• ঢাকা বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

রাবিতে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদ শূন্য, স্থবির প্রশাসন

আমির ফয়সাল ও শহিদুল ইসলাম শহীদ, রাজশাহী

  ১৯ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:৩৪

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৯ মার্চ। এখন পর্যন্ত নতুন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেয়নি সরকার। ফলে অভিভাবকশূন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে নজিরবিহীন স্থবিরতা নেমে এসেছে।

৩৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর এ বিশ্ববিদ্যালয় কবে নাগাদ অভিভাবক পাচ্ছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, এর আগে বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি এবং ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত পরপর দুই বার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদ শূন্য ছিল। একইভাবে এবারও ১৯ মার্চ থেকে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদ একত্রে শূন্য রয়েছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের মেয়াদ শেষের আগেই উভয় পদে নতুন নিয়োগ নিয়ে ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। উভয়পদে নিয়োগ পেতে আওয়ামীপন্থী শতাধিক শিক্ষক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। তবে এখন পর্যন্ত নতুন নিয়োগ না হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা হতাশ।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ২০ মার্চ চার বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য তাদের মেয়াদ শেষে গত ২০ মার্চ নিজ নিজ বিভাগে যোগদান করেছেন। ওই দিনই রেজিস্টারের দপ্তর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদে শূন্যতা ও পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দিক নির্দেশনা চেয়ে চিঠিও দেয়া হয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো দরকারি ব্যবস্থা এমনকি কোনো দিক নির্দেশনাও আসেনি।

এদিকে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদ শূন্য থাকায় পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পরীক্ষা কমিটি গঠন, মূলসনদপত্র প্রদান, ভর্তির কার্যক্রম, ফিন্যান্স কমিটির কার্যক্রম, একাডেমিক কমিটির সভা, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ঋণ পাস, অন্যান্য আর্থিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজনের অনুমোদন দেয়া নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। সূত্র জানায়, নতুন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ না দেয়া এমনকি কাউকে দায়িত্ব না দেয়ায় কোনোভাবেই এসব কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনিক শীর্ষ এই দুই পদ শূন্য থাকায় অন্যান্য দপ্তরগুলোও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

সূত্র মতে, গেলো ১৫ কার্যদিবসে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে উপাচার্যের স্বাক্ষরের জন্য প্রায় ৬শ’ সার্টিফিকেট প্রস্তুত (প্রিন্ট) হয়েছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কাজে যেতে এনওসির জন্য অর্ধশতাধিক আবেদন জমেছে। পাসপোর্টের জন্য অনুমোদন চেয়ে অনুরূপ সংখ্যক আবেদনের স্তূপ জমেছে। এছাড়া বছরের শুরুর দিকে হওয়ায় বেশ কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা কমিটি গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন ও ফল প্রকাশ আটকে রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কাজের আর্থিক অনুমোদন, সিন্ডিকেট সভা, শিক্ষা ছুটি ও পদোন্নতির আবেদন অনুমোদনের জন্য আটকে রয়েছে।

১৯৭৩ সালে প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিদায়ী উপাচার্যের সভাপতিত্বে সিনেট অধিবেশনে সদস্যদের ভোটে তিন সদস্যের প্যানেল নির্বাচনের কথা বলা আছে। ওই প্যানেল থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগ দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। তবে গেলো ১৬ বছর ধরে এ প্রক্রিয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপাচার্য নিয়োগ হয়নি। অধ্যাদেশের ১১ (২) ধারা অনুযায়ী, অসুস্থতা, পদত্যাগ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্য পদ খালি থাকলে, তা পূরণে চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অধ্যাদেশের এই ধারাটি অনুসরণ করে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. এন্তাজুল হক বলেন, ‘উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদে থাকা অবস্থায় যে কোনো একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকলে অপরজন দায়িত্ব পালন করতে পারেন। অথবা উভয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকলে কোষাধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কিন্তু পদ দুটি শূন্য হলে কোষাধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। তাই বিষয়টি এখন সরকারের ওপর নির্ভর করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সমস্ত কাজ বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেড লক অবস্থা। রুটিন ওয়ার্কের জন্যও যদি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দিতো, তাহলে কাজগুলো এগিয়ে নেয়া যেতো। কিন্তু বারবার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেও কোনো ফল হচ্ছে না।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি না থাকলে প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত ঘটে এবং অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। তাই ভিসি দ্রুত সময়ে নিয়োগ দেয়া ভালো। কিন্তু কী কারণে দেরি হচ্ছে? তা আমি বলতে পারবো না। তবে আমরা প্রত্যাশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি নিয়োগ হয়ে যাবে।’

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh