পান্ডিয়ার সঙ্গে তুলনায় ক্ষিপ্ত কপিল!

এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে আরেক খেলোয়াড়ের তুলনা হবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। কিংবদন্তীদের সঙ্গে তুলনা করা হলে সাধারণত যাকে তুলনা করা হয় সেই বিব্রতবোধ করে থাকে। অনেক সময় তুলনা না করার জন্য অনুরোধও করে থাকেন। এই যেমন ফুটবলে মেসির সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে দিবালার। তাই দিবালা বলেছেন তার সঙ্গে মেসির তুলনা চলে না। মেসি মেসিই। তেমনি ক্রিকেটেও অনেক সময় ভারতের গ্রেট শচীনের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে বিরাট কোহলিকে আর এতেই আপত্তি তোলে কোহলি বলেন, শচীন সর্বকালের সেরা কমপ্লিট ব্যাটসম্যান কোনও তুলনাই চলে না।

তেমনি বর্তমান সময়ে ভারতের তরুণ অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয় ভারতের সাবেক কিংবদন্তী ক্রিকেটার কপিল দেবের। এতে নারাজ সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলিও। এবার খোদ কপিলই তার সঙ্গে পান্ডিয়াকে তুলনা না করতে অনুরোধ করেছেন। বলা চলে অনেকটা তার সঙ্গে পান্ডিয়ার তুলনা করায় কপিল ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

আফ্রিকা সফরে দুটি টেস্ট ম্যাচের ব্যবধানেই পুরোপুরি বদলে গেল ভারতীয় ক্রিকেটারদের জীবন। দুই ম্যাচ আগেও যারা তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল, প্রোটিয়াদের কাছে সিরিজ হারের পর সেই মুখগুলোতে এখন সমালোচনার ঝড়। ভারতীয় ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি এবং মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়কেরা। যে তালিকায় আছেন কপিল দেব নিখাঞ্জ থেকে বিষেণ সিং বেদী।

তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছেন তরুণ পেস বোলিং অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ায়া। যাকে কিংবদন্তী অলরাউন্ডার কপিল দেবের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। সেই কপিল দেবই হার্দিকের ওপর ভীষণ চটেছেন। সেঞ্চুরিয়ানে দুই ইনিংসেই হার্দিকের দায়িত্বজ্ঞানহীন আউট হওয়া দেখে কপিল বলেছেন, হার্দিক যদি নির্বোধের মত এমন ভুল করতেই থাকে, তাহলে আর দয়া করে ওর সঙ্গে আমার তুলনা করবেন না।

প্রথম ইনিংসে অন্যমনস্ক হয়ে রানআউট হয়েছিলেন হার্দিক। দ্বিতীয় ইনিংসেও একেবারেই অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি। কপিল আরো বলেন, হার্দিকের প্রতিভা থাকতে পারে। কিন্তু ওকে মানসিকতার ওপর আরো নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। ১৯৮৬-তে ইংল্যান্ডে গিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতে আসা ভারত অধিনায়ক কপিল এবিপি নিউজের এক অনুষ্ঠানে হার্দিক সম্পর্কে এই মন্তব্য করেন।

কপিলের এই মন্তব্যকে সমর্থন করে সন্দীপ পাতিল বলেন, কপিলের সঙ্গে খেলেছি বলেই জানি, ওর সঙ্গে কারো তুলনা হয় না। ১৫ বছর ভারতের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। হার্দিক তো সবে ওর পঞ্চম টেস্ট খেলছে।

অন্যদিকে 'স্পষ্টবাদী' হিসেবে খ্যাত বিষেণ সিং বেদী কোহলিদের ওপর বেজায় খেপে গিয়ে আক্রমণাত্মক ঢংয়ে বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার আগে কোহলিরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলে শুধু সময় নষ্ট করেছে। এতে আসলে কোনো প্রস্তুতিই হয়নি, শুধু ম্যাচ জেতাই হয়েছে।

বেদীর নেতৃত্বে ১৯৭৬-এ পোর্ট অব স্পেনে স্মরণীয় টেস্টে জয় পেয়েছিল ভারত। সেই টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে চার উইকেটে ৪শ’ ৪ রান তুলে টেস্ট জেতে বেদীর দল।

সেই বেদী বুধবার সংবাদসংস্থাকে বলেন, ভারতকে একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, বরং এটা চিন্তার বিষয়। ফিল্ডিং আর ব্যাটিং আরো ভাল হওয়া উচিত ছিল। ভারতীয় দলের অগ্নিপরীক্ষা ছিল এটা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় এই বেহাল দশার পরে এই প্রাক্তন বাঁ-হাতি স্পিনারের অভিযোগ, টেস্টের একাদশ বাছাইয়ের সময় ওয়ান ডের পারফরম্যান্সকে গুরুত্ব দিলে এমনই হওয়ার কথা। আজিঙ্কা রাহানের জায়গায় রোহিত শর্মাকে প্রথম এগারোয় রাখার প্রসঙ্গ তুলে বেদী বলেন, দল বাছাই তো আর আমার কাজ নয়। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, দলে যার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আছে, সেই ভাইস ক্যাপ্টেন খেলতে পারছে না, এটা মেনে নেয়া যাচ্ছে না। রাহানেকে যদি নাই খেলানোই হবে, তা হলে ওকে সহ-অধিনায়ক করা হল কেন? ওয়ান ডের ফর্ম দেখে তো টেস্ট দল তৈরি করা যায় না। টেস্ট ম্যাচ যে অন্য খেলা, তা তো এই সিরিজেই ফের প্রমাণিত হল।

১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডে গিয়ে সিরিজ জিতে আসা ভারতীয় অধিনায়ক অজিত ওয়াদেকর বলেন, আমাদের ছেলেরা ওদের দেশে গিয়ে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পায়নি। এতেই হয়তো গণ্ডগোলটা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ শুরুর আগে ভারত কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে চায়নি। এই ভুল থেকে ভবিষ্যতে শিক্ষা নেয়া উচিত বলে মনে করেন ওয়াদেকর।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষা তো নেয়া উচিতই। কিন্তু আমাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ডে কেউ ভুল থেকে শিখতেই জানে না।

এএ