• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

রাজধানীবাসীকে সুবাসিত করল ফুলের মেলা

মিথুন চৌধুরী

  ০১ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:৩১

‘ফুলের ভার যে পাহাড় বহিতে নারে
দখিনা বাতাস নড়ে উঠে বারে বারে।’

পল্লী কবি জসীমউদ্দিনের ‘ফুল নেয়া ভাল নয়’ কবিতার লাইনের মতো- ‘শিশু থেকে বয়সের ভারে নত সবার হৃদয়ে দোল দিয়ে যায় ফুল। ফুলের সনে প্রেম নেয় এমন মানুষ খুব কম মিলে। তাই বোধ হয় পুরো ধরনী সেজেছে বিভিন্ন ফুলের রঙে। ফুলের সুবাশ আর রং ঢং এ নিমিষে রাঙিয়ে তুলে মানুষের মন। ফুলের সাথে সবার বন্ধুত্ব, যেন শত্রুতা নেই।’

কোমলতা, পবিত্রতা আর ভালোবাসার প্রতীক এই ফুল। প্রিয় মানুষকে উপহার দিতেও ফুলই সেরা। হৃদয়ের গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপনেও ফুলেল পবিত্রতা শেষ আশ্রয়। আর তাইতো ফুল নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। আর রাজধানীর যান্ত্রিকতা কাটতে কিছুটা উচ্ছ্বাসে ছড়াতে দ্বিতীয় বারের মতো রাজধানীতে আয়োজন হলো 'ফ্লাওয়ার ফেস্ট'।

বাংলা একাডেমির সামনে যেতে না যেতে ফুলের সুবাস টেনে নিয়ে মেলার মূল প্রাঙ্গণে। এ যেন ফুলের রাজ্য। চারদিকে ফুল আর ফুল। ফুল নিয়ে খেলছে সবাই। ফুলের সাজে সাজতে মাতোয়ারা তরুণী ও শিশুরা। সেলফি আর দর কষাকষিতে ব্যস্ত অনেকে। যেন ফুলপ্রেমীদের মিলনমেলা। মেলার ১৪টি প্যাভেলিয়ন ও ৩৩টি প্রদর্শনী স্টলেই দেখা গেছে ফুলপ্রেমিদের ভিড়।

প্রতিটি স্টলে থরে থরে সাজানো ফুল। তাজা ফুলের গন্ধে ভরে উঠেছে গোটা মিলনায়তন। ফুলের প্রদর্শনী, ফুলের ওপর ফ্যাশন শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-সব মিলিয়ে ফুল নিয়ে এ এক ফুলময় উৎসব।

হাজার রকমের ফুলের মেলায় সেলফি আর ফুলের সঙ্গে নিজের ছবি তুলতে যেন কেউ ভুল করেনি। মেলায় বিভিন্ন ইভেন্ট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের সেলফি ও ফটো কর্নার মেলায় দিয়েছে প্রাণ। যার মধ্যে রয়েছে বাঘ, হাতি, লাভ জোন, স্টেজ জোন, পালকি। এছাড়া দোলনা আর সিসিমপুরে হালুমের সঙ্গে খেলতে শিশুরাও ভুল করেনি।

ফুলের পালকিতে বসে ছবি তুলছিল সাবিনা জিন্নাত। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যে পড়ে। তার সঙ্গে এসেছে বান্ধবী সুরাইয়া। সুরাইয়া তার ছবি তুলে দিচ্ছিলেন। সাবিনা জানান, ফুল নিয়ে এমন আয়োজন আসলে অন্যরকম আনন্দ। মেলায় দেশাত্ববোধক গান হচ্ছে পাশাপাশি ফুলের সঙ্গে ছবি তোলা অন্যরকম আনন্দের। মাথায় ফুলের মুকুট পড়ে নিজেকে ফুল রাজ্যের রানী মনে হচ্ছে। সবাই আনন্দ করছে, বিশেষ করে শিশুরা। তারা ফুলকে চিনতে পারছে, জানতে পারছে।

সাবিনার সঙ্গে একই সূর মেলালেন রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আসা সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, এমন আয়োজন আসলে ভালো উদ্যোগ। এ মেলায় ফুল উৎপাদক, ফুল ব্যবসায়ী, ফুল সাজসজ্জা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। ফলে নিজেদের অনুষ্ঠানেও আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবো।

মেলায় ঘুরতে নয় বরং ফুল ব্যবসার সঙ্গে কীভাবে নিজেকে জড়ানো যায় এমন ভাবনা নিয়ে মেলায় এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুরাইয়া সিমু। সিমু জানান, নারীরা এখন পিছিয়ে নেই। আর ফুল চাষীরা অধিকাংশই নারী। এছাড়া বিভিন্ন ইভেন্ট হাউজগুলো নারীরা পরিচালনা করছে। তাই কীভাবে ফুল নিয়ে কাজ করা যায় তা জানতে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে কথা বলছি।

মেলায় স্টলে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন- গেল বছরের তুলনায় এবারের মেলায় বেশ আনাগোনা। দুপুর থেকে মেলায় মানুষের ঢল নামে। দর্শনার্থীরা মেলায় ফুলের নাম, ফুলের দাম ও পরিচর্যার বিষয়ে খোঁজখবর নেন।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির আয়োজনে আয়োজিত এ মেলায় চলেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। এছাড়া মেলায় ফুলচাষী ও নারী উদ্যোক্তাদেরও দেখা যায়।

আয়োজকরা বলছে- গেলবার মেলায় ৩০ হাজার ফুলপ্রেমীর আনাগোনা দেখা গেলেও এবার তা ৫০ হাজার ছাড়াবে।

এদিকে ৩০ মার্চ শুরু হওয়া এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে। যার পর্দা নামে ১ এপ্রিল।

এমসি/ এএইচসি/এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh