• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

আমার ‘ভালো ছেলে’-র মগজ ধোলাই করা হয়েছিল: ওসামার মা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৪ আগস্ট ২০১৮, ১০:০৫

ওসামা একজন `ভালো ছেলে' ছিলেন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময় মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়ে উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হয়েছিলেন। নিহত আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেম কোনও সংবাদপত্রে দেয়া তার প্রথম সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন। খবর বিবিসি বাংলার।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সৌদি আরবের জেদ্দায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার ভাষায় এক ‘কাল্ট’ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর পাল্লায় পড়েন ওসামা। এরপরই পুরোপুরি বদলে যায় সে।

ঘানেম বলেন, ওই গ্রুপটি থেকে দূরে থাকার জন্য তিনি তার ছেলেকে বারবার সাবধান করেছিলেন।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : ভারতে পাথর খনিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১১
-------------------------------------------------------

গার্ডিয়ানের সাংবাদিক মার্টিন চুলোভের নেয়া সাক্ষাৎকারে ঘানেম বলেন, কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়ার সময় ওসামা বিন লাদেন কিছু লোকের সংস্পর্শে আসেন। ওইসময় ওসামার বয়স ২০-এর কোঠায় ছিল। তারাই তার ছেলের মগজ ধোলাই করে।

আলিয়া ঘানেমের কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই লোকগুলোই ওসামাকে বদলে দেয়। সে একেবারে অন্যরকম মানুষ হয়ে যায়। আপনি বলতে পারেন এটা ছিল একটা কাল্ট। আমি তাকে সবসময়ই বলতাম ওদের থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু সে কখনও স্বীকার করেনি সে কী করছে, কারণ আমাকে সে খুবই ভালোবাসতো।

গার্ডিয়ানের সাক্ষাৎকারের সময় উপস্থিত ছিলেন ওসামার ভাই হাসান। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে রুশ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ১৯৮০-র দশকে দেশটিতে যান ওসামা। প্রথমদিকে সবাই তাকে সম্মান করেছে। শুরুর দিকে আমরাও তাকে নিয়ে গর্বিত ছিলাম। এমনকি সৌদি সরকারও তাকে সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখতো। তারপরই সে হয়ে উঠলো মুজাহিদ ওসামা।

তার মা ঘানেম বলছিলেন, ওসামা স্কুলে ভালো ছাত্র ছিল, পড়াশোনা ভালোবাসতো। সে তার সব টাকা-পয়সা আফগানিস্তানের পেছনে ব্যয় করেছে। পারিবারিক ব্যবসার ছুতো করে সে গোপনে কোথায় কোথায় চলে যেত।

দ্য গার্ডিয়ানে ওসামা বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেমের সাক্ষাৎকার

তিনি কী কখনও সন্দেহ করেছিলেন যে তার ছেলে জিহাদি হয়ে উঠতে পারে? আমার মনে কখনও এমন ভাবনা আসেনি। যখন জানতে পারলেন তখন কেমন লেগেছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে ঘানেম বলেন, আমরা খুব ভেঙে পড়েছিলাম, এমনটা হোক আমি চাইনি। কেন সে এভাবে সবকিছু ত্যাগ করতে যাবে?

বিন লাদেনের পরিবার বলছে, তারা সবশেষ ১৯৯৯ সালে আফগানিস্তানে ওসামাকে দেখেছেন। কান্দাহার শহরের বাইরে তাদের ঘাঁটিতে দুবার তারা দেখা করতে গিয়েছিলেন।

জায়গাটা ছিল বিমানবন্দরের কাছে, যা তারা রুশদের হাত থেকে দখল করেছিল, বলছিলেন ঘানেম। তিনি বলেন, আমাদের পেয়ে সে খুব খুশি হয়েছিল, আমাদের প্রতিদিন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখাতো। একটা পশু জবাই করে ভোজ দেয়া হলো। সবাইকে দাওয়াত দেয়া হলো।

ওসামা বিন লাদেনের বাবা ইয়েমেনি হলেও তার মা আলিয়া ঘানেমের জন্ম এক সিরিয়ান আলাওয়াইট শিয়া পরিবারে। তিনি সৌদি আরবে আসেন ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি। আর ওসামার জন্ম ১৯৫৭ সালে। তিন বছর পর ওসামার বাবাকে তালাক দেন ঘানেম। এরপর তিনি বিয়ে করেন আল-আত্তাসকে। তিনি বিন লাদেনদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যেরই একজন প্রশাসক ছিলেন।

ওসামার বাবা কমপক্ষে ১১ জন স্ত্রীর গর্ভে ৫৪টি ছেলেমেয়ের জন্ম দেন। ওসামার আরেক ভাই আহমদ গার্ডিয়ানকে বলেন, নাইন ইলেভেনের ১৭ বছর পরও তাদের মা ওই ঘটনার জন্য ওসামাকে দোষ দিতে চান না। তিনি দোষ দেন তার চারপাশের লোকদেরকে।

আহমদ বলছিলেন, তাদের মা শুধু ওসামাকে ‘ভালো ছেলে’ হিসেবেই জানেন। জিহাদি ওসামাকে তার কখনও জানা হয়নি।

পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেন যখন মার্কিন বিশেষ বাহিনীর হাতে নিহত হন- তখন তার যে স্ত্রী-সন্তানরা ছিলেন, তারা এখন জেদ্দায় থাকেন। তাদের শহরের মধ্যে চলাফেরার অধিকার আছে তবে দেশের বাইরে যাবার অনুমতি নেই।

আলিয়া ঘানেম বলছেন, আমি ওসামার হারেমের সঙ্গে প্রায় সপ্তাহেই কথা বলি। তারা কাছেই থাকে।

ওসামা বিন লাদেন ও আয়মান আল-জাওয়াহিরি

ওসামা বিন লাদেনের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে ২৯ বছর বয়স্ক হামজার কথা বিন লাদেন পরিবারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন গার্ডিয়ানের সাংবাদিক। হামজা এখন আফগানিস্তানে আছে বলে ধারণা করা হয়।

গত বছর তাকে একজন বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। হামজাকে আল-কায়েদার বর্তমান নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির ছত্রছায়ায় তার পিতার ‘উত্তরসূরি’ বলে মনে করা হয়।

হাসান বলছিলেন, হামজা বলেছিল, সে তার পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেবে। আমি তার কথা আর শুনতে চাই না। তিনি বলেন, তার সঙ্গে দেখা হলে আমি বলতাম আল্লাহ যেন তোমাকে পথ দেখান। তুমি যা করছো তা নিয়ে দুইবার ভাবো। তুমি তোমার আত্মার এক ভয়ঙ্কর অংশে পা ফেলছো। তোমার পিতার পথ নিও না।

ধারণা করা হয়, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চারটি ছিনতাই করা বিমান দিয়ে সন্ত্রাসী হামলা ওসামা বিন লাদেনের আদেশেই হয়েছিল। ওই হামলায় নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ও ওয়াশিংটনে পেন্টাগন ভবন আক্রান্ত হয় এবং দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর এক অভিযানে ২০১২ সালে ওসামা বিন লাদেন নিহত হন।

আরও পড়ুন :

এ/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh