• ঢাকা বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভোটের হাওয়া

দুই দলই দখলে রাখতে চায় ঝিনাইদহ

শিপলু জামান

  ১৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৫৪

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহে ৪টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছিল তিনটিতে। অন্যটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করলেও তিনিও এখন আওয়ামী লীগে। এ অবস্থায় পুরো ঝিনাইদহ জুড়ে আওয়ামী লীগের যেন দোর্দণ্ড প্রতাপ। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝিনাইদহে ৪টি সংসদীয় আসনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সবকটি আসনই ফের দখল রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।

তবে বিএনপি প্রার্থীদের সঙ্গে তীব্র লড়াই করেই জিততে হবে তাদের। এরই মধ্যে উভয়দলের প্রার্থীরা মাঠে তৎপরতা-প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছেন।

ঝিনাইদহে ৪টি আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ১৫জন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই, শৈলকূপা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক নায়েব আলী জোয়ারদার, দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কামরুজ্জামানের মেয়ে ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কল্পনা আক্তার ও প্রিয়াঙ্কা গ্রুপের মালিক সাইদুর রহমান।

ঝিনাইদহ-২ (হরিনাকুন্ডু ও সদরের কিছু অংশ) আসনে নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে ও সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম অপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু।

ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর) আসনে বর্তমান এমপি নবী নেওয়াজ, সাবেক এমপি শফিকুল আজম খান চঞ্চল, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা চৌধুরী ও মায়া তালুকদার।

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের বাকি অংশ) আসনে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান, কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু।

এদিকে জেলার এই চার আসনের বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওহাব (বর্তমানে তিনি দুদকের মামলায় জেলে রয়েছেন), খুলনা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু ও বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান। ঝিনাইদহ-২(হরিনাকুন্ডু ও সদরের কিছু অংশ) আসনে বিএনপির একক প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমান। তবে বর্তমানে তিনি দুদকের মামলায় জেলে রয়েছেন। ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর) আসনে কোটচাঁদপুর থানা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল ও মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান মোমিন। বিএনপির সাবকে এমপি শহীদুল ইসলাম মাস্টাররে ছেলে রনি।

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের বাকি অংশ) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টু ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাবেক প্যানেল মেয়র হামিদুল ইসলাম হামিদ।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ লিফলেট, পোস্টার বিতরণ, উঠান বৈঠকসহ নানাভাবে চলছে প্রচারণা কার্যক্রম।

সবচেয়ে বেশি আলোচিত আসন হচ্ছে ঝিনাইদহ-২। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগে সদ্য যোগ দেয়া মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির। তার বিপরীতে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মশিউর রহমান। কার্যত এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তরুণ তাহজীবের সঙ্গে প্রবীণ মসিউরের।

এই আসনটিতে নবম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপির দখলে থাকলেও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মসিউর রহমানকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু প্রথমবারের মতো পরাজিত করেন। তবে সফিকুল ইসলাম অপু গেলো সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমিরের কাছে পরাজিত হন। তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে তিনি এলাকার সাধারণ মানুষকে নানা সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। সেইসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এক প্লাটফর্মে রাখার চেষ্টাও করে যাচ্ছেন। তবে থেমে নেই সফিকুল ইসলাম অপু। নির্বাচনী এলাকায় তারও সৎ রাজনীতিক হিসেবে সুনাম রয়েছে।
দলের প্রতীক পেতে অপুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান দলকে শক্তিশালী সুসংগঠিত করার লক্ষে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন।

আগামী সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ আসন থেকে বরাবর শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই এমপি। তার রয়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক। এছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধে দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের মেয়ে ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কল্পনা আক্তার ও প্রিয়াঙ্কা গ্রুপের মালিক সাইদুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।

অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন তরুণ নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্তু কুমার কুণ্ডু। তিনি এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন থানা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি আবদুল ওহাব ও কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধের জন্য লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন নবী নেওয়াজ এমপি। দলীয় টিকিট পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন সাবেক এমপি শফিকুল আজম খান চঞ্চল, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা চৌধুরী, সাবেক এমপি মায়া তালুকদার, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ ও মিল্লাতুজ্জামান মিল্লাত।

অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন কয়েকজন। তারা হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, কোটচাঁদপুর থানা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক এমপি মরহুম শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মেহেদি হাসান রনি ও মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান মোমিন। সবাই নিজেদের মতো করে গণসংযোগ চালানোর পাশাপাশি কেন্দ্রে লবিং করছেন।

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের বাকি অংশ) আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী কালীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি আ. মান্নান ও কালীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতির নামও শোনা যাচ্ছে।

অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টু ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। এছাড়া থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হামিদুর রহমান হামিদ ও সাবেক পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমানও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ঝিনাইদহের মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর বিএনপির সাবেক এমপি জনাব শহিদুল ইসলাম মাষ্টার ২০১৬ সালে মৃত্যুবরণ করার পর নেতৃত্ববিহীন হয়ে পড়েন ঝিনাইদহ-৩ আসনের বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপির সাবেক এই এমপির মৃত্যুর পর আগামী দিনে কে নেতৃত্বে আসতে পারে এই নিয়ে শুরু হয় জল্পনা কল্পনা। সম্প্রতি বিএনপির একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আগেভাগেই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। সেখানে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, কোটচাঁদপুর থানা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস কাজল ও মহেশপুর উপজেলা বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান মোমিন ও শহীদুল ইসলাম মাস্টার ছেলে মেহেদী হাসান রনির নাম ঠাঁই পেয়েছে।

তবে শহিদুল ইসলাম মাষ্টার মৃত্যুবরণ করার পর থেকে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নেতাকর্মীরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়া, দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়া এবং বিভিন্ন সময়ে হামলা মামলার শিকার নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়া দলটির পাশে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়া বেশির ভাগ নেতাদের অবস্থান ছিল নড়বড়ে।

মহেশপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জোরদার আন্দোলন করার এখনই সঠিক সময়।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঝিনাইদহ-১ আসনে উপনির্বাচনের বাধা কাটলো
ভোটার ৩২১৩, প্রথম ১ ঘণ্টায় ভোট পড়েনি ১টিও
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত
হরিণাকুন্ডুতে পাখিদের জন্য গাছে গাছে পানির পাত্র
X
Fresh