• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

দর্শক সারি থেকে

পঞ্চম দিনের রোমাঞ্চ; বাজিটা হোক মাহমুদুল্লাহ!

জাফর উল্লাহ সোহেল

  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:৪৭

অফ ফর্মের একজন ব্যাটসম্যানকে বাজির ঘোড়া হয়তো কেউ করতে চাইবেন না। আমি করছি। আমার ধারণা, ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্টের পঞ্চম দিনে তুরুপের তাস হতে চলেছেন দুর্ভাগ্যের দুর্বিপাকে ঘুরপাক খাওয়া মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ। যারা তাকে চেনেন, জানেন এবং তার খেলার খোঁজ-খবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই একটু হলেও এ বাজিতে আস্থা রাখবেন।

বাংলাদেশের সবচে’ ‘কুলম্যান’ কে? কে কখনোই মাথা গরম করেন না? স্নায়ু শান্ত রাখতে কে বেশি ওস্তাদ ? এসব প্রশ্নের উত্তরে নিঃসন্দেহে বেরিয়ে আসবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নাম। ফর্ম ফিরে পেতে, কে জানে, মাহমুদুল্লাহ তো বেছে নিতে পারেন কালকের দিনটিকেই। ভারতের বিপক্ষে ভালো করার রেকর্ডও আছে তার।

ভারতের মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচের রক্ষক একা মাহমুদুল্লাহ হবেন তা কিন্তু বলছি না। তবে মিডল অর্ডারে টাইগারদের দীর্ঘদিনের আস্থার প্রতীক এ ব্যাটসম্যান যদি যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেন ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমকে। আর নতুন সেনসেশন সাব্বির আহমেদ যদি খেলতে পারেন নিজের খেলাটা, কে বলতে পারবে, কী হয় হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে ?

ধরুন সাকিব আল হাসান আর মাহমুদুল্লাহ জুটিই নির্বিঘ্নে পার করে দিলো পঞ্চম দিনের প্রথম সেশন। তাহলে কী দাঁড়ালো? হাতে ৭ উইকেট নিয়েই কিন্তু বাংলাদেশ খেলতে নামবে বাকি ২ সেশন। সেক্ষেত্রে মুশফিকুর রহিম, সাব্বির আহমেদ আর মেহেদী হাসান মিরাজের যেকোনো একজনও যদি ২ সেশন টিকে থাকতে পারেন, এই ম্যাচ বাংলাদেশ হারে না। আচ্ছা, এতো সহজ সমীকরণ না হয় বাদই দিলাম। ধরে নিই, প্রথম সেশনে ২ উইকেট খুইয়ে ফেললো বাংলাদেশ। কিন্তু ২য় সেশনটা সফলভাবে পার করে দিলেন মিডল অর্ডাররা। তাহলে কী দাঁড়াবে ? হাতে ৫ উইকেট নিয়েই কিন্তু শেষ সেশনে যাবে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে অশ্বিন আর উমেশ যাদবরা কেবল দৈত্যে পরিণত না হলেই হলো। ম্যাচ বাংলাদেশ বাঁচাবেই।

আবার এও তো হতে পারে, ড্রয়ের জন্য যে মরণপণ লড়াই, তা থেকে এসে গেলো জয়ের সুযোগ! গোল বলের বিশ্বাস কি বলুন? একদিনে সাড়ে ৩শ' রানও তো ইদানিং হয়ে যাচ্ছে! সাকিব আল হাসানের রানের ক্ষুধা যেভাবে দিনদিন বাড়ছে, মুশফিক যেভাবে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়, সাব্বির-মিরাজরা যেখানে নিজেদের সেরাটা দেখিয়ে দিতে প্রস্তুত, সেখানে স্বপ্ন দেখতেই বা বাধা কোথায়! এমনিতেই বাংলাদেশের ওপর কোনো চাপ নেই। যতো চাপ এই ম্যাচে এখন ভারতের ওপরেই। বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল এখন ভারত। বিশ্বের সেরা টেস্ট প্লেয়ারও তাদের দলেরই কয়েকজন। ব্যাটসম্যানের দিক থেকে তো এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা লাইন আপ। আর বোলিংয়ে আছে নিজেদের মাটিতে সবচেয়ে অপ্রতিরোধ্য স্পিনাররা। এই ম্যাচ থেকে জয় ছাড়া অন্যকিছুই সঠিক প্রাপ্তি হবে না ভারতের জন্য। সেই চেষ্টা তারা করবে এবং বিরক্তিকরভাবেই একের পর এক রিভিউ নিয়ে ব্যাটসম্যানদের মনোসংযোগে চিড় ধরাতে চাইবে। অল্প স্লেজিংও যে চলবে না তা বলা যায় না।

তবে টেস্ট ক্রিকেটে অন্যতম সেরা সফলতা পেতে হলে (এই ম্যাচ ড্র করাটাও টাইগারদের জন্য সেই ধরনের সফলতাই হবে) বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সবকিছুই মোকাবেলা করতে হবে ঠাণ্ডা মাথায়। পঞ্চম দিনে ভারতীয় বোলার-ফিল্ডাররাই শুধু বৈরি আচরণ করবে না, বৈরিতার চরমে পৌঁছাতে পারে উইকেটের আচরণও। টানা ৪ দিন যে পিচ একেবারে সহজ-সরল, সাদাসিধে মনে হয়েছে দু’দলের ব্যাটসম্যানদের কাছে, সেই পিচও ধারণ করতে পারে রুদ্ররূপ।

সুতরাং পঞ্চম দিনের রোমাঞ্চের অনেকটাই নির্ভর করতে পারে আবার ভাগ্যের ওপর। সেই ভাগ্যের শিকেটা টাইগারদের পক্ষেই ছিঁড়ুক না! পাকিস্তানের সঙ্গে এক উইকেটে হেরে যাওয়া স্মরণীয় সেই মুলতান টেস্ট থেকে শুরু করে হালের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট, ভাগ্য বিধাতা তো বিরূপই থাকলো মুশফিকদের প্রতি। এবার একটু চোখ তুলে তাকালে কী হয় !

লেখক- গণমাধ্যম কর্মী

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh