নবীগঞ্জে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়েই জোড়া খুন
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামে লন্ডন প্রবাসীর মা মালা বেগম (৫০) ও স্ত্রী রুমী বেগম (২২) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা জাহানের আদালতে তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ১৩ মে নিজ বাড়িতে খুন হন উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরীর স্ত্রী রুমী বেগম ও তার মা মালা বেগম। এ ঘটনায় রুমীর ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পরে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে একই গ্রামের ক্বারী আব্দুস সালাম (৬০), তার ছেলে সাহিদুর রহমান (৩৫), একই গ্রামের শুভ রহমান (৩০), আবু তালেব (২৮) ও রিপন সূত্রধর নামের ৫ জনকে আটক করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় শুভ রহমান ও আবু তালেব ঘটনার সঙ্গে জড়িত। পরে এ দুইজনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে অন্যদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তার এই দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, রুমীকে ধর্ষণ করার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে।
বাড়িতে রুমী ও তার শাশুড়ি মালা থাকতেন। বাড়িটির কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। পাশে অন্য কারো বসবাসও নেই।
কয়েকদিন আগে লন্ডন প্রবাসী আখলাক বন্ধু রিপনকে তার স্ত্রী রুমীকে একটি মোবাইলের কভার কিনে দিতে বলে। রিপন ব্যস্ত থাকায় গেল ১১ মে তার ভাই জয়কে দিয়ে কভার রুমীর বাড়িতে পাঠায়। জয় মোবাইল কভার নিয়ে যাওয়ার সময় ওই এলাকার জাকারিয়া শুভর সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাকে নিয়ে ওই বাড়িতে যায়।
পুলিশ সুপার বলেন, এসময় রুমীকে দেখে তাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে শুভ। শুভ জানতে পারে ওই বাড়িতে অপরিচিত কেউ গেলে গেইট খোলে না। তবে পাশের বাড়ির ফারুক চৌধুরীর কর্মরত শ্রমিক তালেব মিয়া মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে গিয়ে কাজ করে।
শুভ তালেবের সঙ্গে দেখা করে তাকে একটি দোকান নিয়ে আপ্যায়ন করে এবং মোবাইলে থাকা পর্নো ছবি দেখায়। এরপর তারা রুমীকে ধর্ষণ করার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টায় ওই বাড়িতে গিয়ে প্রথমে তালেব দাদি বলে মালাকে ডাক দেয় এবং গেইট খুলতে বলে। গেইট খোলার পর তালেবের সঙ্গে শুভও ভেতরে ঢুকলে মালা বেগম তার পরিচয় জানতে চায়। তখন মালাকে হাতে থাকা ছোরা দিয়ে আঘাত করে শুভ।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, মালা দৌড়ে ঘরে গেলে পেছন পেছন গিয়ে তারা তাকে বেঁধে ফেলে এবং ছোরা দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তার চিৎকার শুনে পাশে থাকা রুমীও চিৎকার শুরু করলে শুভ তাকেও ছোরা দিয়ে আঘাত করে।
রুমী দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলে তালেবও তাকে আঘাত করে। ঘটনার সময় ওই বাড়ির পাশে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বাড়িতে বৈঠকে থাকা লোকজন চিৎকার শুনে এসে তাদের মরদেহ দেখতে পায়।
পরে পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর সকালে রক্তমাখা কাপড় এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করে। শুভর আরেক বন্ধু ধর্ষণে অংশ নেয়ার কথা ছিল, পুলিশ তাকেও খুঁজছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
তাকে পাওয়া গেলেই অভিযোগপত্র দিয়ে বিচার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
জেবি/জেএইচ
মন্তব্য করুন