• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

হুন্ডির জন্য কমছে রেমিটেন্স

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ০৪ জুলাই ২০১৭, ২২:৪৯

হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর কারণে দেশে প্রবাসী আয় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। প্রতিমাসে কমছে রেমিটেন্স (প্রবাসী আয়)। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানোর রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। যা গেলো পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এসেছিল। সে হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমেছে ২১৬ কোটি ডলার। ফলে প্রবাহ কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ।

গেলো অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ সালে ১৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার, ২০১৪-১৫ সালে ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার, ২০১৩-১৪ সালে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার, ২০১২-১৩ সালে ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, একক মাস হিসেবে জুনে প্রবাসী আয় এসেছে ১২১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। তবে এর আগে মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। ফলে একক মাস হিসেবে রেমিট্যান্স কমেছে ৫ কোটি ৩০ লাখ। এছাড়া এপ্রিল মাসে ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার, মার্চে এসেছিল ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৯৪ কোটি ৭ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে আসে ১০০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ, নভেম্বরে ৯৫ কোটি ১৩ লাখ, অক্টোবরে ১০১ কোটি ৯ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১০৫ কোটি ৬৬ লাখ, আগস্টে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ এবং অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো প্রক্রিয়া কঠিন হওয়ায় প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন। কারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতের সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে। রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে গ্রাহক সেবা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোকে বেশি মনোযোগী হতে হবে। প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে সিস্টেমের আওয়তায় এনে রেমিটেন্স বাড়ানো যেতে পারে। দেশে কার কাছে টাকা পাঠাবে, কে পাবে জবাবদিহীতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের মতো তাদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া, সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে রেমিটেন্স বাড়ানো যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, তবে গেল কয়েকমাসে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। অর্থাৎ আয় কমে যাওয়ায় রেমিটেন্সে কিছুটা কমতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের নানা সঙ্কটে ইউরো ও পাউন্ডের দাম পড়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে প্রবাসী আয় কিছুটা কমেছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। অর্থাৎ আয় কমে যাওয়ায় রেমিটেন্স কমে গেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ কমে যাওয়া প্রবাসী কর্মীরা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহারসহ নানা উপায়ে দেশে টাকা পাঠাতে আগের চেয়ে বেশি উৎসাহ বোধ করছেন। প্রবাসী আয় কেন কমছে, তা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি প্রতিনিধিদল গেলো মার্চ মাসে গিয়েছিল সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব। প্রতিনিধিদল দুটির নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মো. আখতারুজ্জামান ও মহাব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমান। তারা এসে প্রতিবেদন দিয়েছেন গর্ভনরের কাছে।

তিনি আরো বলেন, মূলত তিন দেশে গিয়ে দলটি দেখেছে, বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার নামে দেশের দু’টি প্রতিষ্ঠান দেশে অর্থ পাঠাচ্ছে। শুধু মোবাইল নম্বর দিয়েই টাকা জমা দেয়া যাচ্ছে। ৫-১০ মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশের বিকাশ হিসাবে এ টাকা জমা হয়ে যাচ্ছে। শুধু এ তিনটি দেশ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এজেন্টের মাধ্যমে এ কাজ করা হচ্ছে। যা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে। বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। ফলে এভাবে রেমিটেন্স কমায় এ হারের পরিমাণ আরো কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমসি /এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh