ঘরে ফিরে যাও, দাবি আদায় না হলে আবার নামবো: কাঞ্চন
লক্ষ্য করছি ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ঘরে ফিরেছে। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী এখনও রাজপথে আছে। আমি তোমাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। তাই তোমাদের জীবনের কথা ভেবে বলছি, তোমরা ঘরে ফিরে যাও। যদি জীবন থাকে আর আমাদের দাবি আদায় না হয়, তাহলে আমিও আবার তোমাদের সাথে রাস্তায় নামবো, আন্দোলন করবো।
বললেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
চলমান নিরাপদ সড়কের আন্দোলন ও উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ নিসচা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ সোমবার বিকেলে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন- তোমাদের দাবির সঙ্গে দেশের প্রতিটি মানুষের সমর্থন আছে। কারণ নিরাপদ সড়কের দাবি প্রতিটি মানুষের প্রাণের দাবি। সরকারও তোমাদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিছু উদ্যোগ ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে ট্র্যাফিক সপ্তাহের মাধ্যমে অবৈধ যান ও চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা এ অভিযানের দিকে বিশেষভাবে নজর রাখছি।
-----------------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : সপ্তাহে ছয়দিন ১২ ঘণ্টা করে খোলা থাকবে বিআরটিএ
-----------------------------------------------------------------------
তিনি আরও বলেন-ট্র্যাফিক সপ্তাহ শুরু হয়েছে এবং শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের সামনে আন্ডারপাস নির্মাণে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়ে জরুরি নির্দেশনা প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া তিনি নির্দেশ দিয়েছেন সকল সরকারি যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র যেন থাকে এবং সরকারি সকল চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ও যাদের লাইসেন্স নেই, তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়িতে যেন না ওঠে। মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন যদিও এ আইনের ব্যাপারে আমাদের দ্বিমত রয়েছে। আইনের ব্যাপারে আমরা কোনও প্রকার ছাড় দেব না।
কাঞ্চন বলেন- ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, অবস্থা দু-চার দিনেই সব পাল্টে যাবে না। এর জন্য কিছু সময় দিতে হবে। নিরাপদ সড়কের জন্য অনেক বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। কঠোর আইন যেমন দরকার, তেমনি এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় চালকরাই শুধু দায়ী নন। সচেতন হতে হবে সবাইকে। ওভারটেক, ওভারস্পিড যেমন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তেমনি ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উল্টোপথে গাড়ি চালানো পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রত্যেক যাত্রী ও পথচারীদের সচেতন হতে হবে।
শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন-তারা নিরাপদ সড়কের দাবিটি মানুষের প্রাণের দাবিতে রূপান্তর করেছে। এক সপ্তাহ ধরে তারা লাগাতার আন্দোলন করেছে। অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সড়কে কত নৈরাজ্য রয়েছে, কত বিশৃঙ্খলা রয়েছে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও টনক নড়েছে।
মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ তে মতের প্রতিফলন ঘটেনি দাবি করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন- আমরা এ আইনের উপর যে সাজেশন দিয়েছি, তা গ্রহণ করা হয়নি। প্রথমেই আমার আপত্তি আইনটির শিরোনাম নিয়ে। আমরা বলেছিলাম সড়ক দুর্ঘটনা নিরসন করতে হলে সড়কের নিরাপত্তার কথা প্রথমে আসে। এজন্য আইনটির শিরোনাম চেয়েছিলাম ‘সড়ক নিরাপত্তা ও সড়ক পরিবহন আইন।’আমরা মনে করি, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালক-মালিকের জেল জরিমানাই সমাধান নয়।
কাঞ্চন বলেন- এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছিলাম ১০ বছর, হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল ৭ বছর কিন্তু করা হয়েছে ৫ বছর। সর্বোচ্চ শাস্তির কথা বলা হলেও সর্বনিম্ন শাস্তির কথা বলা হয়নি আমি এতে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। এটাও পরিষ্কার করতে হবে। ক্ষতিপূরণের জন্য যে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হবে সেখানে সরকার, চালক ও মালিকের প্রতিনিধি থাকলেই চলবে না; সেখানে থাকতে হবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের প্রতিনিধি।
সড়ক আইন নিয়ে সুপারিশে তিনি বলেন- আমি বলবো যে আইনই প্রণীত হোক তার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে শক্তিশালী মনিটরিং টিম থাকতে হবে; যা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন হবে। থাকবে সড়ক, নৌ, রেল, বিমান, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, পরিকল্পনা, অর্থ, আইন এবং সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যারা কাজ করছে তাদের প্রতিনিধি। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিনিধি থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আলম দীপেন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব লিটন এরশাদ, যুগ্ম-মহাসচিব লায়ন গনি মিয়া বাবুল প্রমুখ।
আরও পড়ুন :
এমসি/পি
মন্তব্য করুন