• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বাজেট ভর্তুকি পাবার আশায় সরকারি ৫ ব্যাংক

মিথুন চৌধুরী

  ১০ মে ২০১৭, ২২:৫৭

সরকার 'মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ' নামে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আসছে প্রতি বাজেটে। মূলধন হারানো সরকারি ৫ ব্যাংক এবারো বাজেট ভর্তুকির জন্য প্রহর গুনছে। আসছে ১ জুন ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণার কথা রয়েছে। মূলত ঋণ খেলাপি ও অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসুত্রে প্রতিবছরই মূলধন ঘাটতিতে ভুগছে ব্যাংকগুলো।

২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ৫টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। এদিকে চলতি অর্থবছরে মূলধন জোগান দিতে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য (২০১৬-১৭) ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে।

ঘাটতি মূলধন রয়েছে সোনালী ব্যাংক ৩ হাজার ৪৭৫ কোটি, বেসিক ব্যাংক ২ হাজার ৬৮৪ কোটি ও রূপালী ব্যাংক ৭১৫ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৭ হাজার ৮৩ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৭৪২ কোটি টাকা।

এদিকে বাজেট নিয়ে আলোচনা চলতে না চলতে মূলধন ঘাটতি পূরণে ব্যাংকের কর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাতায়াত বেশ বাড়িয়ে দিয়েছেন। নিজেদের ঘাটতি পূরণে এরইমধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূলধন জোগান চেয়ে আবেদন করেছে ব্যাংকগুলো। ২০১১-১২ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫৫০ কোটি বরাদ্দ রাখা হয় মূলধন ঘাটতি পূরণে। এর মধ্যে মূলধন ঘাটতিতে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ হাজার কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো দুর্বল হচ্ছে নিজস্ব অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে। জনগণ কেন সেই অদক্ষতা, দুর্নীতির ভাগ নেবে? সরকারি ব্যাংকগুলোকে চলতে হবে নিজের অর্থে। জনগণের করের টাকা দিয়ে মূলধন যোগান দিতে থাকলে এসব ব্যাংক কখনোই নিজের শক্তি-সক্ষমতায় দাঁড়াতে পারবে না। তিনি বলেন, এটা যৌক্তিক নয়, নৈতিকও নয়। মানুষ তো তার করের টাকায় দুর্নীতিকে উৎসাহিত করতে দিতে পারে না। অসংখ্যবার সরকারি ব্যাংকগুলোকে এ সুযোগ দেয়া হয়েছে, তা আর নয়। এবারের বাজেটে যেন এ ধরনের কোন বরাদ্দ না রাখা হয় সে দিকে নজর দিতে হবে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে বলেছেন বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ৮০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। তবে চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সব সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বিপরীতে নগদ আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়, ব্যাংকগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদনে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। পরে আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে আরো ৪ হাজার ৭১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের তথ্য ফাঁস হয়। এর মধ্যে জনতায় ১৭৭১ কোটি, অগ্রণীর ৯২৭ কোটি, রূপালীর ৬৯১ কোটি ও সোনালী ব্যাংকে ৬৮২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকগুলো প্রায় ৬ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে অবলোপনকরা কু-ঋণ রয়েছে আরো ৪২ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। এ সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতেই সর্বাধিক পরিমাণ খেলাপি ঋণ রয়েছে।

এদিকে খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় অনিশ্চিত ২ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ৪ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ১ হাজার ৫ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৭০৯ কোটি টাকা। এছাড়া ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় অনিশ্চিত ৯৬ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকের খেলাপি রয়েছে ৪৪৪ কোটি টাকা। যাতে আদায় অনিশ্চিত ৪১৩ কোটি টাকা।

এদিকে ব্যাংক এশিয়ার খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮০৫ কোটি টাকা। যা আদায় অনিশ্চিত ৭৪৪ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংকের খেলাপি রয়েছে ৬৮২ কোটি টাকা। এতে আদায় অনিশ্চিত ৫৫৩ কোটি টাকা।

এছাড়া যমুনা ব্যাংকের খেলাপি ৪০৫ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৩৭৩ কোটি টাকা। সিটি ব্যাংকের খেলাপি ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৯২০ কোটি টাকা।

এছাড়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের খেলাপি ৮৬৩ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৮১৪ কোটি টাকা। এবি ব্যাংকের খেলাপি ৬৬৬ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৫৫৯ কোটি টাকা। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের খেলাপি ৬৭২ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৬৬২ কোটি টাকা। উত্তরা ব্যাংকের খেলাপি ৬২৬ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৪৪৫ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় অনিশ্চিত ১ হাজার ২৩ কোটি টাকা।

অপরদিকে বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার খেলাপি ঋণ ৫৭ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৪৪ কোটি টাকা। কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের খেলাপি ৫০ কোটি টাকা। এ ব্যাংকেও আদায় অনিশ্চিত ৪৭ কোটি টাকা এবং উরি ব্যাংকের খেলাপি প্রায় ৩১ কোটি টাকা। আদায় না হওয়ার হিসাবে আছে ২৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন, তারা ভালো গ্রাহক। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের গ্রাহককে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হয়। অথচ মন্দ গ্রাহকরা ব্যাংকের কাছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। যদিও মন্দ গ্রাহককে দেয়া ঋণ কোনো দিন ফেরত আসবে না, এটা সবাই জানে। তবে ঋণ খেলাপি বন্ধ করতে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

এমসি/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh