নারায়ণগঞ্জ-৫ : লড়াই হবে ত্রিমুখী
জোটভুক্ত নির্বাচনের কারণে ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক সমঝোতার কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসন ছেড়ে দেয়ায় ওই সময় মনঃক্ষুণ্ণ হন আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীরা। একই ধারা অব্যাহত ছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মতো নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনটিও ছেড়ে দেয়া হয় জাতীয় পার্টিকে। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই দলীয় প্রার্থী চান নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
রাজধানী ঢাকার খুব কাছের জেলা নারায়ণগঞ্জ। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে জোটভুক্ত রাজনীতির জন্য রাজধানীর কাছের জেলার আসন শরিক দলকে ছেড়ে দেয়া হলে তা রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এটির প্রভাবও পড়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বন্দর উপজেলা এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সোনারগাঁও উপজেলায় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এদিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ব্যস্ত নিজেদের ঘর গোছাতে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোন্দল মেটানো না গেলে এর প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়বে বলে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়েছিল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য একেএম নাসিম ওসমানকে। ওই নির্বাচনে বিএনপি’র অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসিম ওসমান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় নাসিম ওসমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল ভারতের দেরাদুনে হঠাৎ নাসিম ওসমানের মৃত্যু হলে উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পান তার মেজ ভাই ব্যবসায়ী নেতা একেএম সেলিম ওসমান। ২০১৪ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে সেলিম ওসমান সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক এসএম আকরামকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দু’জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের একজন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু এবং অপরজন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। এ দু’জন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বেশ পুরানো মুখ এবং দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ।
দুই প্রার্থীর মধ্যে অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু ১৯৭৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। ছাত্রলীগের মধ্যে দিয়ে তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এরপর শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও হয়েছেন তিনি। এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ বারের বর্তমান সভাপতিও তিনি। নারায়ণগঞ্জ বারে তিনি মোট ৩ বার সাধারণ সম্পাদক এবং ৪ বার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য ওই সময় তাকে ২বার কারাগারে যেতে হয়েছিল। প্রবীণ এই নেতা পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে অভিজ্ঞ এ রাজনীতিক বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত আছি। দল এবং দলের নেতাকর্মীদের জন্য চেষ্টা করেছি কিছু করতে। দলীয় প্রধান আমার যোগ্যতা বিবেচনা করে আমাকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে মনোনয়ন দিলে চেষ্টা করবো এলাকার মানুষের জন্য ভাল কিছু করতে। এরই মধ্যে তিনি সাংগঠনিক কাজ শুরু করেছেন বলে জানান। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে চূড়ান্তভাবে তিনি তার পক্ষেই কাজ করবেন।
অপর সম্ভাব্য প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা ১৯৭৫ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করেও এখন তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এর আগে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
সামরিক সরকারের আমলে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তার নেতৃত্বে প্রথম নারায়ণগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়। স্বৈরাচার সরকারের আমলে তিনি দু’বার কারাবরণ করেন। পরে ৯১ সালে শহর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হন তিনি। ৯৬ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ৯৭ সালে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মনোনীত হন। ২০০০ সালে বিশেষ কাউন্সিলে শহর আওয়ামী লীগের ফের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন খোকন সাহা।
২০০৩ সালের ১৯ অক্টোবর কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি তৃতীয়বার এই পদে নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা শহর আওয়ামী লীগকে মহানগর আওয়ামী লীগে উন্নীত করে ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন খোকন সাহাকে।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, মাতৃতুল্য প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো। তা না হলে যাকেই তিনি মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষেই কাজ করবো।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে নয়, দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন। যাতে এর সুফল যিনিই দলের প্রার্থী হন তিনি পান।
দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, আমরা দলের সভাপতিকে অনুরোধ করেছি যেন আগামী নির্বাচনে এ আসনটি কোনো শরিক দলকে ছেড়ে দেয়া না হয়।
নারায়ণগঞ্জের দলীয় নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনে জেলার ৫টি আসনেই দলীয় প্রার্থী চান। তাদের দাবি, নারায়ণগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। তাই শরিক দলকে আসন ছেড়ে দিতে হলে অন্য জেলায় যেনো ছাড়া হয়।
এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনের আরো অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির, যুবলীগ নেতা আবু সুফিয়ান এবং আওয়ামী লীগ নেতা আর্জু রহমান ভূইয়া।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি থেকে এ আসনে দু’জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। তিনি এ আসন থেকে ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার সঙ্গে মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের নাম শোনা যাচ্ছে। সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে পরাজিত হন। তবে এই মুহূর্তে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ঘর গোছাতে ব্যস্ত দলের মহানগরের নেতারা।
অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ৩ বার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে এগিয়ে আছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জে বিএনপি’র রাজনীতিতে কালামের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণে আলোচনায় আছেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বলেন, মনোনয়ন দেবেন দলীয় চেয়ারপারসন। তবে আমি দল গোছানোর কাজ করছি। সাংগঠনিক কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছি। কারণ দল সংগঠিত হলে প্রার্থী যেই হোক তিনি সুবিধা পাবেন।
তিনি আরো বলেন, ৯১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মোট ৬টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। যার মধ্যে বিএনপি ৫টিতে অংশগ্রহণ করেছিল। ওই ৫টি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আমিই বিএনপি’র প্রার্থী ছিলাম। ওই ৫টি নির্বাচনের মধ্যে ৩টিতে আমি জয়ী হয়েছিলাম। দল আবার মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশ নেব।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো। দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে বিএনপির যে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন চলছে সেখানে কাজ করছি। দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে একক প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। মূলত ব্যবসায়ী এই নেতা বিকেএমইএ’র বর্তমান সভাপতি। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সভাপতি। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির এক নম্বর সদস্য।
গেলো ৪ বছরে সেলিম ওসমান নিজের অর্থায়নে এই আসনে বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন স্কুলের নতুন ভবন তৈরি করা। এছাড়া মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবর স্থানে মোটা অংকের অনুদান দিয়ে আলোচনায় আছেন তিনি। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সেন্ট্রাল খেয়া ঘাট যাত্রীদের জন্য ফ্রি করে দিয়ে তিনি সেবার অনন্য উদাহারণ সৃষ্টি করেছেন।
আসছে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির এ সংসদ সদস্য বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবো কি নেবো না তা আসছে বছরের ৩০ জুন ঠিক করবো। এর আগে আমি কিছু বলবো না। তবে ওই সময় পর্যন্ত আমি উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখবো।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্যান্য দলগুলোও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে তারা এখনেই এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। তারা আরো পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
সিপিবি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, সিপিবি’র সঙ্গে বাসদের একটি জোট রয়েছে। তাই নির্বাচনে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। সে হিসেবে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ৩টিতে সিপিবি এবং বাকি দু’টিতে বাসদ প্রার্থী দেবে।
সেক্ষেত্রে সিপিবি নারায়ণগঞ্জ-৫ থেকে অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষকে, নারায়ণগঞ্জ-২ আসন থেকে হাফিজুল ইসলামকে এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে অ্যাডভোকেট জিয়া হায়দার ডিপথিকে প্রার্থী হিসেবে আগেই ঘোষণা করেছে। আর বাকি দু’টি আসনে বাসদ তাদের প্রার্থী ঠিক করবে।
- ১৮ আগস্ট শুক্রবার থাকছে পঞ্চগড় আসনের খবর
জেবি/এসএস
মন্তব্য করুন
জিম্মি জাহাজের নাবিকদের জন্য ছাগল-দুম্বা আনছে জলদস্যুরা
আঠারো দিন ধরে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র নাবিকদের জন্য তীর থেকে ছাগল ও দুম্বা আনছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। ফলে তারা খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন না। তবে জাহাজে বিশুদ্ধ পানি কমে যাওয়ায়, সেটি নিয়ে তারা কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
নাবিকদের বরাতে জাহাজটির মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির গ্রুপ ও সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জলদস্যুরা কোনো জাহাজ জিম্মি করলে সাধারণত তারাই খাবার সরবরাহ করে থাকে। তবে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।
জিম্মি জাহাজের নাবিকদের থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে নাবিকদের সংগঠনের একজন নেতা বলেন, খাবার নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তা নেই। কারণ, জলদস্যুরা জাহাজে ছাগল ও দুম্বা আনছে। তবে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। কারণ, জলদস্যুরা জাহাজে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে জাহাজে যা বিশুদ্ধ পানি আছে, তা রেশনিং করে চলতে হচ্ছে। সপ্তাহে দুই দিন এক ঘণ্টা করে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছেন নাবিকেরা।
জাহাজের মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, আশা করি খাবার নিয়ে সমস্যা হবে না। তবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব চেষ্টা করছি জাহাজসহ নাবিকদের মুক্ত করার। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ জন নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জিম্মি করে সোমালিয়ার দস্যুরা। পরে তারা জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলের কাছে নিয়ে যায়। জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জিফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রয়েছে।
ট্রেনের টিকিট : একদিনে গ্রাহকের ৪০ কোটি টাকা লোকসান
আগামী ১০ এপ্রিলকে ঈদের দিন ধরে গত ২৪ মার্চ থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ছয় দিনের মধ্যে শুক্রবার (২৯ মার্চ) রেলের ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপে সর্বোচ্চ হিট করেছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। এদিন ঢাকা থেকে ৩৩ হাজার ৫০০টি ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। টিকিট বিক্রির প্রথম ৩০ মিনিটেই অনলাইন অথবা অ্যাপে টিকিট কাটার চেষ্টায় দুই কোটি ৭২ লাখ বার হিট করেছেন গ্রাহকরা। আর সারাদিনে তা চার কোটির বেশি বার। এতে গ্রাহকদের অন্তত ৪০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
জানা গেছে, শুক্রবার প্রতি গ্রাহক টিকিট কাটতে গিয়ে ন্যূনতম ১০ টাকা খরচ করেছেন। তবুও ৯৯ শতাংশ গ্রাহক টিকিট পাননি। সেই হিসেবে এদিন টিকিট কাটতে যেয়ে গ্রাহকদের অন্তত ৪০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। যদিও গ্রাহকদের দাবি প্রতিবার টিকিট কাটার চেষ্টায় ২০ টাকা করে ৮০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
তবে এ সময় গড়ে প্রতি টিকিট ৫০০ টাকা ধরে টিকিট বিক্রি করে রেলওয়ের আয় মাত্র ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে যে ১০ হাজার গ্রাহক সাড়ে ৩৩ হাজার টিকিট নিতে সক্ষম হয়েছেন তাদেরও টিকিটপ্রতি অনলাইন সার্ভিস চার্জ বাবদ অতিরিক্ত ২০ টাকা খরচ হয়েছে।
এদিন সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের মোট ১৫ হাজার ৮৯০টি টিকিট ছাড়া হয়। এর মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায় ৯৫ শতাংশ টিকিট। এদিকে দুপুর ২টায় ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিটসহ ১৬ হাজার ৬৯৬টি টিকিট ছাড়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে এসি চেয়ার, কেবিন, নন-এসি চেয়ার ও এসি-চেয়ারের টিকিটও শেষ হয়ে যায়। তার পরও লাখো মানুষ অনলাইনে টিকিটের জন্য অ্যাপে প্রবেশ করেন।
জনগণের টাকা লোকসান এবং সরকারি আয় কমার কারণ হিসেবে টিকিট বিক্রির পুরো বিষয়টি বেসরকারি খাতে দেওয়াকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের এত উন্নয়ন ও এত সক্ষমতা থাকার পরও টিকিট বিক্রয়ের বিষয়টি বেসরকারি খাতকে দেওয়া হয়েছে। ফলে রাজস্ব আয় ব্যক্তি পকেটে চলে যাচ্ছে, গ্রাহকেরও লোকসান হচ্ছে।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, টিকিট বিক্রয়ের স্থান থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছুই রেলের, সরকার চাইলেই টিকিট বিক্রয়ের পুরো বিষয়টা রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে।
ডিজেল ও কেরোসিনের নতুন দাম নির্ধারণ
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা ২৫ পয়সা কমিয়েছে সরকার। নতুন দাম অনুসারে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন বিক্রি হবে ১০৬ টাকায়। আগামীকাল ১ এপ্রিল থেকে এই মূল্য কার্যকর হবে।
তবে অকটেন ও পেট্রোলের দাম আগের মতোই রয়েছে। সে অনুসারে লিটারপ্রতি অকটেন ১২৬ টাকা আর পেট্রোল ১২২ টাকায় বিক্রি হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় রোববার (৩১ মার্চ) এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানায়। জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকার আলোকে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
সরকার গত ২৯ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণের নির্দেশিকার প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ মার্চ প্রথম প্রাইসিং ফর্মুলা অনুসারে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছিল।
ওই সময়ে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা, অকটেন ১৩০ টাকা থেকে ১২৬ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ১২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১২২ নির্ধারণ করা হয়। তখন লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিনে ৭৫ পয়সা, অকটেনে ৪ টাকা ও পেট্রোলে ৩ টাকা কমানো হয়েছিল।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায় প্রতিবেশি দেশ ভারতের কলকাতায় বর্তমানে ডিজেল লিটার প্রতি ৯০ দশমিক ৭৬ রুপি বা ১৩০ টাকা ৬৯ পয়সা (১ রুপি=১.৪৪ টাকা ধরে) এবং পেট্রোল ১০৯ দশমিক ৯৪ রুপি বা ১৫৮ টাকা ৩১ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে, যা বাংলাদেশ থেকে বেশি।
‘প্রয়োজনে ফেসবুক-ইউটিউব বন্ধ করে দেওয়া হবে’
গুজব প্রতিরোধ ও সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুক ও ইউটিউবকে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ দিলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে প্রয়োজনে এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
রোববার (৩১ মার্চ) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে এ তথ্য জানান কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ফেসবুক, ইউটিউবের অফিস না থাকায় তারা আমাদের সুপারিশ ও কথা শোনে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় আইনের যে বিধানগুলো রয়েছে, কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া। অথচ তারা আমাদের অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের এই উদাসীনতা আমরা সবার সামনে তুলে ধরবো। প্রয়োজনে এগুলো কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে তার আগে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাকে জানাবো যে, আমাদের অভিযোগ যথাযথভাবে আমলে না নিয়ে তারা (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) সাইবার ক্রাইম, গুজব অব্যাহত রাখছে এবং তাদের পক্ষ থেকে এসব প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নেই।
মোজাম্মেল হক বলেন, প্রথমে আমাদের অভিযোগগুলো আমলে নিতে তাদের বারবার বলা হবে। দরকার হলে আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপিয়েও বলবো। যেন বিশ্ববাসীর কাছে মনে না হয়, এখানে কোনো মৌলিক অধিকার ব্যাহত হচ্ছে।
এ সময় উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে পর্যাপ্ত সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রীকে বলা হয়েছে বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী।
সভায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা বুধবার
এপ্রিল মাসে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়ছে না কমছে, তা জানা যাবে আগামী বুধবার (৩ এপ্রিল)। এক মাসের জন্য এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করা হবে এদিন।
সোমবার (১ এপ্রিল) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সচিব ব্যারিস্টার মো. খলিলুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সৌদি আরামকো ঘোষিত এপ্রিল মাসের সৌদি সিপি অনুযায়ী চলতি মাসের জন্য ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি এলপিজির মূল্য সমন্বয় সম্পর্কে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্দেশনা বুধবার দুপুর ২টায় ঘোষণা করা হবে।
সবশেষ গত ৩ মার্চ টানা অষ্টম মাসের মতো ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির দাম বাড়ানো হয়। গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৮২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ১২ কেজির সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ৪১ টাকা। আর গত ২ জানুয়ারি ২৯ টাকা বাড়িয়ে এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৪৩৩ টাকা ।
সদ্য বিদায়ী মার্চে অটোগ্যাসের দামও বাড়ানো হয়। ভোক্তা পর্যায়ে অটোগ্যাসের মূসকসহ দাম প্রতি লিটার ৬৮ টাকা ৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
সারাহর কিডনি নেওয়া শামীমাও মারা গেলেন
সারাহ ইসলামের মরণোত্তর কিডনি নেওয়া শামীমা আক্তার মারা গেছেন। এর ফলে ‘ব্রেন ডেড’ ওই তরুণীর কিডনি নেওয়া দুই নারীরই মৃত্যু হলো।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে শামীমার মৃত্যু হয়। তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায়।
শামীমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএসএমএমইউর ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল।
তিনি বলেন, শামীমা শেষ ছয় মাস আমাদের আওতার বাইরে ছিলেন। কিছুদিন আগে তার ভাই আমাদের জানান, শামীমার ক্রিয়েটিনিন বেড়েছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে। পরে তিন সপ্তাহ আগে তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। শুরুর দিকে কিছুটা উন্নতি হলেও পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কোনো উপায় না দেখে চার দিন আগে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। এরমধ্যে তার সি ভাইরাস ও বিরল নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। আমরা তার ডায়ালাইসিসও শুরু করেছিলাম, কিন্তু উন্নতি হয়নি। সবশেষ আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
গত বছরের ১৯ জানুয়ারি সারাহ ইসলাম নামে ২০ বছরের এক তরুণীকে ব্রেন ডেড ঘোষণা করেন বিএসএমএমইউ চিকিৎসকরা। ওই রাতেই তার কিডনি শামীমা আক্তার এবং হাসিনা নামে দুই নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। সেসময় দেশে প্রথমবারের মতো এই ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্টকে সফল বলে দাবি করেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু এর মাত্র ৯ মাস পর অক্টোবরে হাসিনা মারা যান। তবে শামীমা আক্তার বেঁচে ছিলেন। এখন তিনিও না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রথমজন ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গেছেন। এবার দ্বিতীয়জনও চলে গেলেন। এটি আমাদের জন্য খুবই কষ্টের।
গুজব প্রতিরোধে প্রয়োজনে ফেসবুক-ইউটিউব বন্ধ করবে সরকার
সরকারের অভিযোগ আমলে না নিলে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গত ৩১ মার্চ। তবে এর প্রক্রিয়া কী হবে এবং আদৌ সেই পদক্ষেপে সরকার যাবে কী না তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) সচিব মো. নূরুল হাফিজ বলেন, মন্ত্রিসভা কমিটির ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমাদের এখনো কিছু জানানো হয়নি।
আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বৃহস্পতিবার বলেন, আমরা তো বলেছি যদি আমাদের কথা না শোনে তাহলে বন্ধ করে দেব।
৩১ মার্চ মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, তারা (ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল) বিভিন্ন বিষয় আমাদের সুপারিশ শোনে না। কারণ, গুজব প্রতিরোধ ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এখানে কোনো অফিস নেই। আমরা বলব যে তারা আমাদের কথা শুনছে না। প্রয়োজন হলে কিছু সময়ের জন্য এসব বন্ধ থাকবে।
এদিকে বাংলাদেশ চাইছে মেটা বাংলাদেশে অফিস স্থাপন করুক। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মেটার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে একটি আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের অনুরোধ করেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সরকার ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর একটা প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। তারা চাইছে তারা যখন চাইবে তখন যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথ্য দেয়। সরকারের আপত্তির কনটেন্ট সরিয়ে ফেলে বা ব্যক্তির ব্যাপারে তথ্য দেয়। কিন্তু বাস্তবে এটি সম্ভব নয়। কারণ ফেসবুকের নিজস্ব নীতি আছে। তারা তার ভিত্তিতে চলে। তবে তারা মনে করেন, ফেসবুকের কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস তত ভালো নয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে ভালো প্রতিকার পাওয়া যায় না।
ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির বলেন, কিছু কিছু বিষয় আছে যেটা আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি যে ওটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকা উচিত নয়। কিন্তু সেটার ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তবে সরকারের দিক থেকে যে রিকোয়েস্টগুলো যায় সেগুলো যে সব ভ্যালিড রিকোয়েস্ট তা নয়। সরকারের অনুরোধে ফেসবুক যদি সব সরিয়ে ফেলত তাহলে আমরা হয়তো অনেক তথ্য জানতেই পারতাম না। আবার কোনো ব্যক্তির তথ্য প্রকাশ করলে তার নিরপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারত। ব্যক্তির ক্ষেত্রে তারা অত নজর না দিলেও কোনো সরকারের পক্ষ থেকে যখন কোনো রিকোয়েস্ট পাঠানো হয় তখন তারা সেটাকে গুরুত্ব দেয়, তারা যা করার বুঝেশুনেই করে, বলেন তিনি।
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন বলেন, সরকার যে বলছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাদের কথা শুনছে না, কী শুনছে না তা আমরা জানতে চাই। সরকার কী চায়, কোন ব্যাপারে ব্যবস্থা চায় তা যদি সরকার প্রকাশ করতো তাহলে আমরাও বুঝতে পারতাম সরকারের চাওয়া কতটা যৌক্তিক। তারা (সরকার) এমন কিছু রিকোয়েস্ট পাঠান যা ব্যক্তিকে টার্গেট করে, কোনো ঘটনাকে টার্গেট করে যার মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। সেগুলো তো ফেসুক ইউটিউবের গ্রহণ করা উচিত না। তারা করেও না, বলেন তিনি।
তবে তার মতে, সরকারের অনুরোধ তারা গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখলেও ব্যক্তির ক্ষেত্রে তাদের সার্ভিস ভালো না। তাদের কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস আরো উন্নত করা উচিত।
সুমন আহমেদ সাবির বলেন, সরকার চাইলে ফেসবুক ইউটিউব বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া সরকার নিতে পারবে কী না সেটাই প্রশ্ন। দেশের টেলিযোগাযোগও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্ভর হয়ে পড়ছে। এর আগে সরকার নানা ঘটনায় দুই-একবার চেষ্টা করেছে সফল হয়নি।
অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, দেশের দুই লাখ ৫০ হাজারের মতো মানুষ এখন ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত। এরমধ্যে অর্ধেক এফ কমার্স। তাই সরকার এটা বন্ধ করতে গেলে দেশের অর্থনীতি বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বে। আর ফেসবুক বন্ধ করলে অনেক কিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। একটির সাথে আরেকটি যুক্ত।
মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল বলেন, ফেসবুক বা মানুষের কথা বলার, মুক্ত চিন্তার কোনো প্ল্যাটফরম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার যদি মনে করে যে তারা যৌক্তিক কথাও শুনছে না তাহলে তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা আরো বাড়তে পারে। এখানে আইন কানুনের সমস্যা থাকতে পারে। এই ধরনের প্ল্যাটফরম যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে দেশীয় আইনে ধরা না গেলে সরকার আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা করতে পারে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামেও নিয়ে যাওয়া যায়। আর তা করতে হলে সরকারের অবস্থান সঠিক হতে হবে, মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের কিছু আইন নিয়ে ফেসবুকের ভিন্নমত থাকার কারণেই তারা হয়তো এখানে অফিস করতে চায় না। কারণ তখন ওই আইন তাদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ হতে পারে। আর তারা যদি মনে করে অফিস না নিয়েই ব্যবসা করা যায় তাহলে তারা অফিস করবে কেন? সরকারের ভাবনা কী?
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিটিআরসি সচিব সচিব মো. নূরুল হাফিজ বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাময়িকভাবে বন্ধ করার কোনো সিদ্ধান্তের কথা আমরা জানা নাই। আমরা সরকারের দিক থেকে এধরনের কোনো নির্দেশনা পাই নাই।
তিনি বলেন, মেটা (ফেসবুক, ইউটিউবসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ, বৈঠক এবং আলোচনা হয়। ফেসবুকের সঙ্গে দুই মাস পর পর বৈঠক হয়। আমরা আমাদের বিষয়গুলো শেয়ার করি, আলোচনা করি। ইউটিউব যে দেড় লাখ কনটেন্ট সরিয়েছে তা আমরা বলেছি বলেই সরিয়েছে।
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা যে বিষয়গুলো পাঠাই তার সবই তারা অ্যাড্রেস করে। তবে প্রতিকার পাই শতকরা ৪০ ভাগের মতো।
আর আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা তো বলিনি এখনই বন্ধ করব। যদি সেরকম কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তারা আমাদের কথা না শোনে তাহলে বন্ধ করব।
বন্ধ করার মত কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কী না? প্রশ্নটি দুইবার করার পরও তিনি কোনো জবাব দেননি।
বাংলাদেশে এখন ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি। ফেসবুকের সঙ্গে সরকার যোগাযোগ বাড়ানোর সঙ্গে অনুরোধের সংখ্যাও বাড়াচ্ছে। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে মেটার কাছে তথ্য চেয়ে ৯৮৮টি আবেদন করে বাংলাদেশ সরকার। এরমধ্যে সরকারের ৬৭ শতাংশ আবেদনে সাড়া দিয়েছে মেটা। একইসময়ে বাংলাদেশের দুই হাজার ২২৭টি কনটেন্টে রেস্ট্রিকশন দিয়েছে মেটা। ওই সময়ে ৯৮৮টি অনুরোধের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য ছিলো ৯৫৬টি এবং জরুরি ভিত্তিতে তথ্য দেয়ার অনুরোধ ছিলো ৩২টি। আবেদনের অধীনে মোট এক হাজার ৪৫৪ টি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য চায় সরকার।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার মেটার কাছে ৮৩৬টি অনুরোধ করেছিল। এদিকে ইউটিউব গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিন মাসে বাংলাদেশের প্রায় দেড় লাখ ভিডিও মুছে ফেলেছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালে এক বছরে বাংলাদেশের ছয় লাখ ৩৮ হাজার ভিডিও অপসারণ করেছে তারা।
আর টিকটক গত বছরের একই সময়ে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বাংলাদেশ থেকে আপ করা ৭৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৯টি ভিডিও মুছে ফেলেছে।