• ঢাকা রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

উক্তিতে যুক্তিতে আলোচিত মেয়র আনিসুল হক

সিয়াম সারোয়ার জামিল

  ০২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১১:২৫

দায়িত্ব নিয়েছিলেন ৫ বছরের জন্য। কিন্তু দু'বছরের মাথায় ছেড়ে গেলেন পৃথিবী। শুরু থেকেই আলোচিত মেয়র আনিসুল হকের স্লোগান-বক্তব্য দারুণ আকর্ষণ করেছিল ঢাকাবাসীকে। নির্বাচনী স্লোগান দিয়েছিলেন, 'সমস্যা চিহ্নিত, এবার সমাধান যাত্রা।'

দীর্ঘদিন ধরে দখলবাজদের কবলে থাকা রাস্তাঘাট উচ্ছেদ করে নগরবাসীর আস্থা অর্জন করেছিলেন আনিসুল হক। শুরুতেই আলোচনায় আসেন তেজগাঁও স্ট্যান্ডের দখল উচ্ছেদ করতে গিয়ে। আগের দিন শ্রমিক-পুলিশ ব্যাপক সংঘর্ষের পর উচ্ছেদ নিয়ে পরদিন নিজ কার্যালয়ে অ্যাকশন হিরোর মতোই তিনি বলেন, এখানে যদি আর কেউ কোনো কিছু করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের হেব্বি পেটানো হবে।

নিজের বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি ছিলেন বরাবারই কড়া। ঢাকাকে পাল্টে দেবার শপথ নিলেও বাধাপ্রাপ্ত হন বারবার। কিন্তু যে কোনো মূল্যে বদলে যাওয়া 'ভিন্ন ঢাকা' এর বাস্তবায়ন চেয়েছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গণমাধ্যম সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন আনিসুল হক। সেখানে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি এতে সবার সহায়তা চাই। যে কো-অপারেট করবে না, তার খবর আছে।

২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী মোনায়েম খানের বাড়ির দখলে থাকা ১০ কাঠা জমি উদ্ধারের নেতৃত্ব দেন তিনি। সেদিন আনিসুল হক বলেছিলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় দিন। সাধারণ মানুষের এ জায়গাটি গত ৫০ বছর ধরে দখল করে রেখেছিল।

তিনি বলেন, শুনেছি এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা সরকারিভাবে যিনি সবচেয়ে বেশি করেছিলেন, যাদের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিশোধ নিয়েছিল। তাদের পরিবারের কাছে এখানে একটি বিরাট জমি ৫০ বছর ধরে পড়ে আছে। সরকারের এ জমি এতদিন ধরে দখল হয়ে আছে, কোনো সংস্থা এর বিরুদ্ধে কোনো কাজ করেনি। পরে সেই জমিতে বনানীর ২৭ নম্বর সড়ক প্রশস্ত করে ডিএনসিসি।

দূষণ কমানো ও সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন পুরোনো ভবন রঙ করতে বাড়ির মালিকদের প্রতি অনুরোধ করেন মেয়র আনিসুল হক। এ সময় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের এক আলোচনায় তিনি বলেন, ভবন মালিকদের অনুরোধ করতে চাই- যাদের ভবন অনেক পুরোনো, যেগুলো রঙ করেননি, সেগুলো দূষণ করছে। এগুলো রঙ করেন, তা না হলে মেয়র কিন্তু টাফ হয়ে যাবে। তখন কিন্তু হ্যান্ডেল করতে পারবেন না।

তবে চলতি বছর চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তিনি বলেন, আপনার ঘরের ভেতরে গিয়ে আমি মশারি টানাতে পারব না। আপনার চৌবাচ্চায় আমি ওষুধ লাগাতে পারব না। আপনার ঘরের ভেতর সামান্য স্বচ্ছ পানিতে যে মশা জন্মাচ্ছে, সেটা আমি মারতে পারব না। এটা আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে। এ বক্তব্যের ব্যাপক সমালোচনা হলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

সদা প্রাণচঞ্চল এ মেয়র নগরে জলাবদ্ধতা নিয়ে বেশ বিপদেই পড়েন। চলতি বছর টানা বর্ষায় ডুবে যায় ঢাকা। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মেয়রের কাছে কোনো যাদু নেই। যাদু থাকলে সব আলাদীনের চেরাগের মতো ফুঁ দিতে থাকতাম। সব খাল বন্ধ। খালের উপর পাঁচতলা বাড়ি। মাঠ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। কোথায় যাবে পানি? খাল বানাতে হবে। যে জায়গাগুলোতে স্লুইসগেট বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে স্লুইসগেট বানাতে হবে’-সমাধান বাতলে দিয়ে মেয়র পরে বলেন, ‘কিন্তু এ দায়িত্ব তো এক এক ডিপার্টমেন্টের।’

আনিসুল হক বলেন, ‘যেখানে খাল বন্ধ, যেখানে জায়গা নেই। সেখানকার পানি কোথায় যাবে? এসব সমস্যা সমাধানে আমরা কো-অর্ডিনেশন মিটিং করেছি। আজকের পানি আমাদের আরো এক্সপেরিয়েন্স দিচ্ছে। ইটস নট এ শর্টটার্ম সলিউশন। আমাদের ওয়েট করতে হবে।’

তবে নগরবাসীকে অপেক্ষায় রেখে নিজেই চলে গেলেন এই আলোচিত মেয়র। গেলো ২৯ জুলাই যুক্তরাজ্যে যান আনিসুল হক পারিবারিক কাজে। সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে মারা যান সমাধান যাত্রার এ নায়ক।

এসজে/সি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh