• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মেয়রকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখলেন না মাংস বিক্রেতারা

মিথুন চৌধুরী

  ২৯ মে ২০১৭, ২৩:২৫

মেয়রের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখলেন না মাংস ব্যবসায়ীরা। প্রথম রোজা থেকে থেকে রমজানমাস জুড়ে রাজধানীতে কম দামে মাংস বিক্রির কথা বললেও তা করছেন না ব্যবসায়ীরা।

গেল ২৩ মে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের(ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বৈঠকে কম দামে মাংস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দেন। তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে বৈঠক শেষে সাঈদ খোকন রমজানে মাসে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেন।

সাঈদ খোকন প্রতি কেজি বিদেশি গরু বা মহিষের মাংস ৪৪০ টাকা, প্রতি কেজি দেশি গরু মাংস ৪৭৫, প্রতিকেজি ভেড়া বা ছাগীর মাংস ৬২০ টাকা বেঁধে দেন। আর সিটি কর্পোরেশন এ দাম মনিটরিংয়ের কথাও বলেন।

এছাড়া মাংস ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী অথবা কামরাঙ্গীরচরে গরুর স্থায়ী হাট করার ঘোষণা দেন মেয়র।

কিন্তু সোমবার রমজানের দ্বিতীয় দিনে মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার, চকবাজারের মৌলভীবাজার, পলাশীর কাঁচাবাজার, শান্তিনগর বাজার, কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাংস ব্যবসায়ীরা রমজান মাসের বেধে দেওয়া দামে মাংস বিক্রি না করে উল্টো বাড়িয়ে বিক্রি করছে। প্রতি কেজি গরু ৪৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা, খাসি প্রতি কেজি ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছে তারা। এছাড়া ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানীতে মহিষও বেড়ার মাংস বিক্রি হয় না। ভারত থেকে আমদানি না থাকায় রাজধানীতে কোন বিদেশি গরু পাওয়া যায় না।

অনেক বাজারে মাংসের দোকানগুলোতে এখন পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত দামের ব্যানার লাগানো হয়নি। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন থেকে মনিটরিং করার কোন খবর পাওয়া যায় নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, লোকসান করে রমজান মাসে যাতে জনগণ গরুর গোস্ত খেতে পারে তাই কমদামে মাংস বিক্রি করছে। মহিষের মাংস পাওয়া যায় বলেও স্বীকার করেন। ডিএসসিসি ব্যানার লাগানো হয়েছে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের(ডিএনসিসি) মাংস ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে তালা থাকায় এ ঢাকার উত্তরে অঞ্চলে ব্যনার লাগানো হয়নি বলে জানান রবিউল।

গেলো ৩০ এপ্রিল মাংস ব্যবসায়ী সমিতির ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকটি ইস্যুতে আলোচনা করতে আমরা গেলো ১৫ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দুই মেয়রকে চিঠি দিয়েছি। আমরা বৈঠকে বসতে চাই। আমরা কিছু বিষয়ে সমাধান চাই। যেটা হলে আরো কম দামে মাংস বিক্রি করতে পারবো। না হলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আলোচনায় না বসলে পহেলা রমজান থেকে কর্মবিরতি পালন করা হবে।

কর্মবিরতির কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে সচিবালয়ে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা বিষয়ক এক বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ দাবি-দাওয়া নিয়ে শিগগির মাংস ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকের ঘোষণা দেন। পরে তারা কর্মবিরতির ঘোষণা তুলে নেন।

পরে ২৩ মে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি বৈঠক করেন।

এর আগে গেলো ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় দিনের কর্মবিরতি পালন করেছিলেন মাংস ব্যবসায়ীরা। কর্মবিরতির পর হঠাৎ করে কেজি প্রতি গরুর মাংসের দাম বিক্রেতারা এক দাপে ৪২০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। বিক্রেতাদের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তারা সমিতির ওপর দোষ চাপান।

দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ৫০ টাকার সরকারি ইজারা ৩০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে গাবতলী হাট ইজারাদার। এছাড়া মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজিও হচ্ছে।

তিনি বলেন, কয়েক দফা দাবিতে ৭ দিনের ধর্মঘট করা হয়। এ ধর্মঘটের পর ইজারাদার উল্টো ক্ষেপে নির্যাতন ও চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে গরুর দাম বেশি পড়ছে। এতে করে গড় হিসেবে বেড়ে যাচ্ছে মাংসের দাম। সরকার এসব ঝামেলা দূর করে আমাদের দাম বেঁধে দিক। আমরা বেঁধে দেয়া দামেই মাংস বিক্রি করবো।

এজিবি কলোনি কাচা বাজারে মাংস কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুমন ইসলাম বলেন, দিন দিন যেভাবে মাংসের দাম বেড়ে যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে গরুর মাংসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। তা না হলে কেনো মাংসের দাম বাড়তি নিয়ে প্রশাসনের মাথা ব্যথা নেই। আর মাংস ব্যবসায়ী অজুহাত ধার করে দফায় দফায় মাংসের দাম বাড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দিবো।

অন্যদিকে কারওয়ান বাজারে আরেক ক্রেতা জহিুর উদ্দিন বলেন, দাম নির্ধারণ করে কি লাভ হলো। মানুষ গরুর দামে মহিষের মাংস খাবে। যাদের টাকা আছে তারা হাজার টাকা কেজি হলেও মাংস খেতে পারবে। কিন্তু যাদের টাকা নেই তারা কি করবে?

এমসি/ওয়াই

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh