• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পাহাড়ে অবৈধদের উচ্ছেদ অভিযানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

  ২০ মে ২০১৮, ১৩:৪৭

চট্টগ্রামের প্রায় ৩০টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের উচ্ছেদে অভিযানে নামছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। প্রথম দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান শেষ হয়েছে। ১০০টি বসতি উচ্ছেদ করা হয়েছে।

নগরের আকবরশাহ রেলওয়ে কলোনিতে অবৈধ বসতি উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

রোববার সকালে কোতোয়ালি সার্কেলের সহকারী কমিশনার কাটতলী (ভূমি) শেখ জোবাইর আহমেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

সহকারী কমিশনার জানান, আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। কী পরিমাণ অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করা হয়েছে তা পরে জানানো হবে।

তিনি জানান, অভিযানে পুলিশ, আনসার সদস্যসহ কেজিডিসিএল, পিডিবি, চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মীরা সহযোগিতা করছেন।

চট্টগ্রামের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি ইতোমধ্যে ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিত করেছে। যার মধ্যে ১৩টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব পাহাড়ের সব বসতি অবৈধ। কয়েকজন ব্যক্তি পাহাড় কেটে এসব বসতি নির্মাণ করেছেন। এসব পাহাড়ে বসবাসকারীদের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করব। এর আগে ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে উচ্ছেদের পর বনায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব পাহাড়ে বসবাসকারীরা ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই নগর ও উপজেলা পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নাম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহহীনের তালিকায় অন্তর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হলো সিআরবি পাহাড়ের পাদদেশ, টাইগারপাস-লালখান বাজার রোড সংলগ্ন পাহাড়, টাইগারপাস মোড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ, মোজাফ্ফর নগর পাহাড়, কাট্টলি থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত পাহাড়, সলিমপুর বাস্তুহারা পাহাড়, প্রবর্তক পাহাড়, গোলপাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড়, বন গবেষণাগার ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন পাহাড়, জয়পাহাড়, চট্টেশ্বরী হিল, মতি ঝর্ণা ও বাটালি হিল সংলগ্ন পাহাড়, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস স্কুল সংলগ্ন পাহাড়, ফয়স লেক আবাসিক এলাকা পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, গরীবুল্লাহ শাহ মাজারের পাশের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, ডিসি হিলের চেরাগী পাহাড়ের দিকের ফুলের দোকানের অংশ, পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন সিটি করপোরেশন পাহাড়, এ.কে. খান অ্যান্ড কোং পাহাড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন পাহাড়, কৈবল্যধামের বিশ্ব কলোনির পাহাড়, মিয়ার পাহাড়, লালখান বাজার চান্দমারি রোড সংলগ্ন জামেয়াতুল উলুম ইসলামি মাদরাসা কর্তৃপক্ষের পাহাড়, ফরেস্ট রিচার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তর পাশের মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড় সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের হারুন খানের মালিকানাধীন পাহাড়ের পশ্চিমাংশ, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড়, লেক সিটি আবাসিক এলাকার পাহাড় ও সিডিএ অ্যাভিনিউ রোডের পাশে অবস্থিত ব্লোসম গার্ডেন সংলগ্ন পাহাড়।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামে পাহাড় এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। ২০০৭ সালে পাহাড় ধসে ১২৭ জন মারা যায়। ওই সময় চট্টগ্রামের তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এম.এন. সিদ্দিককে প্রধান করে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ চিহ্নিত করে ৩৬ দফা সুপারিশ করে।

চট্টগ্রাম শহরে সর্বপ্রথম পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে ১৯৯৯ সালের ১৩ আগস্ট। ওই দিন সিআরবি পাহাড়ের একাংশের সীমানাপ্রাচীরসহ পাহাড় ধসে মারা যান ১০ জন। ২০০০ সালের ২৪ জুন চবি ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকাসহ নগরীতে পাহাড় ধসে ১৩ জন, ২০০৭ সালের ১১ জুন নগরীর সাত স্থানে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়।

২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট মতিঝর্ণায় পাহাড় ধসে ১১ জন, ২০১১ সালের ১ জুলাই বাটালী হিলের প্রতিরক্ষা দেওয়াল ধসে ১৭ জন, ২০১২ সালের ২৬ জুন নগরীর ৪ স্থানে পাহাড় ধসে ১৮ জন, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি খুলশী থানার ইস্পাহানি গোলপাহাড় ধসে একজন, ২৮ জুলাই ভোর ৫টার দিকে লালখান বাজারের টাংকির পাহাড় ধসে ২ জন, ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ঈদ-উল-ফিতরের রাতে দুই স্থানে পাহাড় ও দেয়াল ধসে ৫ শিশুসহ ৬ জন, ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই এবং ২১ সেপ্টেম্বর পাহাড় ধসে ৮ জনের মৃত্যু হয়।

জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পাহাড়কে অশান্ত করা সরকারের নতুন নাটক : মঈন খান
‘দেশের পাহাড়ি এলাকায় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার’
পাহাড়ে কুকি-চিনের সশস্ত্র তৎপরতা বিচ্ছিন্ন ঘটনা : কাদের
পাহাড়ি সাত উপজেলায় নিজেদের শাসন চায় কেএনএফ!
X
Fresh