খোঁজ, নতুন ক্যালেন্ডার
আসছে নতুন বছর ২০১৭। আর এ নতুন বছরকে সামনে রেখে ক্যালেন্ডার কেনার ধুম পড়েছে নগরীতে।
এখন মানুষের মুঠোফোনে ক্যালেন্ডার থাকলেও পাতার ক্যালেন্ডারের আবেদন ঠিক আগের মতোই রয়েছে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকার সামনে নতুন বছরের ক্যালেন্ডার কিনছেন মানুষজন।
প্রকৃতি, মনোরম জায়গা, ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, ফল-ফুল কিংবা হাতে আঁকা বিভিন্ন দামের এসব ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করছেন মানুষ।
এ ক্যালেন্ডারেই হয়তো কলমে আচড়ে বছরজুড়ে স্থান পাবে জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
বিভিন্ন ধরনের ক্যালেন্ডারের মধ্যে দেয়াল ক্যালেন্ডারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি জানালেন বিক্রেতারা।
এসব ক্যালেন্ডার কিনে ক্রেতারা যেমন খুশি অন্যদিকে বাড়তি আয়ে বিক্রেতারাও আনন্দিত।
এইচএম/ এম
মন্তব্য করুন
ইতিহাসে আজকের এই দিনে (৯ এপ্রিল)
ঘটে যাওয়া আজকের এই দিনের ঘটনা, অনেক আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যু আমরা জানতে চাই। পাঠকের এ চাওয়া মাথায় রেখে নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’।
আজ মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০২৪। ২৬ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা।
ঘটনাবলী :
১২৪১ - লিইয়েগনিটয যুদ্ধে মোঙ্গল বাহিনীর পোলিশ এবং জার্মান সৈন্যদের পরাজিত করে।
১৪১৩ - পঞ্চম হেনরি ইংল্যান্ডের রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন।
১৪৪০ - ক্রিস্টোফার ডেনমার্কের রাজা হন।
১৪৮৩ - প্রথম এডওয়ার্ড চতুর্থ এডওয়ার্ডকে ইংল্যান্ডের পরবর্তী রাজা হিসেবে নির্বাচিত করেন।
১৬০৯ - আশি বছরের যুদ্ধ স্পেন এবং ডাচ প্রজাতন্ত্র এন্টওয়ার্প এর চুক্তি স্বাক্ষর মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির শুরু করে।
১৭৮৩ - টিপু সুলতান বৃটিশদের কাছ থেকে বেন্দোর দখল করে নেয়।
১৭৫৬ - নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা বা মির্জা মুহাম্মাদ সিরাজ-উদ-দৌলা রাজ্যভার গ্রহণ করেন।
১৮৭২ - স্যামুয়েল আর পার্সি গুঁড়ো দুধ প্যাটেন্ট করে।
১৯১৮ - লাটভিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৯২৮ - তুরস্কে ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৪০ - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ‘অপারেশন ওয়েসেরুবুং’ জার্মানিরা ডেনমার্ক ও নরওয়ে আক্রমণ করে।
১৯৪৫ - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আণবিক শক্তি কমিশন গঠন করা হয়।
১৯৪৮ - বায়তুল মোকাদ্দাসারের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত দিরইয়াসিন গ্রামে ইহুদীবাদী ইসরাইলীরা ব্যাপক গণহত্যা চালায়।
১৯৫৭ - সুয়েজখাল সব ধরনের জাহাজ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়।
১৯৬৫ - ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত যুদ্ধ শুরু হয়।
১৯৭৪ - দিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীকে প্রত্যর্পণের চুক্তি সাক্ষরিত হয়।
১৯৯১ - জর্জিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পক্ষে ভোট দেয়।
১৯৯৭ - বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আই সি সি ট্রফিতে স্কটল্যান্ডকে পরাজিত করে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
১৯৯৮ - সৌদি আরবে হজ্বের শেষ দিনে ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে ১৫০ জন মুসল্লি নিহত।
জন্ম :
১২৮৭ - ইংল্যান্ডের রাজা চতুর্থ এডওয়ার্ড জন্মগ্রহণ করেন।
১৮০৬ - ইসাম্বারড কিংডম ব্রুনেল, তিনি ছিলেন ইংরেজ প্রকৌশলী ও ক্লিফটন সাসপেনশন ব্রিজ পরিকল্পক।
১৮২১ - ফরাসী কবি শার্ল বোদলেয়ার জন্ম গ্রহণ করেন।
১৮৩০ - এয়াড্বেয়ারড মুয়ব্রিডগে, তিনি ছিলেন ইংরেজ ফটোগ্রাফার ও সিনেমাটোগ্রাফার।
১৮৩৫ - বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপল্ড জন্ম গ্রহণ করেন।
১৮৬৫ - এরিক লুডেন্ডোরফ, তিনি ছিলেন জার্মান জেনারেল ও রাজনীতিবিদ।
১৮৬৭ - ক্রিস ওয়াটসন, তিনি ছিলেন চিলির বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ ও ৩য় প্রধানমন্ত্রী।
১৮৭২ - লিও বলুম, তিনি ছিলেন ফরাসি আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও প্রধানমন্ত্রী।
১৮৯৩ - ঐতিহাসিক ও লেখক রাহুল সাংকৃত্যায়ন জন্ম গ্রহণ করেন।
১৯০১ - পল উইলিয়ামস, তিনি ছিলেন আমেরিকান অভিনেতা ও পরিচালক।
১৯২৫ - শিশু সংগঠক ও সাংবাদিক রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই জন্ম গ্রহণ করেন।
১৯২৬ - হিউ হেফ্নার, তিনি ছিলেন মার্কিন প্রকাশক ও প্লেবয় পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক।
১৯৩৮ - ভিক্টর চেরনোম্যরডিন, তিনি ছিলেন রাশিয়ান ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও ৩০ তম প্রধানমন্ত্রী।
১৯৪৮ - জয়া বচ্চন, তিনি ভারতীয় অভিনেত্রী ও রাজনীতিবিদ।
১৯৫৭ - সেভে বালেস্টেরস, তিনি ছিলেন স্প্যানিশ গল্ফ খেলোয়াড় ও স্থপতি।
১৯৬৬ - সিনথিয়া নিক্সন, তিনি ছিলেন আমেরিকান অভিনেত্রী।
১৯৭৫ - রবি ফাওলার, তিনি সাবেক ইংরেজ ফুটবল খেলোয়াড় ও ম্যানেজার।
১৯৮৫ - আন্তোনিও নকেরিনো, তিনি ইতালিয়ান ফুটবলার।
মৃত্যু :
০৫৮৫ - সম্রাট জিমু, তিনি ছিলেন জাপানি সম্রাট।
০৪৯১ - যেনো, তিনি ছিলেন বাইজেন্টাইন সম্রাট।
১৫৫৩ - ফ্রাঁসোয়া রাবলে, তিনি ছিলেন ফরাসি সন্ন্যাসী ও পণ্ডিত।
১৫৫৭ - মিকায়েল আগ্রিকলা, তিনি ছিলেন ফিনিশ যাজক ও পণ্ডিত।
১৬২৬ - ফ্রান্সিস বেকন, তিনি ছিলেন ইংরেজ দার্শনিক।
১৭৫৪ - ক্রিস্টিয়ান উলফের, তিনি ছিলেন জার্মান দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ।
১৭৫৬ - নবাব আলীবর্দী খাঁ, তিনি ছিলেন বাংলা, বিহার, ওড়িশার নবাব।
১৮৮২ - ডান্টে গ্যাব্রিয়েল রসেটি, তিনি ছিলেন ইংরেজ চিত্রশিল্পী, চিত্রকর ও কবি।
১৮৮৯ - মাইকেল ইউজিনে শেভরেউল, তিনি ছিলেন ফরাসি রসায়নবিদ ও শিক্ষাবিদ।
১৯৩৬ - ফেরডিনান্ড টনিয়েস, তিনি ছিলেন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিক।
১৯৪৫ - ডিয়েট্রিখ বোনহোফের, তিনি ছিলেন জার্মান যাজক ও ধর্মতত্ত্ববিদ।
১৯৪৫ - উইলহেম কানারিস, তিনি ছিলেন জার্মান নৌসেনাপতি।
১৯৫৯ - ফ্র্যাংক লয়েড রাইট, তিনি ছিলেন আমেরিকান আমেরিকান স্থপতি, ইন্টেরিওর ডিজাইনার লেখক ও শিক্ষক।
১৯৮০ - মোহাম্মদ বাকির আল-সাদর, তিনি ছিলেন ইরাকি দার্শনিক।
১৯৯৩ - ইরানের বিখ্যাত শিল্পী ও লেখক সাইয়্যেদ মোর্তজা আয়ুবী শাহাদাত বরণ করেন।
২০০১ - শাকুর রানা, তিনি ছিলেন পাকিস্তানি আম্পায়ার।
২০১১ - সিডনি লুমেট, তিনি ছিলেন আমেরিকান পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার।
বাংলা সন যেভাবে এলো
‘জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক, মুছে যাক গ্লানি... এসো হে বৈশাখ এসো এসো...।’ বাঙালির জাতীয় উৎসব, বাংলা নববর্ষ।
বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ ঠিক কীভাবে ও কখন প্রচলিত হয়েছিল, তা এখনও একেবারে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। তবে নানান পরোক্ষ প্রমাণে এবং গবেষণায় মনে করা হয়, সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেছিলেন।
এক সময় নববর্ষ পালিত হতো ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। কৃষিকাজ ঋতুনির্ভর হওয়ায় এ উৎসবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির। তাই কৃষক সমাজের সঙ্গে বাংলা সন এবং নববর্ষের একটি আত্মিক সম্পর্ক গ্রথিত হয়ে আছে ঐতিহাসিকভাবে। কেননা, বাংলা সনের উৎপত্তি হয় কৃষিকে উপলক্ষ করেই।
অনেক গবেষকের মতে, ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনাও হয় আকবরের সময় হতে। বাংলা বর্ষপঞ্জিটি প্রথমে তারিখ-ই-এলাহী বা ফসলি সন নামে পরিচিত ছিল। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ অথবা ১১ মার্চ এটি বঙ্গাব্দ নামে প্রচলিত হয়। আকবরের রাজত্বের ঊনত্রিশতম বর্ষ, অর্থাৎ ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সন প্রবর্তিত হলেও তা গণনা করা হয় ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর থেকে। কারণ, এদিন আকবর দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে হিমুকে পরাজিত করে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
আকবরের বিজয়কে মহিমান্বিত করে রাখার লক্ষ্যে সিংহাসনে আরোহণের দিন থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হলেও কৃষি কাজের সুবিধার্থে এবং কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে সুবিধার জন্যই মূলত সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন।
হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়। বাংলা সন প্রবর্তনের আগে মুঘল সম্রাটরা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে হিজরি বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করতেন। বাংলা সন প্রচলিত হওয়ার পর থেকে মুঘলরা জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত পয়লা বৈশাখ পালন করতেন। কৃষকরাও নববর্ষ পালন করতেন যথেষ্ট আড়ম্বর। সে সময়ে বাংলার কৃষকরা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূস্বামীদের খাজনা পরিশোধ করতেন। পরদিন নববর্ষে ভূস্বামীদের তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষে তখন মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো।
বাংলা সনের জন্মলগ্ন থেকে নববর্ষের উৎসব বাংলার গ্রামীণ জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ এবং কৃষকদের কাছে দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় খাজনার দায় পরিশোধের বিষয়টি না থাকলেও সামর্থ্য মতো সারা বছরের ধার-দেনা পরিশোধ করে নতুন বছরে নতুন জীবন শুরু করার অভিপ্রায় সব কৃষকের মনেই থাকে। তেমনি এক দায়মুক্ত মানসিক প্রশান্তিতে কৃষকরা নববর্ষে বাড়িঘর পরিষ্কার রাখে, কৃষি ও ব্যবহার্যসামগ্রী ধোয়ামোছা করে এবং সকালে স্নানাদি সেরে পুতপবিত্র হয়। এ দিনটিতে ভালো খাওয়া, থাকা ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে পারাকে তারা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে করেন। এদিন ঘরে ঘরে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের আগমন ঘটে। মিষ্টি, পিঠা পায়েসসহ নানারকম লোকজ খাবার তৈরি করারও ধুম পড়ে যায়। একে অন্যের সাথে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় চলে।
এ ছাড়াও নববর্ষকে আরো উৎসবমুখী করে তোলে বৈশাখী মেলা। সার্বজনীন লোকজ এ মেলা অত্যন্ত আনন্দঘন ও উৎসবমুখর আমেজে উদযাপিত হয় দেশের বিভিন্ন গ্রাম-পল্লীতে। অবশ্য শহরাঞ্চলে এ মেলা বসে নগর সংস্কৃতির আদলে, ভিন্ন আমেজে।
তবে দেশের তিন পার্বত্য জেলা— রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে নববর্ষ উদযাপিত হয় ভিন্ন আঙ্গিকে। বাংলা বছরের শেষ দুদিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন। এ তিন দিন মিলেই বর্ষবরণ উৎসব পালিত হয় এ তিন জেলায়। উপজাতিদের কাছে ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব। প্রতিবছর আনন্দমুখর পরিবেশে পালিত এ উৎসবকে ত্রিপুরাতে বৈসুক, মারমার জনগণ সাংগ্রাই এবং চাকমা জনসাধারণ বিজু নামে আখ্যা দিলেও ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে সমগ্র পার্বত্য এলাকায় ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিত। বেসুক, সাংগ্রাই ও বিজু— এই নামগুলোর আদ্যাক্ষর নিয়েই ‘বৈসাবি’ শব্দের উৎপত্তি। বছরের শেষ দুদিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন, এ তিনদিন মিলেই মূলত বর্ষবরণ উৎসব ‘বৈসাবি’ পালিত হয়। পুরনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে জুমিয়া কৃষকসহ আপামর পাহাড়ি সম্প্রদায় সেই আদিকাল থেকে তিন দিনব্যাপী এ বর্ষবরণ উৎসব পালন করে আসছেন।
বাংলা নববর্ষে পান্তা-ইলিশের একাল-সেকাল
দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে আসছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটিকে বরণ করবেন বাঙালিরা। বাংলাদেশে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে পান্তা উৎসবের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার সংস্কৃতি চালু ও পরিব্যাপ্ত হয়েছে।
পান্তাভাত হলো পানিতে ভেজানো বাসি ভাত। প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলে পান্তাভাত খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। কাঁচামরিচ-পেঁয়াজ দিয়েই লোকে পান্তা খেয়ে উঠত। অনেক সময় মানুষ পান্তা খেত শুধু লবণ মাখিয়ে। আগের রাতে ভিজিয়ে রাখা ভাত সাধারণত পরদিন সকালে পান্তাভাত হিসেবে খাওয়া হতো। এই পান্তা খাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের সানকি বা মাটির পাত্র ছিল না। তারা মাটির হাঁড়ি থেকে পান্তাভাত তুলে নিয়ে কচুপাতায় বা কলাপাতায় করে খেত।
আসলে, গরমে-রোদে কাজ করার জন্য কৃষকের উপযোগী খাদ্য ছিল এই পানিভাত। সূর্য ওঠার পরপরই পান্তাভাত খেয়ে তারা কাজে বের হতো। এরসঙ্গে কখনো কখনো যোগ হতো একটু বেগুনপোড়া বা আলুসেদ্ধ। খুব কম সময়েই পান্তাভাতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাছের তরকারি। মাছ বলতেও সেসব মাছ, যেগুলো সাধারণত খালে-বিলে সহজে পাওয়া যেত। যেমন— কুচো চিংড়ি, ছোট ট্যাংরা, পুঁটি, টাকি এগুলো।
সাধারণ মানুষের খাবার ছিল পান্তাভাত। তবে বিত্তবানরা যে একেবারেই পান্তাভাত খেতে না, তা নয়। বাঙালি বড়লোক বন্ধু কৃষ্ণকান্ত নন্দীর বাড়িতে গিয়ে ভারতের প্রথম বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংস পান্তাভাত আর কুচো চিংড়ি খেয়েছিলেন। আবার জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছেলেবেলায় পান্তাভাত খাওয়ার কথা লিখেছেন, ‘বৌঠাকরুন রাঁধতে পারতেন ভালো, খাওয়াতে ভালোবাসতেন, এই খাওয়াবার শখ মেটাতে আমাকে হাজির পেতেন। ইস্কুল থেকে ফিরে এলেই তৈরি থাকত তার আপন হাতের প্রসাদ। চিংড়ি মাছের চচ্চ্ড়ির সঙ্গে পানতা ভাত যেদিন মেখে দিতেন অল্প একটু লঙ্কার আভাস দিয়ে, সেদিন আর কথা ছিল না।’
দেখা যাচ্ছে, পান্তাভাতের সঙ্গে চিংড়ি যোগ হচ্ছে পদ হিসেবে। চিংড়ির মতো সহজে লভ্য অন্য মাছও পান্তাভাতের অনুষঙ্গ হয়েছে। কিন্তু পান্তাভাতের সঙ্গে ইলিশের প্রসঙ্গ পাওয়া যায় না। ইলিশ ছিল দামি মাছ। ইলিশ যদি খেতেই হয়, তবে গরম ভাতেই খাওয়ার চল ছিল। সাধারণের পাতে সহজে ইলিশ উঠত না। তবে পান্তাভাতের সঙ্গে ইলিশ খাওয়ার কোনো রীতি সাহিত্য কিংবা ইতিহাসে নেই।
আশির দশকে ঢাকায় পান্তাভাতে ইলিশ খাওয়ার চলটি তৈরি হয়েছে। এটি সারা দেশে জনপ্রিয় হতেও দেরি হয়নি। বাংলা বর্ষবরণের নাগরিক রুচিতে এখন ভর করেছে পান্তা-ইলিশ। উৎসবে মানুষ এক হতে চায়; শহরের মানুষও নতুন বছরের প্রথম দিনে এক হয়। ‘বৈশাখী মেলা’ নতুন বছরের মিলনের প্রধান উৎসব। ষাটের দশকে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে বাঙালি এক হয়েছে রবীন্দ্রসংগীতের সূত্রে নববর্ষ উদ্যাপনে। এরপর আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় মঙ্গল শোভাযাত্রার সূত্রে নগর মানুষ এক হয়েছে। এসব আয়োজন-অনুষ্ঠান যতই জনপ্রিয় হতে থাকে, ততই নাগরিক মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে রমনা-শাহবাগ এলাকায়।
আশির দশকের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সুযোগটি গ্রহণ করেন। তারা নিজেদের আগ্রহে অস্থায়ী দোকান দিয়ে পান্তাভাত আর ভাজা ইলিশ বিক্রি শুরু করেন। পান্তাভাত হাজার বছরের বাঙালির প্রাত্যহিক খাদ্য, আর ইলিশ মূলত বঙ্গ-উপকূলের মাছ—এই ধারণা জাতীয়তাবাদী চেতনার সঙ্গে যুক্ত করে তারা পান্তা আর ইলিশকে জনপ্রিয় করেছেন। যদিও একত্রভাবে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ঐতিহ্যিক কোনো সূত্র নেই। পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশের সঙ্গে কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ তো থাকেই, আরও থাকে আলুভর্তা, শুটকিভর্তা, বেগুনভর্তা ও পোড়া মরিচ। এসব খাবার পরিবেশনে ব্যবহার করা হয় ঐতিহ্যবাহী মাটির সানকি।
পহেলা বৈশাখের সঙ্গে ইলিশ মাছের আসলেই কোনও সম্পর্কের বিষয়টি কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে এখন সেই ভুল ভেঙেছে। এখন আর পহেলা বৈশাখ মানে পান্তা-ইলিশে সীমাবদ্ধ নয়।
তবে শহরের মানুষ যা নিয়েই মত্ত থাকুক না কেন, গ্রামের সাধারণ মানুষ নতুন বছরের প্রথম দিনে সাধ্যমতো ভালো খাওয়ার চেষ্টা করে। এদিন সকালে তারা মিষ্টি খেয়ে দিন শুরু করে। মজার ব্যাপার হলো, আগের রাতের খাবারে তারা তিতাজাতীয় কোনো পদ রাখে। এই তিতা খাবারটি তাদের কাছে পুরোনো বছরের দুঃখ-বেদনাকে বিসর্জন দেওয়ার প্রতীক।
সমুদ্রের রোমাঞ্চকর গল্প বলেন তারা, শোনান গান
নিঃসীম সমুদ্রে ভেসে চলা নাবিকদের জীবন সমুদ্রের মতোই বৈচিত্রময়। বিশাল বিশাল ফণা তোলা সব ঢেউ। মাঝসমুদ্রে থাকা জাহাজের গায়ে মুহুর্মুহু আছড়ে পড়ে একেকটা ঢেউ। মুহূর্তেই বাষ্পের মতো ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে সমুদ্রের নোনা পানি। ভয়ংকর গর্জনে সমুদ্র তার খ্যাপাটে ভাবের জানান দেয়। এই গর্জনে গায়ে কাটা দেয়। কখনো আবার সমুদ্র থাকে শান্ত। পাটি বিছানো নীল সমুদ্রের দিগন্তরেখায় হেসে ওঠে রংধনু। সমুদ্রের এমন সব বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ মানুষের সামনে তুলে ধরেন দুই নাবিক আবদুল্লাহিল মারুফ ও মোহাম্মদ রেদওয়ান সরকার।
সেইল উইথ মারুফ :
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সেইল উইথ মারুফ’ নামে পরিচিত আব্দুল্লাহিল মারুফ। পেশায় একজন নাবিক। সমুদ্রগামী জাহাজে বসে অবসরে তিনি ভ্লগ করেন। ভ্লগিংয়ের মাধ্যমে এই তরুণ তুলে ধরেন সমুদ্র, সমুদ্রযাত্রা, সমুদ্রচারী জীবনের নানা দিক। দারুণ গানও করেন মারুফ। জাহাজে বসে তার করা গানে মুগ্ধ হন নেটিজেনরা। তার গান, ভ্লগ লাখো দর্শক দেখেন। তারা তাকে প্রশংসায় ভাসান।
মারুফের শৈশব-কৈশোর কেটেছে জন্মস্থান রাজশাহীতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনি ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগে। কিন্তু ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে থেকে সেই যাত্রা আর দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এরপর ভর্তি হন দেশের একটি বেসরকারি মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে সামুদ্রিক প্রকৌশলবিদ্যার প্রাথমিক দীক্ষা নিয়ে যোগ দেন জাহাজের শিক্ষানবিশ কর্মী হিসাবে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লিভারপুল জন মুর্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন উচ্চতর প্রফেশনাল ডিগ্রি। বর্তমানে তিনি হংকং ভিত্তিক একটি কোম্পানির তেলবাহী জাহাজের সেকেন্ড অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন।
নাবিক হিসেবে এখন পর্যন্ত ২৫টির বেশি দেশে গেছেন মারুফ। সমুদ্রযাত্রা করেছেন প্রায় ৪০টি। ২০২১ সালের আগস্টে চীন থেকে ভেনেজুয়েলা যাওয়ার পথে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে বড় ঝড়ের কবলে পড়েছিল মারুফের জাহাজ। কী মনে করে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের ভিডিও ধারণ করেন তিনি। নিজের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি প্রকাশ করেন। হাজারো মানুষ ভিডিওটি দেখেন।
তারা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকে সমুদ্রযাত্রার নানা গল্প জানার আগ্রহ দেখান। এই ঘটনার পরই সমুদ্রযাত্রা নিয়ে ভ্লগ করার ভাবনা মাথায় আসে মারুফের। তিনি বলেন, ‘আমার ভ্লগিংয়ের উদ্দেশ্য হলো, সমুদ্রযাত্রার অজানা দিকগুলো বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে খুব সাধারণভাবে তুলে ধরা।’
‘সেইল উইথ মারুফ’ নামের ফেসবুক পেজে এখন পর্যন্ত ৪০টির মতো ভিডিও আপলোড করেছেন এই নাবিক। এসব ভিডিওতে সমুদ্র, ঝড়ঝঞ্ঝা, ঢেউ, সমুদ্রযাত্রা, বন্দর, জাহাজের অভ্যন্তরীণ নানা কারিগরি বিষয়, জাহাজ পরিচালনা, নাবিকদের কাজ, খাওয়াদাওয়াসহ হরেক কৌতূহলোদ্দীপক বিবরণ রয়েছে।
মারুফ বলেন, শখের বশেই তার প্রফেশনাল জীবনকে নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা। সাধারণ মানুষের পক্ষে সামুদ্রিক জাহাজের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকৌশল সম্পর্কে জানা সম্ভব হয় না। তাই এমন কনটেন্টের আগ্রহ বেশি।
অবসরে আরেকটা কাজ করেন মারুফ। তিনি জাহাজে বসে হাতে তুলে নেন ইউকেলেলে। দরদভরা কণ্ঠে তোলেন সুর। গেয়ে ওঠেন, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘আহারে জীবন’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তব’, ‘দিন যায়, কথা থাকে’, ‘ওকি একবার আসিয়া সোনার চান্দ মোর যাও দেখিয়া রে’, ‘কি নামে ডেকে বলব তোমাকে’, ‘প্রেমে পড়া বারণ’, ‘যদি হিমালয় হয়ে’ এমন সব গান।
হিন্দি গানেও সমান পারদর্শী তিনি। মারুফ অধিকাংশ গান জাহাজের ব্রিজে বসে করেন। সেখান থেকে সহজেই সমুদ্র দেখা যায়। তার গান সমুদ্রের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ভীষণ ভালোবাসা মারুফের। তবে গানের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা তার নেই। শুনে শুনে গান রপ্ত করেছেন তিনি। মারুফ বলেন, পরিবার থেকে বহু দূরে, সমুদ্রচারী জীবনের নানা বাঁকে গানই আমাকে উজ্জীবিত রাখে।
হৃদয় দ্য সেইলর :
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোহাম্মদ রেদওয়ান সরকারের পরিচয় ‘হৃদয় দ্য সেইলর’। সমুদ্রজীবনের নানা বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করেন এই নাবিক। হৃদয় কাজ করছেন জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। জাহাজে আসার আগে স্যোশাল মিডিয়ায় টেক ভিডিও কনটেন্ট বানানোর নেশা ছিলো হৃদয়ের। নীল সমুদ্রের স্নিগ্ধ জলে এসেও সে নেশা আর কাটেনি। এখন ভিডিও বানান জাহাজের নাবিক জীবন নিয়ে। নাবিকরা কীভাবে ঘুমান, ইঞ্জিন রুম-ব্রিজে কী কাজ চলে, জাহাজে কেউ মারা গেলে কী করা হয়, জলদস্যু এলে কী করা হয় —এমন সব চমকপ্রদ ঘটনা তার কনটেন্টের বিষয়বস্তু। যা সাধারণ মানুষের কাছে খুবই আগ্রহের।
ফেসবুক আর টিকটকে হৃদয়ের অনুসারীর সংখ্যা সাত লাখের অধিক। ইউটিউব চ্যানেল যেমন (৭ মার্চ পর্যন্ত) ১৩৮টি ভিডিও তুলেছি। আমার এই চ্যানেলে যুক্ত আছেন ১ লাখ ৭১ হাজার সাবস্ক্রাইবার। আর ভিডিওগুলো দেখা হয়েছে ১ কোটি ৮৮ লাখের বেশিবার। দর্শকরা কমেন্ট বক্সে জানতে চান জাহাজের অভ্যন্তরীণ খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে। হৃদয় চেষ্টা করেন সেগুলোকে পরিবর্তী ভিডিওতে যুক্ত করার।
মোহাম্মদ রেদওয়ান বলেন, বেশ কয়েক বছর হলো ইউটিউবে আমার আনাগোনা। তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগ্রহ থাকায় এটা নিয়ে ভিডিও বানাতাম। সেগুলো শেয়ারও করতাম। কিন্তু সেটি ছিল অনিয়মিত। তবে কাজটা করতে আমার আনন্দই লাগে। সেই আনন্দই এবার নতুন মাত্রা পায়। ইউটিউবে আমার চ্যানেল ‘হৃদয় দ্য সেইলর’-এ আপলোড করতে থাকি। এখন ‘হৃদয় দ্য সেইলর’ নামেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে পেজ ও চ্যানেল আছে। একই ভিডিও সব মাধ্যমেই শেয়ার করি।
মোহাম্মদ রেদওয়ান সরকারের জন্ম, বেড়ে উঠা কুড়িগ্রামে। কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোন হৃদয়। এরপর উচ্চশিক্ষার ভর্তিযুদ্ধে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও আগ্রহের জায়গা থেকে ভর্তি হন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে। এরপর একাডেমিক এবং শিক্ষানবিস পর্ব শেষ করে ২০২২ সালে জাহাজের পেশাদার জগতে ঢুকে পড়েন।
হিট স্ট্রোক কেন হয়, প্রতিরোধে যা করবেন
দেশের সবচেয়ে তাপপ্রবাহের মাস এপ্রিল শুরু হয়েছে। প্রতিদিন পারদ স্তম্ভ বেড়েই চলছে। অধিক তাপমাত্রা জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ওপর প্রভাব বেশি পড়ে। তীব্র গরমে জনদুর্ভোগের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
শনিবার (২০ এপ্রিল) প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।
এমন বৈরী পরিবেশে প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয় মানুষ। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান কেউ কেউ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ চুয়াডাঙ্গা ও চট্টগ্রামের আনোয়ারায় মোট ২ জন হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।
হিটস্ট্রোকের প্রধান লক্ষণগুলো নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, প্রচণ্ড গরমে যখন শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, শরীর থেকে পানি, তরল পদার্থ ও লবণও বেরিয়ে যায়, তখন আমাদের শরীরের রক্তের চাপ কমে যায়। সেই সঙ্গে নাড়ির গতি বেড়ে যায়। শরীর অবসন্ন লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে। এ কারণে বমি-বমি ভাব লাগে ও বমিও হতে পারে। অনেকে চোখে আবছা দেখে। মাথা ঘুরতে থাকে। কেউ কেউ অসংলগ্ন কথা-বার্তাও বলে। এগুলো হচ্ছে হিট স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ।
তিনি বলেন, হিট স্ট্রোক হলে কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন। জ্ঞান হারালে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, এই গরমের মধ্যে যারা বাইরে বের হবেন, তারা যদি সঙ্গে একটু খাবার পানি রাখেন এবং যাদের রোদের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকার বাধ্যবাধকতা আছে, তারা যদি ওরস্যালাইন নিয়ে বের হন তাহলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে একটু পর পর তারা পানি ও ওরস্যালাইন খাবেন এবং প্রস্রাবের রঙ ও পরিমাণের দিকে লক্ষ্য রাখবেন। প্রস্রাবের রঙ বদলের পাশাপাশি পরিমাণ কমে গেলে পানিসহ তরলজাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
ডা. লেনিন জানান, তাপপ্রবাহের সময়টাতে টাইট জামাকাপড় না পরে ঢিলেঢালা সুতি জামাকাপড় পরতে হবে। এ সময় ছাতা নিয়ে বের হলে ভালো হয়। আর যারা শ্রমজীবী, টানা রোদের মধ্যে কাজ করেন তাদের কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রামের সঙ্গে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। তবে রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় যে সরবত, পানি বিক্রি হয় তা খাওয়া যাবে না। কারণ এই সরবত যে পানি কিংবা বরফ দিয়ে বানানো হয় সেটা কোনোমতেই সুপেয় না।
তিনি বলেন, এর বাইরে বয়স্ক মানুষ, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগতে থাকা সংবেদনশীল মানুষদের নিতান্তই প্রয়োজন না পড়লে বাইরে বের না হওয়া ভালো।
লেনিন চৌধুরী বলেন, গরমের ভেতর তৃষ্ণা নিবারণে ঠান্ডা পানি খাওয়া একেবারেই উচিত না। কারণ, আমাদের গলায় শ্বাসনালীর ওপরের অংশে কিছু সুবিধাবাদী জীবানু বাস করে। সুবিধাজনক অবস্থা পেলেই এরা আক্রমণ করে। যখন চারপাশে গরম তখন হঠাৎ করে ঠান্ডা পানি গলায় গেলে গলার তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। এই জীবাণুগুলো তখন সক্রিয় হয়ে ওঠে।
পাবলিক রিলেশনস অফিসার যেভাবে সাফল্য বয়ে আনে প্রতিষ্ঠানে
জনসংযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অফিসার যেটাকে ইংরেজিতে বলা হয় পাবলিক রিলেশনস অফিসার। এই পজিশন কে দুই নামে আন্তর্জাতিকভাবে চিনে থাকে তার মধ্যে একটি হচ্ছে পিআরও আরেকটি হলো সিসিও।
কারা এই বিভাগে কাজ করতে পারেন : গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টরে কাজ করতে হলে অবশ্যই সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতক থাকা জরুরি। অথবা দীর্ঘ বছর যারা টেলিভিশন বা পত্রিকায় কাজ করে এসেছেন তারাও এখন অনেকেই ভালো করছেন।
যে বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞতা দরকার হবে : কমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্ট করার যোগ্যতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। আপনাকে প্রেস রিলিজ লেখা জানতে হবে। সেইসাথে মিডিয়া বায়িং, ব্রান্ডিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন ব্যাপকভাবে।
শিল্পীসহ সবার সাথে সক্ষতা : ধরুন, আপনার ব্রান্ড হেড চাচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড় তামিম ইকবাল বা চিত্রনায়ক ফেরদৌসকে দিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করতে। তাদের এই সুন্দর চিন্তার বাকিযে কাজগুলো সেটা পাবলিক রিলেশনস অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে আপনাকে। পাশাপাশি অফিসের ইভেন্টকে সফল করতে প্রধান অতিথি সিলেকশনসহ তাকে উপস্থিত করা এই চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো করতে হবে।
ইন্টারনেট দক্ষতা অর্জন : এই সেক্টরে কাজ করতে হলে অবশ্যই ইন্টারনেট দক্ষতা বৃদ্ধিতে এখন থেকেই ভূমিকা পালন করতে হবে আপনাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধরুন আপনার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে। সেখানে কান্ডারি হিসেবে ভুমিকা পালন করতে হবে অফিস লিডার হিসেবে।
অফিসিয়াল সেলস টিমের পেছনের নায়ক : একজন পাবলিক রিলেশনস অফিসার সে প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট সম্পর্কে দেশের মানুষকে তুলে ধরে। এর ফলে আপনার পারফরম্যান্স উপর নির্ভর করে প্রোডাক্ট বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেলস বেড়ে যাবে বহুগুণ৷
ইভেন্ট স্পন্সরশিপ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা : ধরুন, আপনি একটি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানে আছেন।আপনার প্রতিষ্ঠানে ইভেন্ট স্পন্সর জন্য ফাইল এলো। ব্রান্ড সেকশন থেকে এপ্রুভাল দিলেও আপনার কাছে ফাইল আসার সাথে সাথে দায়িত্ব হবে যে সকল মানুষের নাম দিয়ে স্পন্সর চাওয়া হয়েছে তারা থাকছেন কিনা। যদি হয় ইভেন্ট টি কনসার্ট সংক্রান্ত, সেখানে জেমস সহ বড় বড় শিল্পীদের নাম দেওয়া হলো কিন্তু আপনার দফতর দেখলো বড় শিল্পীরা কেউ থাকছে না । আপনার সুন্দর রি-চেক এবং রিপোর্ট করার কারণে প্রতিষ্ঠান বড় ঝুঁকি থেকে বেঁচে যেতে পারে।
প্রতিষ্ঠানের লোগোসহ সুনাম বাড়িয়ে দেয় পিআর : একজন পাবলিক রিলেশনস অফিসারের দক্ষতা জন্য সে প্রতিষ্ঠানের লোগো,নাম সহ সুনাম বাজারে বেড়ে যায় বহুগুণ৷
সিসিও বা পিআর কার কাছে রিপোর্ট দেয় : একজন পাবলিক রিলেশনস অফিসার বা চীফ কমিউনিকেশন অফিসার হচ্ছে সে প্রতিষ্ঠানের অন্যতম সিনিয়র মুখপাত্র। অফিসিয়াল কাজের ক্ষেত্রে রিপোর্ট জমা দেয় সরাসরি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাছে।
এই সেক্টরের ডিমান্ড কেমন : জব সেক্টরে অত্যন্ত ডিমান্ড রয়েছে পাবলিক রিলেশনস অফিসার বা চিফ কমিউনিকেশন অফিসার হিসেবে।শুরুতেই ৪০ হাজার থেকে ৯ লাখ টাকা বেতনও রয়েছে এই সেক্টরে।
লেখক : চিফ কমিউনিকেশন অফিসার, ইবিবিটিএল
পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী নবাবের পুকুরে ৫ টাকায় দিনভর গোসল
৫ টাকায় গোসল। তাও আবার ২০০ বছরের পুরোনো পুকুরে! এক টিকিটেই দিনভর চরম উদ্দীপনায় চলে ডুবোসাঁতার, সঙ্গে জলকেলি। এমন একটি পুকুর আছে পুরান ঢাকার আহসানমঞ্জিল সংলগ্ন এলাকায়। নবাবী আমলের এই জলাশয় গোল তালাব পুকুর নামে পরিচিত। স্থানীয়রা ডাকেন নবাব বাড়ির পুকুর।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে এই পুকুরের কাছে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদে পুড়ছে চারপাশ। কাঠফাঁটা রোদে যখন জনজীবন দুর্বিষহ তখন এই পুকুর দিচ্ছে সামান্য স্বস্তি । গোল তালাবের চারপাশের আম, কাঁঠাল, নারিকেলসহ নানা ফল ও ঔষধি গাছে ঘেরা, যার ফলে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মাঝেও এর পানি থাকে ঠান্ডা।
প্রচণ্ড তাপদাহে স্বস্তি পেতে দূরদূরান্ত দেখে গোসলের জন্য আসছে অসংখ্য মানুষ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষেরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোল তালাব। এই পুকুর শহরের কর্মব্যস্ত মানুষকে দিচ্ছে গ্রামের সুনিবিড় শীতল ছোঁয়া। মনে করিয়ে দিচ্ছে দুষ্টু মিষ্টিতে ভরা ছেলে বেলাকে।
শত বছর পরেও এই পুকুর এখনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রতিদিন শতশত মানুষ গোসল করার পরও এর পানি টলটলে স্বচ্ছ। এর পেছনের রহস্য, ৫ টাকায় পুকুরে গোসল করতে পারলেও ব্যবহার করা যায় না সাবান-শ্যাম্পু । কাচতে পারে না কাপড়। প্রয়োজন হলে পাশেই রয়েছে আলাদা গোসলখানা ও পোশাক পরিবর্তনের জায়গা। পুকুরে নামায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সাঁতার না জানা লোকদের।
নবাববাড়ি ট্যাংক কমিটির সদস্য রেহানুল হক রেহান জানান, সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে পুকুরের গেট। যে কেউ চাইলেই এখানে গোসল সেরে নিতে পারেন ।
রেহানুল হক অভিযোগ করেন, তবে শত বছরের এই ঐতিহ্যের দিকে নজর পড়েছে কিছু দখলদারদের। জাল দলিল তৈরি করে একাধিকবার চেষ্টা হয় দখলের।
নবাব বাড়ির পুকুরের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, পুরান ঢাকার বাংলাবাজার এলাকায় কুমার সম্প্রদায়ের লোক, মাটি দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন সামগ্রী। তাদের প্রয়োজনে এ স্থান থেকে মাটি নেওয়া হতো। মাটি কাটতে কাটতে এক পর্যায়ে সৃষ্টি হয় ছোট আকারের গর্তের।
এ গর্ত পরবর্তী সময়ে রূপ নেয় জলাশয়ে। তখন জমিদার মোগল শেখ এনায়েত উল্লাহ এটিকে জলাশয় হিসেবে ব্যবহার করতেন। পরে ১৮৩০ সালে নবাব খাজা আলিম উল্লাহ জলাশয়টি কিনে নেন। এরপর ৮ বিঘা জমির মধ্যে জলাশয়টি সংস্কার করে বানানো হয় পুকুর।
পাঁচ টাকায় শুধু গোসলই নয়, কর্মব্যস্ত জীবনে এ পুকুর দিচ্ছে শীতল প্রশান্তি। এখন আর নবাবরা না থাকলেও মাত্র ৫ টাকায় স্বচ্ছ পানির এই পুকুরে যে কেউ এসেই ব্যবহার করতে পারছে অনায়াসে।