• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ঝিনাইদহে নকশী ফোঁড়ে জীবনের স্বপ্ন বুনন অসহায় নারীদের

শিপলু জামান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

  ০৪ নভেম্বর ২০২০, ১১:৪৯
In Jhenaidah, helpless women weave dreams of life in nakshi boils
ঝিনাইদহে নকশী ফোঁড়ে জীবনের স্বপ্ন বুনন অসহায় নারীদের

কেউ কাপড় কাটছেন আবার কেউ করছেন সেলাই। একেবারে নতুন সদস্যরা শিখছেন নকশী ফোঁড়। কেউ আবার বাড়িতে তৈরি করা নানা ডিজাইনের নকশীকাঁথা, নকশায় তৈরি থ্রিপিচ, নানা রঙ-বেরঙের পুঁতি বসিয়ে তৈরিকৃত সো-পিচ পরিচালকের কাছে জমা দিচ্ছেন।

কেউ কেউ নতুন কাজের অর্ডার নিয়ে ফিরছেন বাড়িতে। আর এগুলো সব সামলে নিচ্ছেন পরিচালক একাই। তাকে সাহায্য করছেন কাটিং মাস্টার। এভাবে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের পৌর মহিলা সমবায় সমিতির প্রায় ২ শতাধিক অসহায় নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করছেন। মাত্র ৩ বছর আগে গঠিত এ সমিতির দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে সকলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। সমিতির সদস্যদের আশা খুব শিগগিরই এ সংগঠনের প্রত্যেকে অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগিয়েই হতে পারবেন স্বাবলম্বী।

সমিতির সদস্যভুক্ত একাধিক অসহায় নারী জানান, তাদের সকলেরই টানাটানির সংসার। নানাবিধ কারণে অনেকে নিজেই সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। আবার অনেকের স্বামী-সংসার থাকলেও সাংসারিক কাজ শেষে বাড়িতে অলস সময় কাটিয়ে থাকেন। বর্তমানে এ সমিতির সদস্য হয়ে নকশীকাঁথা সেলাই, দর্জির কাজ শেখা ছাড়াও কুটির ও হস্তশিল্পের অনেক কাজ শিখতে পারছেন। আবার কেউ কেউ অর্ডার মতো থ্রিপিচ, পাঞ্জাবি, নকশীকাঁথায় নানা ডিজাইনের কাজ করে সমিতিতে জমা দিয়ে ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন। এভাবে উপার্জিত এ পয়সা দিয়েই চলছে তাদের সংসার।

তারা আরও জানান, সাধারণ গোছের একটি নকশীকাঁথা সেলাই করে কমপক্ষে সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারেন। সৌখিন এ কাঁথাগুলো পরিবারে ব্যবহারের জন্য আবার কখনও আপনজনকে উপহার দিতে স্থানীয়রা আগে থেকে অর্ডারের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে তৈরি করছেন। তাছাড়াও তাদের তৈরিকৃত সৌখিন জিনিসপত্র ঢাকাসহ বাইরের বিভিন্ন শহর থেকে ক্রেতারা এসে নগদ টাকায় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বিনিময়ে সমিতিকে অল্প কিছু টাকা জমা দিয়ে বাকিটা সংশ্লিষ্ট সদস্য পেয়ে যাচ্ছেন।

তারা বলেন, তাদের মধ্যে অনেকে আছেন আগের থেকে নকশীকাঁথা সেলাইয়ের কাজ করতেন। কিন্তু তৈরিকৃত কাপড় বিক্রি করতে পারতেন না। একটি নকশী করা পোশাক বা কাঁথা সেলাই করতে অনেক সময় লাগে। আগে সঠিক যোগাযোগের অভাবে এতো কষ্টের কাঁথা বিক্রি করতে সময় লেগে যেতো। কিন্তু এখন সবাই মিলে কাজ করার কারণে বাইরের অর্ডার বেশি পাচ্ছেন। আবার অল্প সময়ের মধ্যে সেটা বিক্রিরও নিশ্চয়তা থাকছে। তাদের নকশী কাজে অভিজ্ঞ মাস্টার ডিজাইন বুঝিয়ে দেন। যে কারণে কাজগুলো নিখুঁত ও আকর্ষণীয় হয়। ফলে নিজ এলাকার পাশাপাশি বাইরের ক্রেতারাও এগুলো অধিক আগ্রহে কিনছেন। ফলে কাজ বেশি হওয়ায় এখন তাদের সারা বছরের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

মিতা বিশ্বাস নামের সমিতির এক সদস্য জানান, তিনি অনেকদিন ধরে নকশীকাঁথাসহ নানা নকশা করা পোশাক তৈরি করেন। সমিতির সদস্য হওয়ার পর সারাবছরই কাজ থাকে। আগে নিজে অর্ডার নিয়ে বাড়িতে কাজ করতেন। কিন্তু তৈরিকৃত পোশাক বিক্রি করতে অনেক সময় লেগে যেতো। এখন তা নেই।

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগত অর্ডার ছাড়াও বর্তমানে সমিতির পরিচালকেরা দর কষাকষির মাধ্যমে কাজের অর্ডার নিয়ে কাটিং মাস্টার নকশার ধরন বুঝিয়ে দেন। সে মোতাবেক বাড়িতে বসে কাজ শেষ করে সমিতিতে জমা দিলে মজুরির টাকা পেয়ে যান। সমিতির পক্ষ থেকে জিনিসপত্রের অর্ডার ধরে পরে তার মতো অনেকের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়।

আলোমতি দাস নামের অন্য এক সদস্য জানান, তার স্বামী-সংসার সবই আছে। স্বামী কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। তবে সব সময় তার কাজ থাকে না। ফলে অভাবের সংসার তার। নিজে বাড়িতে বসে না থেকে কাজ করে পয়সা রোজগারের মাধ্যমে সংসারে সাহায্য করছেন। তার দুটি সন্তান লেখাপড়া করে। তাদের লেখাপড়ার খরচ যোগানোর ক্ষেত্রেও বর্তমানে ভূমিকা রাখতে পারছেন।

সমিতির পরিচালক মিনা ভট্টাচার্য জানান, এখানে তার নিজের কোনো অর্জন নেই। সবকিছুই সদস্যরাই করে থাকেন। নিজে একজন মহিলা মাস্টার দিয়ে সপ্তাহে একদিন বিভিন্ন হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে আছেন সুন্দর সুন্দর নকশী কাজে পারদর্শী। তাদের তৈরি জিনিসগুলো বাইরের ক্রেতাদের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে থাকেন। কোনো ক্রেডিট প্রোগ্রাম নেই। প্রতি সপ্তাহে তাদের নিকট থেকে মাত্র ১০ টাকা করে নেয়া হয়। এ দিয়ে চলে সমিতির অন্যান্য ব্যয়। প্রশিক্ষকের বেতনও হয় এখান থেকে।

এ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা মোচিক শ্রমিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল জানান, মহিলাদের নিয়ে গঠিত এ সমিতির সদস্যরা যারা আছেন তারা বেশির ভাগই হতদরিদ্র। তাদেরকে সংগঠিত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সবকিছুই তারা করছেন। তিনি শুধু পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন মাত্র। এ সমিতিতে কোনো ক্রেডিট প্রোগাম নেই। কিন্তু তাদেরকে এক হিসেবে বিনা টাকায় সেলাইসহ হস্তশিল্পের বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন; যা অসহায় গরীব নারীদের জন্য অনেক বড় কিছু।
জিএম/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • ফিচার এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নারীদের ত্রিশ পরবর্তী পুষ্টি ভাবনা 
ঝিনাইদহ টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের ইফতার 
ফেসবুকে শিক্ষকের কুরুচিপূর্ণ ভিডিও পোস্ট, তুমুল সমালোচনা 
ঝিনাইদহে মানবপাচার মামলায় ৩ জনকে যাবজ্জীবন 
X
Fresh