কুফাবাসীর ডাকে কারবালায় পৌঁছান ইমাম হোসাইন (রা.)
হিজরি ৬১ সালের মহররম মাসের দুই তারিখ কারাবালার কালজয়ী বিপ্লবের মহানায়ক হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) বিশ্বের সবচেয়ে করুণ অথচ বীরত্বপূর্ণ ঘটনার অকুস্থল কারবালায় এসে পৌঁছান। সর্বোচ্চ ত্যাগের দৃষ্টান্ত রেখে ৮ দিন পর মানবতার শত্রুদের হাতে এখানেই তিনি শাহাদত বরণ করেছিলেন।
জালিম ও মহাপাপিষ্ঠ শাসক ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি মহাবিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন যাতে নানাজান বিশ্বনবী (সা.)’র ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা পায় এবং প্রকৃত ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার পথ খুলে যায়। মদীনা থেকে মক্কায় গিয়ে তিনি ইয়াজিদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এরপর নিরাপত্তার কারণে এবং পবিত্র ও শান্তির নগরী মক্কায় রক্তপাত এড়ানোর জন্য তিনি হজ না করেই ইরাকের কুফার দিকে রওনা দেন।
কবি ফররুখ আহমদ 'শহীদে কারবালা' কবিতায় বলেন,
উতারো সামান, দেখ সন্মুখে কারবালা মাঠ ঘোড় সোয়ার!
জ্বলে ধূধূ বালু দোযখের মত, নাই সবজার চিহ্ন আর।
আকাশে বাতাসে কার হাহাকার? পান্থপাদপ লোহু সফেন,
আজ কারবালা ময়দানে মোরা দাঁড়ায়েছি এসে হায় হোসেন!
খুনের দরিয়া দেখেছি স্বপ্নে, কারবালা মাঠে দেখেছি খাব,
আহাজারি ওঠে দুনিয়া জাহানে, ভাসে আসমানে কোটি বিলাপ;
হবে সয়লাব দুনিয়া জাহান- শান্ত মক্কা মুয়াজ্জমা;
জুলুমের তেগ হানবে জালিম গাবে না এখানে উদার ক্ষমা।
ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছেন শুনে কুফার দোদুল-মনা লোকেরা তাঁকে ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্ব দেয়ার ও ইসলামি হুকুমাত কায়েমের মাধ্যমে মদ্যপ, জুয়াড়ি ও ব্যভিচারী ইয়াজিদের প্রজা হওয়ার কলঙ্ক থেকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। কুফাবাসী’র পক্ষ থেকে ১৮ হাজার চিঠি তাঁর কাছে পৌঁছে এবং প্রতিটি চিঠির মধ্যে ১০০ জনের স্বাক্ষর ছিল। কিন্তু প্রয়োজনের সময় কারবালায় খুব কম লোকই তাঁকে সহায়তা দিয়েছে।
ফলে ইয়াজিদের প্রায় ত্রিশ হাজার সদস্যের সুসজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে ইমাম হোসাইন প্রায় ১০০ থেকে ১৪০ জন সঙ্গী নিয়ে তিনি বীরের মত লড়াই করে শহিদ হন ।
এই অসম লড়াইয়ে তাঁর পরিবারের অনেক সদস্যসহ ৭২ জন সঙ্গী শহিদ হন। কারবালা বিপ্লব মুসলমানদের মধ্যে প্রকৃত ইসলামের চেতনা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করেছে। আর এ জন্যই বলা হয়, ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কি বাদ।
অর্থ্যাৎ প্রতিটি কারবালার পরই জীবিত হয় ইসলাম। ইমাম হোসাইন (রা.) মনে করতেন তাঁর শাহাদত ও রক্তদান ছাড়া যদি ইসলাম পুনরুজ্জীবিত না হয় তাহলে শাহাদতই উত্তম এবং ইয়াজিদের মত শাসক যদি বিনা বাধায় ও আপত্তিতে ‘ইসলামী সমাজের নেতা’ হন তাহলে ইসলাম চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে। সত্যের পথে শাহাদত মধুর চেয়েও মিষ্টি, এই সংস্কৃতি চালু করে গেছেন কারবালার বীর শহিদরা। ইসলামকে আর কোনো কিছুই এত প্রাণ ও মর্যাদা দেয় না, যা দেয় শাহাদত।
কবি নজরুলের ভাষায়, আঁজলা ভরে আনলো কি প্রাণ কারবালাতে বীর শহীদান?
এমকে
মন্তব্য করুন