২০ টাকায় ভিআইপি রোড পার
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনের মোড় থেকে রাস্তার বিপরীত দিক দিয়ে অবাধে যাচ্ছে মালবাহী ভ্যান ও রিকশা। রাস্তা পার হতে পারায় এক ভ্যান চালক আনন্দে বলছেন ২০ টাকায় ভিআইপি রোড পার।
আরটিভি অনলাইনের অনুসন্ধানে দেখা যায় পেট্রোবাংলার সামনের মোড়ে দুইজন আনসার সদস্য প্রকাশ্যে ভ্যান ও রিকশা ছাড়ছে ২০ টাকার বিনিময়ে। শুধু তা নয় কোনো কোনো সময় লোক মারফতও ট্র্যাফিক পুলিশ টাকা তুলে।
কারওয়ান বাজারে কুলির কাজ করে সাইদুল। সেও মাঝে মাঝে ট্র্যাফিক পুলিশের হয়ে টাকা তুলে। আরটিভি অনলাইনে সাইদুল জানান, রাতে বাজারে কুলির কাজ করি। আর দিনে ট্র্যাফিক পুলিশ বা আনসার সদস্যদের কথা মতো টাকা তুলে দিই।
পুলিশ বা আনসাররা দূর থেকে ইশারা দেয়, আমি টাকা তুলি। তা থেকে কিছু টাকা আমাকেও দেয়।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : ‘ইয়াবা সুন্দরী’ খ্যাত পাপিয়া স্বামীসহ গ্রেপ্তার
--------------------------------------------------------
কয়েকটি বস্তা নিয়ে রাস্তার বিপরীত পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ভ্যান চালক করিম। তিনি বলেন, প্রতিদিন তিনি এ রুট দিয়ে চলাচল করেন। অন্য পথ দিয়ে যেতে সময় লাগে তাই ভিআইপি রাস্তা দিয়ে গেলে কম সময়ে যাওয়া যায়। আনসার সদস্যদের ২০ থেকে ৩০ টাকা দিয়ে তার মতো অনেকে বিপরীত পাশ হয়ে কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা পার হয়ে ধানমন্ডি বা আশপাশে যাতায়াত করেন।
রিকশা চালকের সাথে কথা বলার সময় ছুটে আসেন একজন আনসার সদস্য। তিনি বলেন, পেটে লাথি দিবেন না। আমারা কই যামু। আনসার কয় টাকা বেতন পায়। এ দিয়ে কি সংসার চলে?
তাইতো রিকশা ভ্যান ছাড়ি। আর এরা খুশি হয়ে আমাদের কিছু দেয়। এরাও তাড়াতাড়ি যায়। আর এ টাকা তো শুধু আনসার নেয় না। ট্র্যাফিক পুলিশও নেয়। আমরা টাকা তুলি তাই দোষটা আমাদের গায়ে পড়ে।
রাজধানীবাসীর দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রতিদিনের যানজট। ভয়াবহ এই যানজট নিরসনে কর্তৃপক্ষ নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়নও করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি ছিল প্রধান সড়কগুলো রিকশামুক্ত করা। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল প্রধান সড়কে যান্ত্রিক যানবাহনের মধ্যে রিকশা ঢুকে পড়ায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। এ জন্য রাজধানীতে রিকশা আটক অভিযানও চালায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। অথচ রিকশা আবারও ঘিরে ধরেছে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোকে। যেসব রাস্তায় একটি রিকশাও চলাচল করার কথা নয়, সেসব রাস্তার মাঝখানে এলোপাতাড়ি ছুটে চলছে শত শত রিকশা। তাও আবার পুলিশের উপস্থিতিতে।
রিকশা শ্রমিক সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী রাজধানীতে ১২ লাখের বেশি রিকশা চালাচল করত। এর মধ্যে বেশ কিছু রিকশা জব্দ করেছে পুলিশ। আবার নতুন করে তৈরি করা রিকশাও রাস্তায় নামছে। সে হিসাব অনুযায়ী রিকশার সংখ্যা আগের অবস্থানেই রয়েছে।
মিরপুর থেকে ছেড়ে আসা আয়াত পরিবহনের একটি বাসের চালক জানান, যানজটের জন্য বাসচালকেরাও কম দায়ী নয়। কিন্তু রিকশা সব থেকে বেশি দায়ী।
তিনি বলেন, রিকশাচালকেরা কোনো নিয়ম-কানুন বুঝে না। ইচ্ছমতো রাস্তার একপাশ থেকে অন্য পাশে চলে যায়। আবার সিগন্যাল না দিয়ে হঠাৎ করে হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে দেয়। তাদের বাঁচাতে গিয়ে যান্ত্রিক যানবাহনের চালকদের অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়।
ভ্যান ও রিকশা থেকে টাকা তোলার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্র্যাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম বিপিএম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এমন অভিযোগ আমরা আগেও পেয়েছি। কিছু অসাধু সদস্য এ কাজগুলো করে আসছে। আমরা এদের খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি রাজধানীর জ্যাম নিয়ন্ত্রণ করতে। জ্যাম নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি নগরবাসীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
আরও পড়ুন :
- সুন্দরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ৫
- নির্বাচনে পাশ করানোর আশ্বাসে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার
এমসি/এমকে
মন্তব্য করুন