• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ব্রিটিশ নির্বাচন ২০১৭: ঝুলন্ত পার্লামেন্টের দিকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ০৯ জুন ২০১৭, ০৮:২২

সরকারের মেয়াদ শেষ হবার তিন বছর আগে হঠাৎ করে ডাকা সাধারণ নির্বাচনে ভোট গণনা চলছে। আশাতীত ভাল ফল পাচ্ছে বিরোধী লেবার পার্টি কিন্তু ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি সংসদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অফ কমন্স-এ আছে ৬৫০টি আসন। সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ৩২৬টি আসন।

সবশেষ বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, সম্ভাব্য সর্বোচ্চ আসন কনজারভেটিভদের কাছে যাবার সম্ভাবনা থাকলেও কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। ফলে একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তের জরিপগুলোতেও সামগ্রিক বিচারে কাছাকাছি ধরনের অনুমান প্রকাশিত হয়েছিল। এর আগে গেলো তিনটি নির্বাচনে বুথ ফেরত জরিপের আভাস সত্য বলে প্রমাণিত হয়।

মনে করা হয়েছিল লেবার পার্টি এ নির্বাচনে আসন হারাবে। আর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে আরও জোরালো করবে কনজারভেটিভরা । বুথ ফেরত জরিপ বলছে, লেবাররা্ অনন্ত ৩৪টি আসন বেশি পাবে। তাদের মোট আসন হবে ২৬৬। স্কটিশ জাতীয়তাবাদী দল এসএনপি ৩৪টি এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দল ১৪টি আসন পাবে বলে আভাস দিচ্ছে বুথ ফেরত জরিপ।

৬৫০ সদস্যবিশিষ্ট ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৩২৬ আসন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের দখলে ছিল ৩৩১ আসন। কিন্তু ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন প্রশ্নে নিজের ক্ষমতা আরও নিরঙ্কুশ করতে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে মধ্যবর্তী এ নির্বাচন দেন। ধারণা ছিল অন্তত এক শ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে থেরেসা মে ক্ষমতায় ফিরবেন। এখন বুথ ফেরত জরিপ দলটির এককভাবে ক্ষমতায় ফেরা নিয়েই আশঙ্কা জাগিয়ে দিয়েছে।

২০১৫ সালের নির্বাচনে বুথ ফেরত জরিপে কনজারভেটিভ দল ৩১৬টি আসন পাবে বলে আভাস দিলেও শেষ পর্যন্ত দলটি ৩৩১টি আসন পেয়েছিল। গেলোবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যদি না ঘটে তাহলে থেরেসা মে কে জোট করে সরকার গঠন করতে হবে।

ভোট দিয়ে বুথ থেকে বের হওয়া মানুষদের মধ্যে চালানো হয় বুথ ফেরত জরিপ। বিভিন্ন আসনের ২০ হাজার ভোটারের ওপর এ জরিপ চালানো হয়।

ঝুলন্ত পার্লামেন্ট মানেই জোট সরকার নয়। ব্রিটেনের সংবিধান অনুসারে ঝুলন্ত সংসদ মানে হচ্ছে হাউস অব কমন্সে কোনও একক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা। শুক্রবার ভোটের ফল ঘোষণার পর কোনও দল যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তাহলে থেরেসা মে-ই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। নতুন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হবার আগ পর্যন্ত থেরেসা প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন। তবে সাধারণত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো প্রধানমন্ত্রী বা তার দল সরকার গঠনের উদ্যোগ নেন না। ফলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে জয়ী দল লেবার পার্টির নেতা হিসেবে জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রী হবার দিকে এগিয়ে যাবেন। এ কারণেই থেরেসা মে’র জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজনীয়তা বেশি।

ব্রিটিশ ক্যাবিনেট ম্যানুয়াল অনুসারে, নতুন পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হবার আগ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী স্বপদে বহাল থাকবেন। পার্লামেন্ট বসার পর এমপিরা রাণির ভাষণের অনুমোদন দেবেন। এই হিসেবে ১৩ জুন পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হবে। সেই দিন পর্যন্ত থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন।

অবশ্য এটা একেবারে বাধ্যতামূলক নয়। ক্যাবিনেট ম্যানুয়াল অনুসারে দায়িত্বরত প্রধানমন্ত্রীকে এই সময়ের মধ্যে পদত্যাগের প্রত্যাশা করা হয়েছে। ফলে নির্বাচনে কনজারভেটিভরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের দাবি তোলা হবে। পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ বিরোধীরা লেবার পার্টির করবিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিতে পারেন। আর যদি থেরেসা মে পদত্যাগ করেন তাহলে সরকার গঠনের প্রথম সুযোগ পাবেন করবিন। হাউস অব কমন্সে এমপিদের সমর্থন প্রয়োজন হবে তার।

জোট বলতে ৩২৩ জন এমপি আছে এমন দুই বা ততোধিক পার্টির আনুষ্ঠানিক চুক্তিকে বোঝায়। চুক্তি অনুসারে সব দল থেকেই সরকারে মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১০-২০১৫ সাল পর্যন্ত কনজারভেটিভ-লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা এভাবেই জোট সরকার গঠন করেছিল।

তবে এক্ষেত্রে বিকল্প ও ব্যতিক্রম রয়েছে। এমপিদের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনও দল থেকে মন্ত্রী নিয়োগ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী ছোট দলগুলোর উপর নির্ভর করতে পারেন। সরকারের আর্থিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড যেমন বাজেট ইত্যাদিতে ছোট দলগুলো সরকারকে সহযোগিতা করবে। অন্যথায় আস্থাভোটের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে পারে। ছোট দলগুলো মন্ত্রীত্ব পাবে না কিন্তু তারা তাদের নীতির উপর দাঁড়িয়ে সরকার পরিচালনায় ভূমিকা রাখতে পারে।

এপি

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh