আজ আফ্রিকার উদীয়মান অর্থনীতির ঈর্ষার কারণ। শিল্পায়নের জন্য কোনও ‘এক-আকারের-ফিট-অল’ রেসিপি নেই। তবে বৃহত্তর, স্বল্প ব্যয়বহুল কর্মীবাহিনী, পর্যাপ্ত পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদ এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিযুক্ত দেশগুলোতে পরবর্তী প্রজন্মের টেক্সটাইল এবং পোশাক শক্তি গড়ে তুলতে যা লাগে তার বেশিরভাগই রয়েছে। আর বাংলাদেশের বিপরীতে আফ্রিকায় দেশীয় তুলার বাড়তি সুবিধা রয়েছে।  ২০২২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের রফতানি করা সুতির টি-শার্টের ২০ শতাংশ উৎপাদন করেছে, যার মূল্য ৯ বিলিয়ন ডলার, যদিও ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেবেল লাগানো তুলার ২ শতাংশেরও কম উৎপাদিত হয়েছে। এটি সম্ভবত একটি সুখকর বিশ্বাস যে, আফ্রিকার পোশাক শিল্প সম্প্রসারণে আগ্রহ একক খাতের নির্ভরতা থেকে বৈচিত্র্যময় হওয়ার বাংলাদেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সাথে মিলে যায়। চূড়ান্তভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের লক্ষ্য উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়া। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই আসে শুধু পোশাক থেকে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য ভাবে সফল শিল্পায়ন নীতির জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য, যার মধ্যে রয়েছে, রফতানি অঞ্চলগুলোতে যন্ত্রপাতি আমদানির শুল্কমুক্ত অনুমতি দেওয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা। এই কৌশল, যার জন্য বাংলাদেশ বিখ্যাত, একটি অত্যাধুনিক পোশাক খাত তৈরি করেছিল যা ৩ হাজার ৫০০ টিরও বেশি কারখানায় ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করে এবং ১৬৭টি দেশে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে। পোশাক কাটা, সেলাই ও একত্রিত করা কঠিন এবং ক্লান্তিকর ও সস্তা শ্রমের উপর নির্ভর করে রফতানি-নেতৃত্বাধীন বৃদ্ধির মডেলগুলো চিরকাল স্থায়ী হয় না। অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের সাফল্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং এর পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে রয়েছে। পোশাক শিল্পে মূলত নারী শ্রমশক্তির আধিপত্য রয়েছে, যারা কারখানার ফ্লোর থেকে অনেক দূরে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি থেকে উপকৃত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে এসে আমি সেটা প্রত্যক্ষ করেছি। ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএফসি) মধ্যে একটি সহযোগিতায় বেটার ওয়ার্ক এবং জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি অ্যান্ড রিটার্নসের মতো কর্মসূচি কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নত করেছে, লিঙ্গ বৈচিত্র্যকে উন্নত করেছে এবং নারীদের জন্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ তৈরি করেছে। এই অভিন্ন সমৃদ্ধির সামাজিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশের তিন-চতুর্থাংশ নারী শিক্ষিত, তারা তাদের আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের তুলনায় শিক্ষা গ্রহণ, উচ্চ বেতনের চাকরি এবং স্বাস্থ্যবান সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বেশি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামান্য সহায়তায় উন্নয়নের সামাজিক ও টেকসই সুফল পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর পরবর্তী ক্লাস্টারে স্থানান্তরিত হবে। এটি এমন একটি উন্নয়নের ধারা যা আমরা আগেও দেখেছি। বাংলাদেশের সৃষ্টির গল্প শুরু হয়েছিল অনেকটা সেভাবেই। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশী কোম্পানি দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড এবং দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ু একটি যৌথ উৎপাদন চুক্তি স্বাক্ষর করে। কোরিয়ান কোম্পানিগুলো টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। তারা স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশের সস্তা শ্রমশক্তি তাদের সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাক ব্র্যান্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিধি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। ব্যবস্থাটি ছিল একটি দ্বিপাক্ষিক সফল প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের জিডিপি ১৯৮০ সালের ১৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং এটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টেক্সটাইল এবং পোশাক রফতানিকারকদের মধ্যে অন্যতম। এখন, আইএফসি পরবর্তী বড় শিল্প রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করছে। এই বিবর্তন দক্ষিণ দিকে আফ্রিকার দিকে তাকায়, যেখানে টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিল্পায়নের জন্য পরিস্থিতি পরিপক্ক। আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্টের মতো কর্মসূচি ইতোমধ্যে কেনিয়া, মিশর, ঘানা, ইথিওপিয়া, মাদাগাস্কার এবং অন্যান্য দেশে মার্কিন বাজার ও ব্যবসায় শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদান করেছে এবং টমি হিলফিগার, ইউনিক্লো, চিলড্রেনস প্লেস, কেলভিন ক্লেইন এবং ওয়ালমার্টের সরবরাহ চেইনের অংশ হয়ে উঠেছে। মরক্কোতে, যা ইউরোপ থেকে মাত্র একটি সংক্ষিপ্ত হাব, সংস্থাগুলো ইউরোপীয় বাজারে সরবরাহ করার জন্য জারার মতো ব্র্যান্ডের জন্য উৎপাদন করছে। এই ঐতিহাসিক সাপ্লাই চেইন রূপান্তরকে সমর্থন করার জন্য, আইএফসি ২০২৩ সালের জুনে একটি রোড শো স্পন্সর করেছিল যা আফ্রিকান নির্মাতাদের বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় আন্তঃআঞ্চলিক উৎপাদন অংশীদারিত্বের সুযোগগুলো সন্ধান করতে নিয়ে এসেছিল। এরই মধ্যে কিছু চুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আফ্রিকা আরও অনেক বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত যা টেকসই, স্থিতিস্থাপক এবং লাভজনক অর্থনৈতিক বিকাশকে চালিত করতে পারে এবং সম্ভবত গ্লোবাল সাউথে টাইগার অর্থনীতির একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।   
রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি : প্রধানমন্ত্রী
রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি পণ্যের বহুমুখীকরণও জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।   রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি বাড়াতে বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদনও বহুমুখী করতে হবে। সেইসঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ মনোযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কে এম শাখাওয়াত মুন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বৈঠকে বিজিএমইএ প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি ও সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। তারা বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন ও যত দ্রুত সম্ভব তা সমাধানের আশ্বাস দেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এম. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। আর বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান, সাবেক সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শিদী, শফিউল ইসলাম ও সিদ্দিকুর রহমানসহ সংগঠনের নেতারা। 
ইন্দোনেশিয়ায় পোশাক রপ্তানি বাড়াতে সহযোগিতা চাইলো বিজিএমইএ
ইন্দোনেশিয়ার বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে দেশটির কাছে সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ান রাষ্ট্রদূত হেরু হারতান্তো সুবোলোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ সহযোগিতা চান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।     তিনি বলেন, পারস্পরিকভাবে লাভজনক অংশীদারত্বের সম্ভাবনার ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশে ম্যানমেইড টেক্সটাইল খাতে ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করুন। সেদেশের বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে শিল্পের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক বলেন, পোশাকের বৈচিত্র্যকরণ, বিশেষ করে ম্যানমেইড ফাইবার ব্যবহার করে উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদনে মনোযোগ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়া থেকে সেটা আমদানি করতে পারে এ দেশ। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) এবং ইন্দোনেশিয়ান ফ্যাশন ইনস্টিটিউটের মধ্যে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রদূতকে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। যার উদ্দেশ্য হলো ফ্যাশন ডিজাইন, পণ্য উন্নয়ন, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে বিইউএফটির শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো। এ সময় পোশাক ও বস্ত্র খাতের ওপর বিশেষ জোর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেন তারা। আলোচনায় পারস্পারিক বাণিজ্য-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।  পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগানোর জন্য একসঙ্গে কাজ করে নতুন উপায় চিহ্নিত করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন দুজনই।  
গার্মেন্টস শিল্পের টেকসই উন্নয়নে কাজ করছে সার্ক ও বিমসটেক
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে চলমান গ্যাসসহ বিভিন্ন সংকট কাটিয়ে টেকসই উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে সার্ক ও বিমসটেক। সম্ভাবনাময় শিল্পের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে কাজ করবে এসব সংস্থা।  সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুরে নরবান কমটেক্স কারখানা পরিদর্শন করে এসব কথা বলেন ফেডারেল ফরেন অফিস-জার্মানি ও সার্ক এন্ড বিমসটেকের ইনচার্জ স্টিফেন হিলার লাহজালি। এ সময় কারখানার সার্বিক উৎপাদন প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে ঘুরে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।  পরিদর্শন কালে আরও উপস্থিত ছিলেন জার্মান এম্বাসির ইকোনোমিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেহরাব বিন তারেক,নরবান গ্রুপের চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক সিদ্দিকী,পরিচালক মোহাম্মদ শফিকুল আলম সুমন।  পরিদর্শন শেষে ওয়াহিদুল হক সিদ্দিকী সাংবাদিকদের তথ্য নিশ্চিত করে জানান,বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে গার্মেন্টস শিল্প  নিয়ে তারা কিভাবে সহযোগিতা করবে,কিভাবে উৎপাদন খরচ কমানো যায়-সেগুলো নিয়েও কাজ করছেন স্টিফেন হিলার লাহজালি। এছাড়া, বহির্বিশ্বের বাজারে দেশের গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য(পোশাক) ধরে রাখতে টেক্সটাইলে বহু বছরের অভিজ্ঞতায় এগিয়ে আছে,সুতরাং আগামীতে বাংলাদেশেই নেতৃত্ব দিবে।  
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে গার্মেন্টস শিল্পে দুর্ভোগের শঙ্কা
তৈরি পোশাক শিল্প দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত। এ খাতে গত বছর রপ্তানি ৪৭.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তবে সম্প্রতি তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি পণ্যের ওপর সরকারি নগদ প্রণোদনা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর ওপর এই সিদ্ধান্তের কতটা প্রভাব পড়বে—তা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সার্কুলারে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে মোট ৪৩টি খাতে রপ্তানির বিপরীতে প্রণোদনা দিয়ে থাকে সরকার। তৈরি পোশাক খাত ছাড়াও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি খাত, চামড়াজাত দ্রব্য, হাতে তৈরি পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, নানা ধরনের কৃষিপণ্য, হাল্কা প্রকৌশল পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য, হিমায়িত পণ্য, রাসায়নিক পণ্য ইত্যাদি এর আওতায় রয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে অল্প অল্প করে এই প্রণোদনা কমিয়ে আনা হবে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রপ্তানি প্রণোদনা একবারে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। সেই বিবেচনায় অল্প অল্প করে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে। আর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে তারা রপ্তানি প্রণোদনা দিতে পারে না। এটাকেই প্রণোদনা তুলে নেওয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বর্তমানে নিট, ওভেন ও সোয়েটার খাতের সব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য অতিরিক্ত ৪ শতাংশ, শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাক-এর পরিবর্তে ৩ শতাংশ, নতুন পণ্য বা বাজার সম্প্রসারণ সহায়তা হিসেবে ৩ শতাংশ, ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের জন্য অতিরিক্ত ১ শতাংশ ও তৈরি পোশাক খাতে ০.৫০ শতাংশ হারে বিশেষ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতে সব বাজারে সব পণ্যের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে ১ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যের খাতে এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ওপর। বিকল্প বাজার তৈরির সম্ভাবনাও হারানোর শঙ্কা রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যেহেতু ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে, তাই প্রণোদনা তুলে নেওয়ার বিষয়টি খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনানির্ভর কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতানির্ভর বাজারের দিকে ঝুঁকতে হবে। বড় ক্ষতির শঙ্কা উদ্যোক্তাদের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ এর জুলাই-ডিসেম্বর মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার জার্মানিতে ২০২২-২৩ জুলাই-ডিসেম্বরের তুলনায় ১৭.০৫ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ১.২৪ শতাংশ,  আমেরিকায় ৫.৬৯ শতাংশ এবং কানাডায় ৪.১৬ শতাংশ রপ্তানি কমেছে।  গার্মেন্টস মালিকদের প্রতিষ্ঠান বিজিএমইয়ের পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে রপ্তানি খাতে সবচেয়ে বেশি টানাপড়েন চলছে। রপ্তানির পরিমাণ বাড়লেও মুনাফা সেই হিসেবে বাড়ছে না। মন্দার কারণে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সবকিছুর উৎপাদন মূল্য বেড়ে গেছে। সেই হিসেবে রপ্তানির মূল্য বেড়ে গেছে। এক্সপোর্টের ভ্যালু (মূল্য) বেড়ে যাওয়া মানেই কিন্তু মালিকরা সেই টাকাটা পায় না। মালিকরা সিএম বা চুক্তি অনুযায়ী দাম পায়। এসব বিভিন্ন কারণে আয় এখন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে, সেই সঙ্গে বাজারে এখন পর্যাপ্ত অর্ডার নেই। তিনি বলেন, ভ্যালুর কারণে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। অর্ডার কিন্তু শর্টেজ, ক্যাপাসিটি কিন্তু খালি যাচ্ছে, কথা কিন্তু সত্যি। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে সব ধরনের জ্বালানির দাম কয়েক গুণ করে বেড়েছে। এমন অবস্থায় প্রণোদনাটা বাড়বে বলে তারা আশা করছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো হচ্ছে। কমিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা নীতি-নির্ধারকরা ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু আমরা আসলে দিনের শেষে যে কয়টা টাকা এক্সট্রা পেতাম, সেটা দিয়ে হয়তো লোকসানটা কিছুটা কমিয়ে আনা হতো। সেটার গ্যাপ এখন আরও বাড়বে। তাই নিশ্চিতভাবেই ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিকোণ থেকে তারা আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন। মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বর্তমানে পোশাক শিল্পে বড় কোম্পানিগুলো তাদের কারখানা বা ইউনিট বাড়াচ্ছে। বড় মাপের বিনিয়োগ হচ্ছে। কিন্তু ছোট বা মাঝারি আকারে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। নতুন এই সিদ্ধান্তের পর এ ধরনের উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার হার আগের তুলনায় আরও কমবে। নতুন বিনিয়োগের ওপর প্রভাব পড়বে, লোকসানের পরিমাণ বাড়বে, দীর্ঘমেয়াদি গার্মেন্টস বন্ধের সংখ্যাও বাড়তে পারে। বিজিএমইয়ের পরিচালক বলেন, বর্তমান প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছিল নতুন বাজার বা অপ্রচলিত বাজার। কারণ, আমেরিকা ও ইউরোপের বাজার মন্থর হয়ে গিয়েছিল। প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াতে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, ভারতে পোশাক রপ্তানি কমেছে। তিনি বলেন, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াতে নতুন বাজার গড়ে উঠেছিল। ভারতের বাজারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ভালো করছিল এবং এ কারণেই এই বাজারের প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহও বাড়ছিল। এই সার্কুলারে অপ্রচলিত বাজার থেকে প্রণোদনা বাদ দিয়ে দিয়েছে। তাতে যেটা হবে, যারা ওইখানে কনসেনট্রেট করছিল বিকল্প মার্কেটে। আমরা সবসময় বলি না, বিকল্প মার্কেট, বিকল্প প্রডাক্টে যাও, সেই ইনস্পিরেশন বা অনুপ্রেরণাটা মালিকরা এখন লুজ করে ফেলবে। তিনি মনে করেন, অপ্রচলিত বাজারে আর কোনো প্রণোদনা না থাকলে তার প্রভাব এই বাজারগুলো নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর পড়বে। পোশাক উৎপাদনকারীরা এখানে আর রপ্তানি করার উৎসাহটা পাবে না। কারণ, নতুন বাজারে রপ্তানি করলে তো একটা (নগদ প্রণোদনা) পেত। পোশাক খাত নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ অবধারিত ছিল। প্রণোদনা যেহেতু ভর্তুকির একটি অংশ, তাই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এ বিষয়ে একটি নিয়ম রয়েছে। আর তা হচ্ছে কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে ২ শতাংশের বেশি ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। সেই বিবেচনায় অধিকাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে যে হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে তা আসলে কমিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটা আসলে একটা নীতিগত বাধ্যবাধকতা। এটা মানতেই হবে।  ‘সরকারি এই সিদ্ধান্ত এই শিল্পের ওপর আসলে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না’ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমত গার্মেন্টস খাত দীর্ঘদিন ধরে এই সুবিধা পেয়ে আসছে। তাই এই প্রণোদনা যে তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে তা বলার সুযোগ নাই। কারণ, এই খাত আর প্রাথমিক অবস্থায় নেই। এই প্রণোদনা হয়তো উদ্যোক্তার মুনাফায় কিছুটা বাড়তি সুবিধা দেয়। তিনি বলেন, এই ধরনের ইনসেনটিভগুলো যদি প্রাপ্যতার যুক্তিতে ধরেন তাহলে অন্য অনেক ইমার্জিং সেক্টর রয়েছে তাদের বরঞ্চ এই ধরনের ইনসেনটিভগুলো পাবার কারণ রয়েছে, যেটা হয়তো গার্মেন্টসের নেই। সাধারণত কোনো খাত প্রাথমিক অবস্থায় থাকার সময়, প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় চ্যালেঞ্জ থাকলে বা নতুন ক্রমবর্ধমান অবস্থায় থাকলে সেসব খাতকে উৎসাহিত করার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়। সেই বিবেচনায় গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, যে উদ্দেশ্যে এই খাতকে এই প্রণোদনা দেওয়া হয়, এটি না দিলেও এই খাত সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে। তাই এই খাত থেকে এই প্রণোদনা প্রত্যাহারের যৌক্তিকতা আছে। তৈরি পোশাক খাতে এই প্রণোদনাগুলো নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংক থেকে এই প্রণোদনা আদায়ের ক্ষেত্রে এক ধরনের মধ্যস্বত্ত্বভোগী তৈরি হয়। তারা এই প্রণোদনার একটি অংশ রেখে দেয়। বাকিটা উদ্যোক্তারা পান। তবে সেটাও সময় মতো পান না, অনেক বছর পরে পান। তিনি বলেন, এখান থেকে অনুমান করা যায় যে, এই ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরণের ‘ইমপ্যাক্ট’ বা ফল পাওয়ার যুক্তি দেখানো হয়, সেটা আসলে এই খাতে খুব একটা কাজ করছে না। আর প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা ও প্রক্রিয়াগত নানা চ্যালেঞ্জ থাকার কারণে এটা যে খুব ইম্প্যাক্টফুল, তা বলা যাবে না। অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, এই প্রণোদনা যেহেতু ধাপে ধাপে প্রত্যাহার বা কমিয়ে আনা হবে, তাই এটির নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা থাকলেও সেটি এড়ানো সম্ভব। প্রণোদনা কমিয়ে আনা ২০২৪ সাল থেকে শুরু হচ্ছে এবং ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় রয়েছে। তাই এই দুই বছরে যদি একটা সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করে এগোনো যায় এবং এটি প্রত্যাহার করা হলে কী ধরনের চাপ পড়বে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাহলে চূড়ান্ত প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা পরিবর্তন আনার কথা ভাবতে পারবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি মনে করেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য যে এক শতাংশ প্রণোদনার ব্যবস্থা রয়েছে, সেটি যত পরে গিয়ে প্রত্যাহার করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে এই উদ্যোক্তারা কিছুটা সময় পান। এক্ষেত্রে সরকারের ঋণ সহায়তা, গ্রিন ফান্ডের সহায়তা এবং বিদেশি বিনিয়োগ কাজে লাগানো যেতে পারে। সূত্র : বিবিসি