• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

আমেরিকার স্বাধীনতা-গণতন্ত্র-নির্বাচন

মো. কামাল হোসাইন

  ০৭ নভেম্বর ২০১৬, ২২:২৫

বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকা স্বাধীনতা লাভ করে ১৭৭৬ সালে। ২ জুলাই ব্রিটেনের শাসন থেকে আলাদা হবার জন্য ভোট দেয় দেশটির ২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস। দু’দিন পর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় কংগ্রেস। কিন্তু আলাদা হতে ব্রিটেনের সঙ্গে চূড়ান্ত সই ২ আগস্টে অনুষ্ঠিত হলেও প্রত্যেক বছর ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে দেশটি।এরপর গেলো ২৪০ বছরের ইতিহাসে জর্জ ওয়াশিংটন থেকে বারাক ওবামা পর্যন্ত ৪৪ জন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্ব পেয়েছে দেশটি।

শীর্ষ ক্ষমতাধর দেশ হওয়ায় এখানে গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষেরই আগ্রহ রয়েছে। তাছাড়া ৪৪ জনের প্রত্যেকেই বিশ্বের সামগ্রিক রাজনীতি ও অর্থনীতির পালাবদলের ভূমিকায় আলোচিত এবং সমালোচিত। এদের অনেকেই দেশের সীমানা পেরিয়ে, পৃথিবীর ইতিহাসেও স্বমহিমায় উজ্জ্বল-আলোচিত-সমালোচিত। বিশ্বজুড়ে বিতর্কিতও হয়েছেন অনেক প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে রয়েছে নানা রকম ঘটনাও।

আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। দেশটির আইনসভা দু’কক্ষের। নিম্নকক্ষের নাম হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং এর সদস্যসংখ্যা ৪৩৫। উচ্চকক্ষের নাম সিনেট এবং এর সদস্যসংখ্যা ১০০। ভোট দেয়ার যোগ্যতা অর্জনের বয়স ১৮। ১৭৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দেশটির সংবিধান প্রণয়ন করা হয় এবং ১৭৮৯ সালের ৪ মার্চ থেকে এটি কার্যকর করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়।

প্রায় ৪ শতাব্দী আগে প্রণীত আমেরিকার সরকার ব্যবস্থা সারা বিশ্বের প্রশংসা লাভ করেছে। মার্কিনীদের জীবনের সঙ্গে এটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মার্কিন সরকারব্যবস্থা শুরু থেকেই গণতন্ত্রকে শাসনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেছে। মার্কিন সরকার ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয়, প্রাদেশিক ও স্থানীয় আইন, এবং এগুলিকে নির্বাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত। ফেডারেল যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের কেন্দ্র ওয়াশিংটন ডিসি।

আমেরিকা সরকারের একটি মূলনীতি হল প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র। এ ব্যবস্থায় লোকেরা তাদের নিজেদের নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের শাসন করে। মার্কিন গণতন্ত্র বেশ কিছু আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। জনগণকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত মেনে নিতে হবে।সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। নাগরিকদেরকে আইনি শাসন ব্যবস্থায় বাস করার জন্য সম্মত হতে হবে। মতামত ও ধারণার মুক্ত আদানপ্রদানে কোন বাধার সৃষ্টি করা যাবে না। আইনের চোখে সবাই সমান। সরকার জনগণের সেবায় নিয়োজিত হবে এবং এর ক্ষমতা জনগণের কাছ থেকেই আসবে।

এই আদর্শগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমেরিকার সরকারব্যবস্থা ৪টি উপাদান দিয়ে গঠন করা হয়েছে। ১) জনগণের সার্বভৌমত্ব ২) প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ৩) ক্ষমতার পরীক্ষা ও ভারসাম্য (checks and balances) এবং ৪) ফেডারেলবাদ, যেখানে সরকারের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতার অংশীদারীত্ব হয়।

বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার পর ১৭৮৯ সালে আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট হন জর্জ ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রবাদপুরুষ জর্জ ওয়াশিংটন দুই দফায় ছিলেন দেশের প্রেসিডেন্ট।

ক্রীতদাস প্রথা উচ্ছেদের কারণে আব্রাহাম লিঙ্কন এখনো জগদ্বিখ্যাত, তেমনি টমাস জেফারসন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা প্রথম প্রেসিডেন্ট। ৩ দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাদের তালিকায় সবার আগে ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের নাম; এছাড়া জন এফ কেনেডি, রোনাল্ড রিগ্যান এখনো অনুসরণীয় আদর্শ।

কুখ্যাত হয়ে আছেন এমন প্রেসিডেন্টের সংখ্যাও কম নয়। রিচার্ড নিক্সন, যিনি কিনা কেলেঙ্কারির জন্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। গৃহযুদ্ধের জন্য দায়ী ফ্রাঙ্কলিন পিয়ের্স, আর আব্রাহাম লিঙ্কনের অমর কীর্তি ধ্বংস করার কুখ্যাতি রয়েছে অ্যান্ড্রু জনসনের। এছাড়া বিতর্কিত নীতিসহ বিভিন্ন কারণে সবচেয়ে আগ্রাসী ও যুদ্ধবাজ হিসেবে নাম জর্জ ডব্লিউ বুশের।

পাশ্চাত্যের ভোট ব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে রোল মডেল হলেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বেশ কয়েকবার। ১৮০০, ১৮২৪, ১৮৭৬, ১৮৮৮ সালের নির্বাচনসহ ২০০০ সালেও অভিযোগ উঠে কারচুপির।

এবারের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে জনমত জরিপের ব্যবধান বেশ আলোচিত শেষ বেলায়। এ ধরণের ঘটনা অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে- ১৮৭৬, ১৯১৬, ১৯৪৮, ১৯৭৬ সালের মূল নির্বাচনে মাত্র কিছু ভোটের ব্যবধানে হেরে যেতে হয়েছে একজনকে। এমনকি ২০০০ সালের নির্বাচনে বুশের সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ব্যবধান ছিলো মাত্র ৫টি ইলেক্টোরাল কলেজ।

কে/ এসজেড

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh