• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পুরুষ সহকর্মীদের পাশে দাঁড়ান, সহিংসতা থেকে বাঁচুন

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ০৭ মার্চ ২০১৭, ২১:২৮

নারীর প্রতি সহিংসতার কারণে যে সব ক্ষতি হয় তা সামাল দেয়া যে কোন দেশের জন্যই কঠিন। বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার কারণে যে ক্ষতি হয় তা এ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের আনুমানিক ২.১ শতাংশ। প্রতিদিন একটি মেয়েকে বিদ্যালয়ে যেতে এবং একজন নারীকে চাকরি করতে বাধা দেয় সহিংসতা । আর এর ফলে তাদের ভবিষ্যত নিয়ে আপস করতে হয় এবং একটি গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

যারা সহিংসতার শিকার হয় তারা জীবনে শারীরিক ও মানসিক ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকে এবং সামাজিক ও আইনি সহায়তাকে সংগ্রাম করতে হয় তাদেরকে সাহায্য করার জন্য। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা যদি অমূল্য সম্ভাবনা হিসেবে অর্থনীতিতে অবদান না রাখতে পারে তাহলে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনের দিকে বাংলাদেশ কি তার যাত্রা অব্যাহত রাখতে পারবে?

নারী ও পুরুষে সমতা অর্জন করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি। মেয়েশিশু ও নারীদের জীবন মান উন্নয়নে বাংলাদেশ দারুণ অগ্রগতি সাধন করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরকেও ভর্তি করছে। মা ও শিশু মৃত্যুহার অনেকাংশে কমেছে এবং নারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মেরুদন্ড তৈরি করছে।

বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি ক্ষেত্র তৈরি পোশাক খাত ৪০ লক্ষ বাংলাদেশির কর্মসংস্থান করেছে যাদের বেশির ভাগই নারী। এ ক্ষেত্রটিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার কমছে। তবে যাই হোক এ শিল্পটি যেহেতু কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে করে দেশের নীতিমালা ও কর্মসূচীর জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীদের ভূমিকা ও স্থান অবশ্যই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। ক্ষুদ্রঋণের সৃষ্টি ও প্রসার যেখানে অগ্রাধিকার দেয়া হয় নারী উদ্যোক্তাদের তা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করেছে এবং বৈশ্বিক সমৃদ্ধিতে এই ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অবদান।

নারীর প্রতি সহিংসতা এই অগ্রগতিকে রুখে দেয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ৮০ শতাংশেরও বেশি বিবাহিত নারী তাদের জীবদ্দশায় কমপক্ষে একবার নির্যাতনের শিকার হয় তা সে শারীরিক, যৌন, মানসিক বা আর্থিক নির্যাতন অথবা আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ যাই হোক না কেন। বিগত এক বছরে আনুমানিক দুই-তৃতীয়াংশ বিবাহিত নারী তাদের স্বামীদের দ্বারা নিগ্রহের শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানা গেছে। বাল্যবিবাহ এবং মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেয়ার যে উচ্চ হার রয়েছে বাংলাদেশে তা লক্ষ লক্ষ মেয়েদেরকে ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য ও যৌন নির্যাতনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।

আর এই সব নির্যাতনের যারা শিকার হয় তাদের মধ্যে খুব কমই এই সব ঘটনার অভিযোগ দাখিল করে থাকে কারণ বাংলাদেশী আইন তাদের যে সব অধিকার দিয়েছে সে সব অধিকারের কথা তারা জানে না। অথবা তারা প্রতিশোধ, দুর্নামের ভয় পায় বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে খুব একটা সাহায্য পায় না বলে তাদের কাছে যায় না।

কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হবার ভয় অথবা রাস্তাঘাটে চলাফেরার সীমাবদ্ধতা নারীদের উপার্জন করার সুযোগ-সুবিধা সীমিত করে দেয়। যে সব কর্মজীবী নারী বাসগৃহে সহিংসতার শিকার হয় কাজ থেকে বাধ্য হয়ে দূরে থাকার কারণে তাদের আয়-রোজগার কমে আসে এবং অনেক ক্ষেত্রে চাকরিতে যেতেও পারে না। নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করা গেলে তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরই আরো প্রসার ঘটাবে।

নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ন্যায় আর অন্যায়ের মতো সরল একটা বিষয়; একটি অহিংস সমাজ গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হচ্ছে নারী ও মেয়ে শিশুরা যেন কোনো প্রকার নির্যাতন আর সহিংসতার ভয় ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে এমন সমাজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আর তা শুধু নারী ও মেয়ে শিশুদের জন্যই নয়, পুরুষ ও ছেলেশিশুদের জন্যও তা নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতার চক্রের অবসান ঘটানোর জন্য প্রয়োজন সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা গড়ে তোলা এবং সবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা। পরিবর্তন শুরু হতে পারে স্থানীয় উদ্যোগের মাধ্যমেও।

একটি উদাহরণ হচ্ছে “সখি” প্রকল্প –- নেদারল্যান্ডস দূতাবাস-এর অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ উইমেন্স হেলথ কোয়ালিশন, মেরি স্টোপস বাংলাদেশ এবং উই ক্যান বাংলাদেশ এর যৌথ সমন্বয়ে বাস্তবায়িত এই প্রকল্পটি ঢাকার পনেরোটি বস্তির নারীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয় কিভাবে তাদের পরিবারের জন্য আয় করতে হবে, তাদেরকে যোগাযোগ করিয়ে দেয় চাকরি মেলার মাধ্যমে সম্ভাব্য চাকরি দাতাদের সাথে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে। কক্সবাজার জেলায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে এমন নারীদের জীবিকা উন্নয়নে বিশ্ব খাদ্য সংস্থাকে (ডব্লুএফপি) সহায়তা করছে অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য। সেখানে স্বনির্ভর নারী গোষ্ঠী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলছে জমা টাকা দিয়ে যেখানে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী অবদান রাখছে তাদের সঞ্চয় দিয়ে এবং প্রত্যেক নারী সম্পদ কিনতে পারছে ও উদ্যোক্তা হবার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পারছে।

সবাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে ও দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে মনোভাবের পরিবর্তন এবং অর্থনীতির মৌলিক বিষয়াবলী ও প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনাই হবে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনের ফর্মুলার প্রধান অংশ। নারী ও মেয়েদের সামাজিক মর্যাদা এবং তাদের অধিকার নিশ্চিতকরণ এই পরিবর্তনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নারীর প্রতি সহিংসতাকে প্রত্যখ্যান করা, একে সহ্য না করা এবং যারা এই ধরনের সহিংসতার শিকার তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার মত সাধারণ কিছু পদক্ষেপ “অ্যামব্যাসাডর্স ফর চেঞ্জ” গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা প্রত্যেকেই এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারি। আমরা আপনাদের প্রত্যেককে আহ্বান করছি আমাদের পাশে দাঁড়াতে। আহ্বান করছি আমাদের বাংলাদেশী বোনদের, পুরুষ সহকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর যাতে করে নারীর প্রতি সহিংসতাকে আমরা নির্মূল করতে পারি।

“অ্যামব্যাসাডর্স ফর চেঞ্জ”-এ প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার জুলিয়া নিব্লেট, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত ওয়ানজা ক্যাম্পোস দ্য নোব্রেগা, ব্রুনাই দারুসসালামের হাই কমিশনার হাজাহ মাসুরেই বিন্তি হাজি মাস্রি, কানাডার হাই কমিশনার বেনওয়া পিয়েরে লারামে, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি অবেয়ার, মালয়েশিয়ার হাই কমিশনার নুর আশিকিন মোহাম্মাদ তায়েব, নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিওনি মারগারেথা কুলেনারে, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন, শ্রীলংকার রাষ্ট্রদূত ইয়াসোজা গুনাসেকেরা, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ইয়োহান ফ্রিজেল, যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত এলিসন মেরী ব্লেইক, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের মিশন ডিরেক্টর ইয়ানিনা জারুজেলস্কি, ইউএন উইমেন কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন হান্টার, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল(ইউএনএফপিএ) ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ লরি কাটো ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি(ডব্লিউএফপি) কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস্টা রাডার।

এফএস/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • এডিটর'স চয়েস এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh