• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ধরিয়ে দিলে পুরস্কার

মালয়েশিয়ায় ৩০ বাংলাদেশির টাকা নিয়ে লাপাত্তা নজরুল

কুয়ালালামপুর থেকে মোস্তফা ইমরান

  ০৪ অক্টোবর ২০১৬, ১২:২০

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের অদূরে সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার সেলায়েং পাসার। সেখানকার অন্তত ৩০ বাংলাদেশি ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে ৩ লাখেরও বেশি রিঙ্গিত আত্মসাত করে লাপাত্তা নজরুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বেশি মুনাফা দেয়ার কথা বলে এসব অর্থ হাতিয়ে নেন নজরুল। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময় বাকিতেও মালামাল ও টাকা ধার নেন তিনি। এর বিপরীতে দেন ভুয়া চেক। এ প্রতারককে যদি কেউ ধরিয়ে দেন, তাকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে বলে জানিয়েন ব্যবসায়ীরা।

কুমিল্লার হোমনা থানার সালেহ মুছা। সেলায়েং পাসারে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন। প্রায় পাঁচ মাস আগে ৩০ হাজার রিঙ্গিতের মালামাল এবং একই পরিমান নগদ অর্থ ধার দিয়েছিলেন নজরুল ইসলামকে। হঠাৎ করে তার ফোন বন্ধ থাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন তিনি লাপাত্তা।

মুছা এ প্রতিবেদকের কাছে বললেন, শুধু আমি একা নই, অনেকের কাছ থেকেই নজরুল অর্থ নিয়ে পালিয়েছে। আমরা এই প্রতারকের উপযুক্ত শাস্তি চাই।

একই অভিযোগ আনলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার শাহীন। ১৭ হাজার রিঙ্গিত বা প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ধার নিয়ে নজরুল ইসলাম লাপাত্তা হওয়ায় এখন তিনি দিশেহারা।

কসবার আবু আব্দুল্লাহ ও নবীনগরের কবির অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে ৪ লাখেরও বেশি টাকার সবজি বাকিতে নিয়েছেন প্রতারক নজরুল। এখন তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আবু আব্দুল্লাহ বললেন, আমার চাইনিজ মালিকের কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার কাঁচামাল নিয়ে এসেছেন এ প্রতারক। কিন্তু এখনো আমার মালিক জানেন না যে, নজরুল পালিয়ে গেছেন। তার এ কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশি ব্যবাসায়ীদের ওপর এদেশের মানুষ ও চাইনিজদের খারাপ ধারণা আসবে।

নরসিংদীর শিবপুরের মোয়াজ্জেম হোসেনের অভিযোগ, ভালো মুনাফা দেয়ার কথা বলে ১০ হাজার রিঙ্গিত বা দু’ লাখ টাকা নিয়েছিলেন নজরুল। প্রথম মাসে মুনাফার টাকা দিলেও পরের মাস থেকেই তিনি নিখোঁজ। কষ্টে অর্জিত এই টাকা ফিরে পাওয়ার আশায় এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মোয়াজ্জেম।

ভুয়া চেক ও বাকিতে সবজি নেয়া বাবদ ৯ হাজার ৭২ রিঙ্গিত বা প্রায় দু’ লাখ টাকা পাবেন চট্টগ্রাম হাটহাজারির মোজাম্মেল হক। তিনি বললেন, সবজি বাবদ ৪ হাজার ৭২ এবং পুরাতন বাকি বাবদ ৫ হাজার রিঙ্গিতের একটি চেক দেন নজরুল। সুনির্দিষ্ট তারিখে চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে দেখি ওই অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই।

শুধু মোজাম্মেল নয় নজরুল এরকম চেক দিয়েছেন অন্তত ২০ জনকে, যারা প্রত্যেকেই ব্যাংকে গিয়ে টাকা না পেয়ে ফিরে এসেছেন। এদেরই একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানার সবজি ব্যবসায়ী হানিফ। তিনি বললেন, সবজি কেনা বাবদ নজরুল আমাকে ৫ হাজার রিঙ্গিতের একটি চেক দেন। সেটি ছিল সিআইএমবি ব্যাংকের। কিন্তু চেক নিয়ে যাওয়ার পর ব্যাংক কর্মকর্তা আমাকে জানান তার ওই অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাই নেই।

আরো যারা টাকা পাবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন মাগুরার কাদিরপাড়া গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী সুলতান মাহমুদ, সাতক্ষীরা আশাশুনি থানার ইউসুফ আলী, যশোর সাতমাইলের মোস্তাক হোসেন, আলী, সুমনসহ অনেকে।

এছাড়া নজরুলের বিরুদ্ধে কুয়ালালামপুরের বাইরে ক্যামেরন হাইল্যান্ড থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। শুধু ভুক্তভোগীরাই নন, তার ব্যবসার কাজে লাগানো দু’ শ্রমিক হবিগঞ্জের গোবিন্দ ও সোহেল রানাও নজরুলের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন। কথা বলতে বলতে চোখের কোণে পানি জমে আসা এ দু’ শ্রমিক জানান, দু’ মাসেরও অধিক সময় তাদেরকে কোনো বেতন দেয়া হয়নি। এ সময়ের মধ্যে পরিবারের কাছে টাকা না পাঠানো ও নিজের থাকা-খাওয়ার কষ্টের কথাও উঠে আসে তাদের কণ্ঠে।

২০১৪ সালের ১৩ জুলাই পর্যটক ভিসায় মালয়েশিয়া পাড়ি জমান কিশোরগঞ্জ বাজিতপুরের নজরুল ইসলাম। ব্যবসায়িক পরিচয়ে ঘাঁটি গাড়েন কুয়ালালামপুরের অদূরে সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত সেলায়েং পাসারে। এখানে অল্পসময়ে সব ব্যবসায়ীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেন নজরুল ইসলাম। তাকে সবাই জামাই নামে ডাকতেন। কখনো বাকিতে বেচাকেনা, কখনো চেকের মাধ্যমে লেনদেন করতেন তিনি। শুরুতে লেনদেন ভালো থাকলেও ধীরে ধীরে তা খারাপের দিকে চলে যায়।

এদিকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সেলায়েং পাসারের কমিউনিটি নেতা মনির হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বললেন, প্রবাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ড আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। নজরুল ইসলাম শুধু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই নয়; মালয়েশিয়ান, চাইনিজ ও ভারতীয়দের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন। এ প্রতারককে ধরিয়ে দিতে দু’ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন তিনি।

পাসারের আরেক পরিচিত মুখ আব্দুল্লাহ জানান, নজরুলকে দেখে কখনো মনে হয়নি সে এ ধরনের কাজ করতে পারে। অভিযোগ সত্যি হলে তার অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নজরুলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

এস

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh