• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বই নেই স্কুলে, টাকায় মেলে দোকানে

জয়নুল আবেদীন, চট্টগ্রাম

  ২৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:২৮

বছরের একটি মাস শেষ হতে চললো। অথচ প্রাথমিকের সব বই এখনো চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের হাতে আসেনি ।

স্কুলে স্কুলে বই না এলেও বাইরের বইয়ের দোকানে খুব সহজেই মিলছে বোর্ডের বই।

মুন্নী দেব চট্টগ্রামের কদম মোবারক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। সে শ্রেণির বই পেয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করতেই আরটিভি অনলাইনকে বলেন, স্কুল থেকে ২টি বই পেয়েছেন তিনি। বইগুলো হলো-বাংলাদেশের বিশ পরিচয়, হিন্দু ধর্ম। এছাড়া বাকি বইগুলো পায়নি মুন্নি। তবে স্কুল থেকে বই না পেলেও চতুর্থ শ্রেণির বাংলা, অংক ও ইংরেজি বই কিনেছেন লাইব্রেরি থেকে। কোন দোকান থেকে কিনেছেন, জিজ্ঞেস করতেই এড়িয়ে গেলেন বিষয়টি।

কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র স্বরুপ দাশ। তার কাছে পাওয়া গেল চতুর্থ শ্রেণীর সব বই। বই কোথায় পেয়েছে জিজ্ঞেস করলে জানা যায় তার বাবা কোন এক বন্ধুর কাছ থেকে নিয়ে এসেছে বইগুলো।

আরটিভি অনলাইনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে শাহী জামে মসজিদ মার্কেটসহ আশে পাশের সব বইয়ের দোকানে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির সকল বোর্ড বই। মার্কেটটির সৈয়দ বুকস থেকে ক্রেতা সেজে ১৬০ টাকায় দুই ধাপে কেনা হলো চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা, অংক ও ইংরেজি বই। রিসিট চাইতেই সাহস করে রিসিটও দিয়েছেন লাইব্রেরীর মালিক। কেবল সৈয়দ বুকস নয় লিজেন্ড লাইব্রেরী, বুক লাইন, বুক ফেয়ার লাইব্রেরীসহ এই মার্কেটের প্রায় সব দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে প্রাথমিকের বোর্ড বই।

পরের দিনে ফের যাওয়া হলো সৈয়দ বুকসে। এবার সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে হতচকিত হয়ে গেলেন মালিক আবসার উদ্দীন। এসব বোর্ড বই কোথা থেকে পান জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘আমরা ছোট দোকানদার। ব্যবসা নেই, দুই একটা বোর্ড বই পাইকারদের কাছ থেকে নিয়ে এসে বিক্রি করি লাভের আশায়।’ পাইকারদের নাম জানাতে বললেই প্রথমে গড়িমসি, তারপর জানালেন প্রীতম বুকস, নুরীয়া লাইব্রেরিসহ কয়েকটি পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নাম।

পরে প্রীতম বুকসের স্বত্বাধিকারী কানু চৌধুরী বসেছিলেন দোকানে। তাকে ৪র্থ শ্রেণীর বই আছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই আছে জবাব দিয়ে বলেন, ‘বাংলা আছে তবে অন্যান্যগুলোর জন্য সময় দিতে হবে।’ সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসব বোর্ড বই কোথা থেকে আনেন, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার বাংলাবাজার থেকে আনি। ওখানে অনেক দোকানেই এসব বই বিক্রি করা হয়। তবে কোন নামধাম নাই। ফোন দিলে তারা বই যোগাড় করে রাখে। আমরা টাকা দিয়ে নিয়ে আসি।’

অথচ মহানগরের কোতোয়ালী, পাঁচলাইশ ও চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী,পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী থানার শত শত প্রাথমিক স্কুলে সব শ্রেণির সম্পূর্ণ বই এখনো শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেনি। বই না পেয়ে হতাশ শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ অভিভাবকরা। প্রতিনিয়ত বইয়ের জন্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে চলছে কথা কাটাকাটি। বইয়ের অভাবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হারও কমে গেছে। বছরের একটি মাস শেষ হলে চললেও সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে অভিভাবকদের মাঝেও।

এদিকে ক্রেতা সেজে গেলেই লাইব্রেরীতে পাওয়া যাচ্ছে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর সব বই। বিশাল একটি চক্র বিনামূল্যে বিতরণের জন্য এসব বোর্ড বইয়ের ব্যবসা করে যাচ্ছে অনেকটা বুক ফুলিয়ে। আর স্কুল থেকে বই পাওয়ার আশায় বুক বেধে বসে আছে শত শত স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রামের কয়েকটি থানার স্কুলগুলোতে বই নেই কিন্তু লাইব্রেরিতে বই পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা আরটিভি অনলাইনকে বললেন, বাইরে বই বিক্রির বিষয়টি আমি জানি না। যেসব দোকানে বই বিক্রি হচ্ছে, তাদের তালিকা পেলে আমরা জেলা প্রশাসনকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য আবেদন করবো।’

এসএস/এসজেড

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh