• ঢাকা রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পাঁচবিবিতে ঝুঁকির অজুহাতে গাছ কেটে সাবাড়

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:০০

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত গ্রামের বিভিন্ন স্থানে লাগানো গাছগুলো ঝুঁকির অজুহাতে চলছে নিধন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জলবায়ু সহিষ্ণু বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকার থেকে অপ্রয়োজনে গাছ না কাটা ও পতিত জমিসহ রাস্তার ধারে বেশি বেশি করে গাছ লাগার কথা বলা হলেও সরকারের এই পোগ্রামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জয়পুরহাট জেলার সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য গাছ নিধন করছেন। চেয়ারম্যান সামাজিক বন বিভাগে যে দরখাস্ত দেন তাতে ইউনিয়ন কর্তৃক গাছ কাটার রেজুলেশন ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতির কোনও রেজুলেশন কপিও সংযুক্ত করা হয়নি বলে বনবিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের রাস্তায় যানবাহন, মানুষের চলাচল, যান-মালের ক্ষতির অজুহাতে ঝুঁকিযুক্ত গাছকে অপসারণের নামে পাটাবুকা, সুলতানপুর, নওদা এলাকায় বড় গাছও কেটে ফেলা হয়েছে।

বগুড়া বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের (সামাজিক বন বিভাগ) গাছ কাটার অনুমতিপত্র সূত্রে জানা যায়, বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে জয়পুরহাট সামাজিক বন বিভাগে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ গাছের মূল্য নির্ধারণসহ গাছ কাটার দরখাস্ত করেন, সেই সময়ে দরখাস্তে উল্লেখিত স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ গাছের ঘটনাটি সত্য নয় বলে এলাকাবাসীদের তথ্য মতে জানা যায়।

দরখাস্তের প্রেক্ষিতে জয়পুরহাট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোনও প্রকার গাছ পরিদর্শন ছাড়াই ২০১৮ সালের জুন মাসে গাছের সংখ্যা উল্লেখ ছাড়াই কিছুসংখ্যক গাছের মূল্য নির্ধারণের জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুমতির জন্য পাঠায়। এরই প্রেক্ষিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ সুবেদার ইসলাম বনজদ্রব্য পরিবহন (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০১১ এর বিধি মোতাবেক কিছু শর্তসাপেক্ষে গাছ বিক্রয়সহ কাটার অনুমতি দেন।

অনুমতিপত্রের শর্তে দরপত্রের মাধ্যমে গাছ বিক্রির কথা থাকলেও চেয়ারম্যান কোনও দরপত্র না দিয়েই ৭০ হাজার টাকাই জনতা ‘স’ মিলের কাছে গাছগুলো বিক্রি করেন। প্রতিবেদকের কাছে জনতা ‘স’ মিলের স্বত্বাধিকারী মো. আলম গাছ কেনার কথা স্বীকার করলেও তিনি বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়ের অনুমতিপত্র ছাড়া দরপত্রের কোনও কাগজই দেখাতে পারেনি। গাছ কাটার পর দ্বিগুণ গাছ লাগানোর কথা থাকলেও ওই এলাকায় নতুন গাছ লাগানোর কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। এছাড়াও বনজ দ্রব্য নিবন্ধনকৃত ডিপো ব্যতীত ‘স’ মিল এলাকায় কাটা গাছ মজুদ করা যাবে না শর্ত থাকলেও তা না মেনে সরাসরি ‘স’ মিলে কাটা গাছ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয় কর্তৃক অনুমতিপত্রে গাছের সরকারি মূল্যে নিম্ন দাম ধরা হয়েছে, যেমন- পাটাবুকা মকবুল সরদারের বাড়ির রাস্তার মোড়ের ওপর রেইট্রি গাছটি ছয় হাজার ২১১ টাকা, বটগাছটি তিন হাজার ৭৫০ টাকা, পাটাবুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তার পাশের বটগাছ তিন হাজার টাকা, নওদা সরদারপাড়া এলাকায় রেইনট্রি গাছ পাঁচ হাজার ৩৬০ টাকা, নওদা হিন্দুপাড়া রাস্তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের রেইনট্রি গাছ পাঁচ হাজার ৫৩৬ টাকা, কাশপুর সুলতানপুর মুক্তিযোদ্ধা তেজেন মাস্টারের বাড়ির পাশের ৩৮২ টাকা ভ্যাটসহ মোট ৩৪ হাজার ৭ শত ৯৭ টাকা। গাছের প্রজাতি ও সাইজ অনুপাতে যে সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা অবাস্তব বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী বলেন, গাছগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে কিন্তু এত ঝড়-বৃষ্টি গেল তবুও গাছগুলো পড়ে যায়নি। এদিকে গাছগুলো যদি বড়ই না হবে তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ হলো কেমন করে, গাছের যে সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে গাছের একটা শাখার দাম তাই হবে, এতে করে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। আসলে সবকিছুই চেয়ারম্যান করছেন ক্ষমতার জোরে।

গাছ ক্রেতা জনতা ‘স’ মিলের স্বত্বাধিকারী মো. আলম জানান, সামাজিক বন বিভাগের কাগজের ভিত্তিতে গাছ ক্রয় করেছি।চেয়ারম্যান মোটের ওপর মূল্য ধরে আমার কাছে গাছ বিক্রি করেছে। কোনও দরপত্রের মাধ্যমে গাছ ক্রয় করিনি।

সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্য রেজা সরদার ও জহর আলী বলেন, গাছ কাটার রেজুলেশনের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।তবে কিছু কিছু গাছ ঝুঁকিপূর্ণ আছে এটা ঠিক। যখন এলাকায় গাছ কাটতে আসে তখন জানতে পারি গাছ কাটার জন্য দরপত্র হয়েছে।

বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান চৌধুরী বিপ্লব জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় এলাকাবাসী ও ইউপি সদস্যদের অনুরোধে রেজুলেশন করে গাছ কাটার অনুমতি চাওয়া হয়েছে এবং দরপত্রের মাধ্যমে গাছ বিক্রয় করা হয়েছে।

সামাজিক বন বিভাগের ফরেস্টার বাহার উদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গাছ পরিদর্শন করে মূল্য নির্ধারণসহ গাছ কাটার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

সামাজিক বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মির্জা মাহবুবুল জানান, আমি নতুন এসেছি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। তবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল আলম জানান, আমি ছুটিতে ছিলাম, গাছ কাটা যদি নিয়মমাফিক হয় তবে সমস্যা নেই। নিয়ম-মাফিক না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন :

জেবি/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
হরিণাকুন্ডুতে পাখিদের জন্য গাছে গাছে পানির পাত্র
গাছ কেটে বিষাক্ত নগরে পরিণত করেছে সরকার: রিজভী
সিরাজগঞ্জে গাছে ধাক্কা দিয়ে উড়ে গেল বাসের ছাদ, নিহত ১
‘পরিবারের লোকজনও আমাদের শুধু টাকার গাছ মনে করে’
X
Fresh