• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

আজও তাড়িয়ে বেড়ায় সিডরের স্মৃতি

বরগুনা প্রতিনিধি, আরটিভি অনলাইন

  ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:০৫
সিডর মৃত্যু মানুষ
ফাইল ছবি

আজ ১৫ নভেম্বর। বরগুনাসহ উপকূলবাসীর জন্য একটি বেদনার দিন। ২০০৭ সালের এ দিনে ঘূর্ণিঝড় সিডর উপকূলীয় অঞ্চলকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। কেড়ে নিয়েছে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ। সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি আজও উপকূলবাসীকে আতঙ্কিত করে।

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত সাতটা ৪০ মিনিট। মহাবিপদ সংকেতের কথা শুনে আতঙ্কিত বরগুনা উপকূলের মানুষ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে।

মানুষেরা যেতে শুরু করলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। বেশির ভাগ মানুষই রয়ে গেলেন বাড়িতে। তাদের ধারণা ছিল ঝড়ে তাদের কিছু হবে না।

সিডর আঘাত হানতে শুরু করে উপকূলীয় এলাকায়। প্রচণ্ড বাতাসের বেগের সঙ্গে যুক্ত হলো পানি প্রবাহ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিডর প্রবলভাবে আঘাত করে। মাত্র ১০ মিনিটের ঝড় আর জলের তাণ্ডবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো কয়েক হাজার মানুষ।

পরদিন পাওয়া গেল লাশের পর লাশ। কবর দেওয়ার পর্যন্ত জায়গা নেই। একটি কবরে দুই থেকে তিনটি লাশ ফেলে মাটিচাপা দেওয়া হলো।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী সিডরের আঘাতে বরগুনা জেলার এক হাজার ৩৪৫ জন মানুষ মারা গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৫৬ জন। ৩০ হাজার ৪৯৯ টি গবাদি পশু ও ছয় লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ টি হাস-মুরগি মারা যায়। জেলার দুই লাখ ১৩ হাজার ৪৬১টি পরিবারের সবাই কম-বেশি ক্ষতির শিকার হন। সম্পূর্ণভাবে গৃহহীন হয়ে পরে জেলার ৭৭ হাজার ৭৫৪টি পরিবার। বেসরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৬০০ জনের ওপরে।

সিডরে এতো মৃত্যুর অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, ওই সময় আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবার্তা যথাযথ ছিল না। আবহাওয়া অফিস চার নম্বর সতর্ক সংকেত থেকে হঠাৎ করে ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের কথা ঘোষণা করে। মংলা সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে যে সতর্ক সংকেত প্রচার করা হয়েছিল তা বোঝার উপায় বরগুনার মানুষের ছিল না। রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা ছিল প্রায় নিষ্ক্রিয়।

---------------------------------------------------------------
আরো পড়ুন: রংপুর এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন
---------------------------------------------------------------

দুয়েকটি জায়গায় তারা মাইকিং করলেও বেশির ভাগ জায়গায়ই কোনও রকম সংকেত প্রচার করা হয়নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য অফিস মাইকিং করলেও তা ছিল শহর এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে যারা ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত শুনেছেন, তারাও পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রের অভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেননি।

জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনেয়ারা হাসি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত স্থানীয় ভাষায় বোধগম্য করে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য ঘূর্ণিঝড় কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।

সিডরে বরগুনা সদর উপজেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার নাম নলটোনা। সেখানে সিডরের এক বছর আগে থেকেই বেড়িবাঁধ ছিল না। সিডরের সময় সেখানে ২০ ফুটের মতো পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ের পরের দিনই সেখানে অর্ধ শতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। তখনও এলাকাটি পানির নিচে হাবুডুবু খাচ্ছিল। লাশ দাফনের জন্য কোনও স্থান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। লাশগুলো নিয়ে আসা হয় বরগুনা-নিশানবাড়িয়া সড়কের পাশে পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গ্রামে। দাফনের কাপড় ছাড়াই ৩০ জনকে ১৯ টি কবরে মাটি চাপা দেওয়া হয়। জায়গার অভাবে চারটি কবরে তিনজন করে ১২ জন, তিনটি কবরে দুইজন করে ছয়জন ও ১২টি কবরে একজন করে ১২ জনের লাশ দাফন করা হয়। কবরগুলোকে একটু উঁচু করে রাখা হয়েছে।

বরগুনা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ‘সংগ্রাম’ সম্প্রতি ইট দিয়ে কবর স্থানটি ঘিরে দিয়েছে।

বরগুনা জেলা প্রশাসন ও বরগুনা প্রেসক্লাব আজকের দিনটি পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সকাল নয়টায় শোক মিছিল, সাড়ে নয়টায় স্মরণ সভা ও বেলা ১১ টায় পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গণকবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়ানুষ্ঠান।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মানুষটির ছায়াও আর মাড়াতে চাই না : পরীমণি
লাখো মানুষে মুখর জাতীয় স্মৃতিসৌধ
‘মানুষ যে আশা নিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিল, তা আজও পূরণ হয়নি’
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এমপি শান্তর মাসব্যাপী ইফতার আয়োজন
X
Fresh