‘ঐ কান্না ভেজা আকাশ আমার ভালো লাগে না’
এটা একটু মজার ব্যাপারই যে, সঞ্জীব চৌধুরীকে আমি না চিনলেও, তিনি আমাকে চিনতেন। ভাবছেন, এতটা বিখ্যাত আমি কী করে হলাম!
তাহলে খুলে বলি। ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে, আমি তখন বিগত কৈশোর, ইন্টারমিডিয়েট পড়ি এমসি কলেজে, লেখালেখির উন্মাদনায় নয়া যৌবনে পা। যখন যেখানে পারি দেদারসে লিখি, গল্প কবিতা চিঠিপত্র ফিচার কলাম সমালোচনা বুক-রিভিউ।
ভোরের কাগজ-এ সোমবার ‘মেলা’ নামে চার পাতার একটা ফিচার সাময়িকী বের হতো। খুবই জনপ্রিয় ছিল সেটা। সেখানে প্রায়ই লিখতাম। আর সে পাতা দেখতেন সঞ্জীব চৌধুরী। কিন্তু আমি তো জানতাম না কোন পাতা কে দেখেন।
পরে ঢাকা যাওয়ার পর দেখা হলে দাদা নিজেই আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। বলতেন, গান দিস। গান। এরপর প্রায়ই ফোনে গানের কথা বলতেন। একদিন ২/৩টা গানের লিরিক লিখে দিই।
‘কান্না ভেজা আকাশ’ গানটা দাদার খুব ভালো লাগে। পাওয়ার দু’এক দিনের মধ্যেই সুর করে ফেলেন। শোনানোর জন্য আমাকে ডাক দেন, পান্থপথ/বাংলামোটরের আন্ডারগ্রাউন্ডে কোনো এক পানশালায়্।
সম্ভবত বাপ্পা মজুমদার, কবি কামরুজ্জামান কামুসহ আরো অনেকেই ছিলেন আড্ডায়। ওই সময় দেশ সাময়িকভাবে আর্মির শাসনে ছিল। গানের একটা লাইন ছিল ‘ওই সবুজ দ্বীপে পুলিশ-ঘাঁটি ভালো লাগে না’, সেটা নাকি রাখা যাবে না, ‘পুলিশ-ঘাঁটি’ হয়ে গেল ‘মরণ-ঘাঁটি’।
এই বাধ্য, অনিচ্ছাকৃত বদলের জন্য তার ভেতর যে কী হা-হুতাশ। তবে গানটি নিয়ে সঞ্জীব দা খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলেন। ফোনেও আমাকে শুনিয়েছিলেন বারকয়েক, সুর টুর ঠিক আছে কিনা। বলতেন আমার বাকি লিরিকগুলোরও সুর করার প্ল্যান করছেন।
আগ্রহ নিয়েই ছিলাম। আর হলো না! শুনেছি, সঞ্জীব দা’র মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার সময় নাকি মাইকে এই গান বাজানো হয়েছিল। প্রাণোচ্ছল, মেধাদীপ্ত, অসাধারণ এক শিল্পী। সশ্রদ্ধ ভালোবাসা, সঞ্জীব দা।
লেখক : শুভাশিস সিনহা, কবি-নাট্যকার। সঞ্জীব চৌধুরীর গাওয়া ‘ঐ কান্না ভেজা আকাশ আমার ভালো লাগে না’ গানের গীতিকবি তিনি। আজ ১৯ নভেম্বর সঞ্জীব চৌধুরীর দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে আরটিভি অনলাইনে সেই গানের স্মৃতিকথা লিখেছেন শুভাশিস সিনহা।
পিআর/এম
মন্তব্য করুন