জেল সুপার-কাউন্সিলরের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ
খাগড়াছড়িতে জেলা কারাগারের সীমানার জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে কারা পরিদর্শক (জেল সুপার) আবু ফাতাহ্ ও পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মজিদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ উঠেছে।
আজ সকালে জেলার কারা সীমানার নিচে ইসলামপুর অংশে উভয়ের মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর পৌর কাউন্সিল আব্দুল মজিদকে কারাগারে নিয়ে আসেন কারা পরিদর্শক ও তার সঙ্গে থাকা কারা রক্ষীরা। পরে সেখান থেকে কাউন্সিলরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় কারা পরিদর্শক আবু ফাতাহ বাদী হয়ে খাগড়াছড়ির সদর থানায় মামলা দায়ের করলে আব্দুল মজিদকে আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
বিকেলে আটক কাউন্সিলরকে জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদুল আলম তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
পরে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বিচারককে আসামির অসুস্থতার কথা জানালে বিচারক আসামিকে চিকিৎসা ব্যবস্থার আদেশ দিলেও কাউন্সিলর মজিদকে জেল হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে ঘটনাস্থলে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কারা সীমানার নিচের ইসলামপুর অংশে ৬ মাস আগে ৬ শতক জায়গার উপর একটি ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেন পৌর কাউন্সিলর আব্দুল মজিদ।
মঙ্গলবার সকালে কারা পরিদর্শক আবু ফাতাহ কয়েকজন কারা রক্ষী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলেন।
খবর পেয়ে ঘরের মালিক পৌর কাউন্সিলর মজিদ ঘটনাস্থলে এসে ভাংচুরের ঘটনা তার মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার সময় কারা পরিদর্শক আবু ফাতাহ্ ও তার সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীরা তাকে অতর্কিতভাবে মারধর করেন। একপর্যায়ে তাকে কারাগারে নিয়ে যান।
এলাকাবাসী কারা পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কারাগারে ছিলেন না আবু ফাতাহ। তিনি ততক্ষণে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ছুটে যান। এরমধ্যেই খাগড়াছড়ির পৌরসভার প্যানেল মেয়রসহ কারাগারে পৌঁছেন পৌর কাউন্সিলররা।
চিকিৎসা শেষে কারা পরিদর্শক আবু ফাতাহ্ কাউন্সিলরকে মারধর ও ঘর ভাঙচুরের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, জেলাখানার জায়গার উপরে ঘর উঠায় দেখতে যান তিনি। এসময় কয়েকজন লোক তার উপর হামলা করলে তিনি আহত হন বলে জানান।
এদিকে কারা পরিদর্শক ও তার সঙ্গে থাকা কারারক্ষীরা অতর্কিতভাবে মারধর করেছেন এমন অভিযোগ করে পৌর কাউন্সিলর ও ঘরের মালিক আব্দুল মজিদ বলেন, কারাগারের কারা রক্ষী প্রমোধ ত্রিপুরা ব্যক্তিগতভাবে নিজের নামে উক্ত জায়গাটি বন্দোবস্ত নিতে আবেদন করেন। এ ক্ষোভে কারা পরিদর্শকসহ প্রমোধ ত্রিপুরা তাকে মারধর করে আহত করে কারাগারে নিয়ে আসেন।
তিনি আরও বলেন, খাগড়াছড়ি বাজার ফান্ড ইসলামপুর এলাকায় জায়গায়টি তার নামেই বন্দোবস্ত আছে। এরমূলে বাজার ফান্ডের প্রচলিত আইন মোতাবেক খাজনাপত্রাদি পরিশোধ করেন তিনি(মজিদ)। বন্দোবস্তকৃত জায়গাটি বন্ধক রেখে খাগড়াছড়ি সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে ঋণও নেন তিনি পৌর কাউন্সিলর আব্দুল মজিদ।
খাগড়াছড়ি পৌর কাউন্সিলর মো. শাহ আলম জানান, কারাগারে গিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) চাহেল তস্তুরীর সঙ্গে আলাপ করে মীমাংসার কথা বলে মজিদকে থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর কারা পরিদর্শক আবু ফাতাহ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাদাত হোসেন টিটু পৌর কাউন্সিলর আব্দুল মজিদকে আটক ও মামলা দায়েরের বিষয়ে নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় কারাগারের জায়গায় অবৈধ প্রবেশ, কারা পরিদর্শককে মারধর ও সরকারি কাজে বাঁধা দানের অভিযোগ এনে আব্দুল মজিদকে প্রধান করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছেন কারা পরিদর্শক আবু ফাতাহ্।
এসএস
মন্তব্য করুন