• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

একান্ত সাক্ষাতকারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান

'রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে দেশ-বিদেশের লোকজন ছুটে আসবে'

ইয়াছিন রানা সোহেল, রাঙামাটি

  ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:০২

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিসত্ত্বগ্রহণ ও এর কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য ৩ দিনের সফরে রাঙামাটি এসেছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান। দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা নিয়ে আরটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন এই শিক্ষাবিদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইয়াছিন রানা সোহেল।

আরটিভি অনলাইন: পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ কিভাবে শুরু হয়েছিল?

প্রফেসর আবদুল মান্নান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার সরকার গঠনের পর প্রথম যে সকল বড় প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছিলেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে দেশের যে সমস্ত স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় নেই সে সমস্ত এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। প্রাথমিকভাবে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। প্রথম ধাপে ছয়টি ও পরবর্তী পর্যায়ে আরো ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রথম ধাপের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল। এসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে সাইট সিলেকশন কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সদস্য ছিলাম আমিও। আমার দায়িত্ব ছিল কুমিল্লা নোয়াখালী ও রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সাইট সিলেকশান করা। কুমিল্লা এবং নোয়াখালীর সাইট সিলেকশনের জন্য তিনদিন ধরে সেখানকার প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তর থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। রাঙামাটির বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল মূলত পার্বত্যাঞ্চলের। যেহেতু তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সবচেয়ে ভালো রাঙামাটির সঙ্গে। সেহেতু পার্বত্যাঞ্চলে আমরা রাঙামাটিতেই করার মতামত দিয়েছিলাম।

আরটিভি অনলাইন: সেই সময় রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করতে না পারার কারণ?

প্রফেসর আবদুল মান্নান: ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর আমাদের কমিটির দেয়া সুপারিশকে একটু এদিক সেদিক করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তোড়জোড় শুরু করেছিল। কিন্তু সেসময় একটি পক্ষের অনীহার কারণে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ স্তিমিত হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান সরকার আবারো ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং সঙ্গে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে এই কথা অনস্বীকার্য যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার ফসল হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ।

আরটিভি অনলাইন: রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করার তিন বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি এবং শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হচ্ছে-এই সমস্যাটা কবে নাগাদ সমাধান হতে পারে?

প্রফেসর আবদুল মান্নান: নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, ভবন নেই, একটি স্কুলের ভাড়া রুমে ক্লাস করতে হচ্ছে। তাদের জন্য এখনো কোনো ল্যাব নেই। পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধাও গড়ে উঠেনি। তারপরেও তারা যে কষ্ট সহ্য করে ক্লাস করছে এটাতো বাহবা পাবার যোগ্য। তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের ইতিহাস স্মরণ করে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল একটি মাত্র টিনের ঘরে আর জঙ্গলের মধ্যে। বিকেল চারটার পর লোকজনই থাকতো না সেখানে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই বিশ্ববিদ্যালয় আজ বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে। শত বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও এখনো পর্যন্ত ভবন নির্মাণ চলছে। নিত্য নতুন সাবজেক্ট তৈরি হচ্ছে আর ভবনও তৈরি হচ্ছে। সুতরাং ভবন তৈরি হওয়াটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সরকার ও মঞ্জুরি কমিশন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে কোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। যে ছাত্র-ছাত্রীরা আজ কষ্ট করে ক্লাস করছে তারাতো অন্তত একদিন গর্ব করে বলতে পারবে তারাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকের ছাত্র-ছাত্রী। এটা নিঃসন্দেহে গৌরবের বিষয়।

আরটিভি অনলাইন: পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এ অঞ্চলে কতটা প্রভাব রাখতে পারবে?

প্রফেসর আবদুল মান্নান: রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। আমি মনে করি এটি নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় হবে। কারণ পাহাড়-লেক আর প্রকৃতির খুব কাছাকাছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নান্দকিতাও হবে ব্যতিক্রম। এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিকভাবে জানবে। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বইয়ে পড়বে এবং বাস্তবে দেখতেও পাবে। যেমন ‘ট্যুরিজম এন্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট’ ‘সার্ভিস সেক্টরের কিছু বিষয় আছে’ এনভায়রন্টমেন্ট, ওয়াটার রিসার্জমেন্ট, ফিশারিজ। এসব বিষয় হয়তো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কিতাব পড়ানো যাবে। কিন্তু এখানে শিক্ষার্থীরা বইয়ে পড়ার পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যালি সেসব উপভোগও করতে পারবেন। বইও পড়ানো যাবে, বাস্তবটাও দেখানো যাবে। এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে কাপ্তাই বাঁধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন কিভাবে আবারো বেঁচে থাকার সংগ্রাম নতুন করে শুরু করেছে সেটিও সরাসরি দেখতে পাবে শিক্ষার্থীরা। এসব কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতিক্রম বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট রয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ট্যুরিজম এন্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট’ এনভায়েরন্টমেন্ট এবং ফিশারিজের সাবজেক্ট আছে। পড়ানো হয়। কিন্তু সেখানে হাতে কলমে শিখার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এখানে সেটি আছে।

আরটিভি অনলাইন: কবে নাগাদ স্থায়ী ক্যাম্পাসে এই বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে মনে করছেন?

প্রফেসর আবদুল মান্নান: স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় তিনশত কোটি টাকার মত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী বছর টেন্ডার কল করা হবে। ডিজিটাল ডিজাইনের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে। আশা করছি আগামী বছর কাজ শুরু হবে। ২০১৯সালের শেষের দিকে ক্যাম্পাসের কিছু ভবন নির্মাণ শেষ হবে এবং ২০২০সাল থেকেই এখানে একাডেমিক ও ক্লাস চালু করা সম্ভব হবে।

আরটিভি অনলাইন: ক্যাম্পাসটি নির্মাণ করা হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের কূল ঘেঁষে এবং পাহাড়ে-ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি হবে কি?

প্রফেসর আবদুল মান্নান: পাহাড় যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে। ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে কোনো পাহাড় কাটা হবে না। অর্থাৎ প্রকৃতি যেমন আছে তেমনই থাকবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে দৃষ্টিনন্দন একটি বিশ্ববিদ্যালয়। পাহাড়-লেক আর প্রকৃতির মাঝে সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় ক্যাম্পাস হবে এটি। আর এটি দেখার জন্য দেশ-বিদেশের লোকজন ছুটে আসবে।

আরটিভি অনলাইন: স্থায়ী ভবন নেই কার্যক্রম ও ক্লাস চলছে ভাড়া করা রুমে। সামনে আরো কয়েকটি ব্যাচ যুক্ত হবে-তাতে সমস্যা কি আরো বাড়বে না তখন?

প্রফেসর আবদুল মান্নান: যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করলে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা দরকার বেশি। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় লোকজনই বেশি উপকৃত হবে। তাই রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত এর কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার জন্য স্থানীয় লোকজনদেরই সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। নতুন ব্যাচ ভর্তি হওয়ার পর সমস্যা বাড়বে কিছুটা। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে স্থানীয় জনগণ ও স্থানীয় প্রশাসনের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় লোকজনদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

আরটিভি অনলাইন: এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু মাত্র ক্লাস আর পরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তেমন একটা দেখা যায় না।

প্রফেসর আবদুল মান্নান: যেহেতু এটি নতুন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সেহেতু নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার মাঝে এর কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। তবে ক্লাস-পরীক্ষার বাইরেও শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রাখতে হবে। যেকোনো দুর্যোগের সময় শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে এবং দুর্গত এলাকার মানুষদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

আরটিভি অনলাইন: বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় দিবসসমূহ পালন করা জরুরি নয় কি?

প্রফেসর আবদুল মান্নান: আমি দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপনের জোর তাগিদ দিয়েছি। আগে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় দিবসসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে করা হতো না। কিন্তু আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সব বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় দিবসসমূহ পালনে বাধ্য করেছি। একইভাবে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও জাতীয় দিবসসমূহ পালন করতে হবে এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে।

আরটিভি অনলাইন: এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা যথাযথ অনুসরণ করা হয়নি এবং অনিয়ম ও অযোগ্যদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে।

প্রফেসর আবদুল মান্নান: যেকোনো নিয়োগে নিয়োগ বঞ্চিতরা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেন। তবে যোগ্যদের নিয়োগে মঞ্জুরি কমিশনের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আর মুক্তিযোদ্ধা কোটা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। নিয়োগ নিয়ে কোনো প্রকার অন্যায় বরদাশত করবে না কমিশন।

জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh