• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
logo
ইফতারে যেসব খাবার পেট ঠান্ডা রাখবে
রমজানে সুস্থ থাকতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ পরামর্শ
রমজানের মাসের গুরুত্ব কারও অজানা নয়। রমজান মাস অন্যসব মাসের চেয়ে আলাদা। এই মাসে মুসলমানরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেন। এই মাসে খাদ্যাভ্যাস ও জীবন-যাপনে পরিবর্তন আসে। তাই শরীরের ওপর বাড়তি খেয়াল রাখা জরুরি। অন্যথায় পুষ্টিহীনতায় ভোগার আশঙ্কা রয়েছে। এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা জানিয়েছে পুরো এক মাস রোজা রেখেও কীভাবে সুস্থ থাকা যায় তার উপায়। জেনে নিন- খাবার পাতে থাকুক স্বাস্থ্যকর জিনিস : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, রমজানে রোজা রাখার সময় অসুখ থেকে ক্লান্তি সমস্ত কিছু থেকে দূরে রাখতে পাতে রাখুন ড্রাই ফ্রুটস, বেশি বেশি ফল, ডেয়ারি প্রোডাক্ট, শাক সবজি, ডালের মতো খাবার। শরীরের ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, ফ্যাট সহ বাকি জরুরি পুষ্টির উৎস যেন থাকে সেহরি ও ইফতারের পাতে, এমনই পরামর্শ দিচ্ছে WHO। বেশি করে পানি পান: রোজার মাঝে যাতে ডিহাইড্রেশন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, শরীর ফিট রাখতে এই সময় দিনে আট লিটার পানি খাওয়া উচিত। এছাড়া নারকেলের পানি, রস, সবজির স্যুপও খেলে কমবে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি। চিনিতে দরকার রেশনিং: রমজান মাসে রোজার সময়ে স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে মিষ্টিজাতীয় জিনিস খাওয়া কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা। ফলাহারের পরিমাণ বাড়ালে মিলবে উপকার। পাতে আপেল, কলা, পেঁপে, তরমুজের মতো ফল থাকলে সমস্যা কম হবে। লবণের পরিমাণ কমান: লবণ ছাড়া খাবার খাওয়া অসম্ভব। কিন্তু লবণের পরিমাণ বেশি হলেই পড়তে হবে সমস্যায়। এতে করে কিডনি থেকে হার্ট সবেরই বিপদ বাড়ে। রক্তচাপ বাড়ার কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। শরীরচর্চা: শরীর ফিট রাখতে এক্সারসাইজ বন্ধ করলে চলবে না। স্বাস্থ্যের সুস্থতা ফেরাতে দিনে অন্তত ২০ মিনিট শরীরচর্চা করা উচিত।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী যে খাবার
ইফতার-সেহরিতে যা খাবেন, যা খাবেন না
রোজায় পুষ্টি এবং শক্তি পাবেন যেসব খাবারে 
রোজায় পানিশূন্যতা এড়াতে করণীয়
রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে?
অনেকেরই শ্বাসজনিত রোগ থাকে, যেমন অ্যাজমা ও ফুসফুসের প্রদাহজনিত সিওপিডি ও কাশি থাকে। এ ধরনের সমস্যায় সাধারণ ইনহেলার ব্যবহার করা হয়। যা মুখ দিয়ে গ্রহণ করতে হয়। এ কারণে অনেক রোগীরই প্রশ্ন-রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে কি না। সম্প্রতি এ ব্যাপারে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফ হোসেন খান। এবার তাহলে রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করার ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক। ইনহেলার কী- এটি হচ্ছে শ্বাসের মাধ্যমে ওষুধ গ্রহণের জন্য ছোট্ট একটি যন্ত্র। এতে সালবিউটামল বা সালমেটেরল বা স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ থাকে। এই ওষুধ এমনভাবে প্রক্রিয়াজাত থাকে, যা গ্যাস হিসেবে মুখ দিয়ে গ্রহণ করতে হয়। ওষুধ মিশ্রিত গ্যাস শ্বাসনালীতে প্রবেশ করার পর শ্বাসনালির সংকোচন প্রতিরোধ হয়। ইনহেলার ব্যবহার করলে কী রোজা ভেঙে যাবে: রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা নিয়ে মতবিরোধ ছিল। তবে বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামিক পণ্ডিত একমত হয়ে জানিয়েছেন, যদি কারও শ্বাসজনিত দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা থাকে যেমন, অ্যাজমা ও সিওপিডি থাকে, তাহলে তিনি ইনহেলার ব্যবহার করতে পারবেন এবং এতে রোজা ভাঙবে না। এ বিষয়টি বিভিন্ন মেডিকেল জার্নালেও প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি রোজার সঠিক অংশ হিসেবে ঠিকভাবে ওষুধ গ্রহণ না করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে পারে। তখন ওই ব্যক্তির পক্ষে রোজা রাখা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তবে মূল কথা হচ্ছে, ইনহেলার খাদ্যের পরিপূরক নয়। ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম- অধিকাংশ অ্যাজমা ও সিওপিডির ওষুধ দিনে দুবার গ্রহণ বা সেবন করতে হয়। এ জন্য রোজার সময় চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে সেহরি ও ইফতারের সময় ইনহেলার নেয়ার সময় নির্ধারণ করে নিতে পারেন। আবার সালবিউটামলজাতীয় ইনহেলার যেসব উপসর্গ অনুযায়ী সেবন করতে হয়, সেসব রোজা রাখা অবস্থায় নিলে তাতে রোজা ভাঙে না। ধর্মীয়ভাবে এ ক্ষেত্রে যেহেতু কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, এ জন্য চিকিৎসার অংশ হিসেবে এই ধরনের রোগীকে যদি কোনো চিকিৎসক ইনহেলার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটি পালন করা উচিত।
সুস্বাদু লাউয়ের হালুয়া
সবজি হিসেবে লাউয়ের উপকারিতা উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই। লাউয়ে মধ্যে প্রচুর পানি থাকার পাশাপাশি এতে ফাইবার, ভিটামিন ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান থাকে। তবে সাধারণত বাঙালি বাড়িতে লাউ ডাল, লাউ চিংড়ির, লাউ ঘন্টই বেশি দেখা যায়। তবে এবার যুক্ত করুণ নতুন একটি পদ, আর তা হলো লাউয়ের হালুয়া। ভিন্ন স্বাদের এই রেসিপি রুটি বা পরোটার সঙ্গে খেতে ভালোই লাগে। খেতেও যেমন সুস্বাদু আর উপকরণও কম। আজই ইফতারে বানিয়ে ফেলুন অন্য স্বাদে লাউয়ের হালুয়া। জেনে নিন রেসিপি: উপকরণ : লাউ- ৩০০ গ্রাম, দুধ- ৫০০ মিলি, চিনি- ২০ গ্রাম, ছানা- ৫ গ্রাম, কিসমিস- ২ গ্রাম, কাজুবাদাম- ২ গ্রাম, ঘি- ৫ গ্রাম, এলাচ গুঁড়ো- ১ গ্রাম, প্রণালি : প্রথমে লাউয়ের খোসা ছাড়িয়ে টুকরা করে অতিরিক্ত পানি বের করে ফেলুন। এরপর একটি পাত্রে ৩ গ্রাম ঘি গরম করে নিন। এরপর লাউয়ের টুকরা দিয়ে নাড়তে থাকুন। লাউ নরম হয়ে এলে এর মধ্যে দুধ দিয়ে নাড়তে থাকুন। ২০ মিনিট পর লাউ দুধে মিশে গেলে চিনি দিয়ে দিন। একটি পাত্রে বাকি ঘি গরম করে নিন। গরম হলে অন্য পাত্রে হালুয়া ও ছানা দিয়ে দিন। এরপর কাজুবাদাম ও কিসমিস দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন মজাদার লাউয়ের হালুয়া।
ইফতারে বাসি ভাতের মজাদার পাকোড়া
রাতে খাওয়ার পর ভাত থেকে গেলে রোজার দিনে চিন্তায় পরে যান অনেকেই। কারণ, বাসি ভাত দিয়ে কী করবেন, ভেবে পান না। তবে এবার আর চিন্তা নেই, এবার বাসি ভাত দিয়ে খুব সহজেই বানিয়ে নিন ইফতারের জন্য পাকোড়া। সসে ডুবিয়ে কামড় দিলে কেউ বুঝবেই না এটা বাসি ভাত দিয়ে তৈরি করা। পাকোড়া বানাতে বেশি ভাতেরও প্রয়োজন হবে না। আগের দিনের থেকে যাওয়া অল্প ভাত দিয়েই এটি বানিয়ে নেওয়া যাবে। চলুন, জেনে নেই কীভাবে বাসি ভাত দিয়ে সুস্বাদু পাকোরা বানানো যাবে। যা যা লাগবে: ভাত, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কাঁচামরিচ, কর্নফ্লাওয়ার, বেকিং পাউডার, কাশ্মীরি মরিচ গুঁড়ো, ধনেপাতা, লবণ ও তেল।   যেভাবে বানাবেন: প্রথমে একটি বাটিতে দেড় কাপ পরিমাণে ভাত নিন। পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কাঁচামরিচ ব্লেন্ড করে নিন। এগুলো ভাতের সঙ্গে ভালো করে মেখে নিন। এবার এতে দুটো সেদ্ধ আলু চটকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। স্বাদমতো লবণ দিন। এরপর ৪ চামচ কর্নফ্লাওয়ার, অল্প করে বেকিং পাউডার, হাফ চামচ কাশ্মীরি মরিচ গুঁড়ো এবং ধনেপাতা দিয়ে মাখিয়ে নিন। এরপর সেখান থেকে পাকোড়া আকারে বানিয়ে নিন। সবগুলো বানানো হয়ে গেলে চুলায় পাত্র বসিয়ে তেল গরম দিন। এরপর তেল মাঝারি গরম হলে পাকোড়া ছেড়ে দিন। মাঝারি আঁচে ভেজে নিন। লালচে হয়ে এলে নামিয়ে নিন। গরম গরম পরিবেশন করুন। সস দিয়ে খেতে পারেন। আবার গরম ভাতের সঙ্গেই এই ভাত পাকোরা খাওয়া যাবে।
যে কারণে এড়িয়ে যাবেন মসলাদার ভাজা খাবার
নিয়মিত মসলাদার ভাজা খাবার খেলে দেহে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কার্বোহাইড্রেইটস, চর্বি ও প্রোটিনের মধ্যে চর্বি অনেক ধীরে হজম হয়। পেটব্যথা, গ্যাস, ডায়রিয়া হতে পারে।  যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’য়ের তথ্যানুসারে, মসলাদার ও ভাজা খাবারে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে। ফলে পেট খালি হতে দেরি হয়। খাবার বেশিক্ষণ পাকস্থলীতে থাকে বলে গ্যাস ‍সৃষ্টি হয়ে পেট ফোলা ও ব্যথা সৃষ্টি করে। যাদের বিভিন্ন রকম পেটের সমস্যা আছে তাদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়ে। ওজন বাড়াতে পারে- ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচ’য়ের তথ্যানুসারে, মসলাদার ভাজা খাবারে যেহেতু প্রচুর ফ্যাট বা চর্বি থাকে সেজন্য ওজন বাড়ানোর পাশাপাশি স্থূলতার সমস্যা তৈরি করে এসব খাবার। যেমন- ১০০ গ্রামের একটি বেইকড করা আলু থেকে মিলবে ৯৩ ক্যালিরি ও ০.১ গ্রাম চর্বি। তবে একই পরিমাণ আলুভাজা বা ফ্রেঞ্চফ্রাই খেলে দেহে যাবে ৩১২ ক্যালরি ও ১৩ গ্রাম চর্বি। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ মূলক গবেষণায় দেখা গেছে- ভাজাপোড়া খাবার ও ফাস্ট ফুড ওজন বাড়ায়। হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি করে- যে কোনো ভাজা খাবার রক্তচাপ বাড়ায়, ভালো কোলেস্টেরল ‘এইডিএল’য়ের মাত্রা কমায় আর স্থূলতার সমস্যা তৈরি করে। বস্টনের হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, কত ঘন ঘন ভাজা খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটার ওপর ভিত্তি করে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এদিকে কানাডা’র ‘ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি’র ‘পপুলেইশন হেল্থ রিসার্চ ইন্সটিটিউট’য়ের ২২টি দেশের ওপর করা পর্যবেক্ষণে জানানো হয়, ভাজা খাবার, পিৎজা ও লবণাক্ত নাস্তা খাওয়ার জন্য তাদের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে ১৬ শতাংশ। ডায়াবেটিস হতে পারে- ভাজা খাবার এবং মিষ্টি পানীয় পান- দেহের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বাড়ে যে কারণে বৃদ্ধি পায় ওজন, রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে, বাড়ে প্রদাহের মাত্রা। ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়- ইরানের শহীদ বেহেস্তি ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্থ’য়ের করা গবেষণায় এরকমই ফলাফল পাওয়া গেছে। ব্রণের সমস্যা বাড়ায়- জার্মানির ‘ইউনিভার্সিটি অফ অসনাব্রুক’য়ের ত্বকবিজ্ঞান বিভাগের করা গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে- পরিশোধিত কার্ব, ফাস্ট ফুড ও মসলাদার খাবার ব্রণ তৈরিতে ভূমিকা রাখে। আবার চীনের ‘হসপিটাল অফ চায়না মেডিকেল ইউনিভার্সিটি’র ত্বক-বিজ্ঞান বিভাগ ৫ হাজার চীনা তরুণদের ওপর পর্যবেক্ষণ করে জানায়- ভাজা খাবারের জন্য ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে ১৭ শতাংশ। অন্যদিকে তুরষ্কের ‘এস্কিসেহির ওসমানগাজি ইউনিভার্সিটি’র ত্বকবিজ্ঞান বিভাগ ২ হাজার ৩শ’ তরুণের ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে জানায় মসলাদার খাবার খাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে ব্রণের সমস্যা বৃদ্ধি ঘটেছে ২৪ শতাংশ। এ ছাড়া মিষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণেও এই সমস্যা হতে পারে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় সমস্যা তৈরি করতে পারে- মসলাদার খাবার বেশি খাওয়া হলে দেখা দেয়- উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা। যা থেকে মস্তিষ্কের গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বার্মিংহামের ‘ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা’ ২ হাজার ৮৩ এবং যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’ ১৮ হাজার ৮০ জনের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখতে পায়- মসলাদার খাবার খাওয়ার কারণে তাদের মস্তিষ্কের গঠন, কোষের ও কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসলাদার খাবার এড়ানোর উপায়- নানান পন্থায় মসলাদার ভাজাপোড়া ও মিষ্টিযুক্ত খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায়। সেদ্ধ: সবজি, মাছ ও ডাম্পলিং তৈরির ক্ষেত্রে গরম পানিতে সেদ্ধ করা যায়। যা আসলেই স্বাস্থ্যকর। এয়ার ফ্রাই: খাবারে চারদিকে গরম বাতাসের ঘুর্ণি তৈরি করে এয়ার ফ্রায়ার যন্ত্র রান্না করে। ফলে ভাজা খাবার তৈরিতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ তেল কম প্রয়োজন হয়। গ্রিল্ড: যে কোনো খাবার আগুনে পুড়িয়ে খেতে বেশি তেলের প্রয়োজন হয় না। মাংস ও সবজির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। ওভেন ফ্রাই: ২৩২ ডিগ্রি সে. তাপে খাবার রান্না করলে অল্প বা কোনো তেল ছাড়াই খাবার মচমচে করে তৈরি করা যায়। ফ্রেঞ্জ ফ্রাইয়ের পরিবর্তে বা বড়া না তৈরি করে আলু এভাবে খাওয়া যেতে পারে।
ভিন্ন স্বাদের অরেঞ্জ চিকেন
সারাদিন রোজা রেখে ইফতারিতে অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার না খেয়ে স্বাস্থকর খাবার খাওয়া উচিত। এ সময়টাতে বাহিরের খাবার না খেয়ে ঘরে তৈরি খাবার খেতে পারেন। অনেকেই ইফতারিতে ভিন্নরকম খাবার খেতে পছন্দ করেন, তারা কমলা দিয়ে চিকেন রান্নার এই রেসিপি জেনে নিতে পারেন। চলুন অরেঞ্জ চিকেন বানানোর প্রস্তুতি নেই। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় এই পদ তৈরির সহজ রেসিপি জেনে নিন। যা যা লাগবে- চিকেন, কমলা, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, পেঁয়াজ, শুকনো মরিচ, কাশ্মীরি মরিচ গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, চিনি, তেল, ডিম, ভিনিগার, কর্নফ্লাওয়ার, সাদা তিল, লবণ    যেভাবে বানাবেন- প্রথমে চিকেনটা কেটে ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর এতে হলুদ, ভিনিগার, লবণ, ডিম ও টমেটো কেচাপ দিয়ে ম্যারিনেট করুন। অন্তত ২ ঘণ্টা রেখে দিন। ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। রান্নার ১৫ মিনিট আগে ফ্রিজ থেকে বের করুন। এবার একটি কড়াইয়ে তেল গরম করুন। এতে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা বাটা দিন। একটু ভাজুন। আদা ও রসুনের ভাজা গন্ধ ছাড়বে। এরপর এতে টমেটো পেস্ট দিয়ে দিন। আবারও স্বাদমতো লবণ ও হলুদ, লাল মরিচের গুঁড়ো দিন। ভালোভাবে মশলা কষাতে থাকুন। মশলা কষে এলে বেশি করে কমলার রস দিন। মশলা থেকে তেল ছাড়তে শুরু করবে। এরপর এতে ম্যারিনেট করা চিকেনটা দিয়ে দিন। আবারও ভালো করে কষিয়ে নিন। সামান্য গরম পানি দিন। এবার ঢাকনা দিয়ে রাখুন। মাংস সেদ্ধ হতে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে ওপর থেকে সাদা তিল ও কমলালেবুর  পাল্প ছড়িয়ে দিন। তৈরি হয়ে গেল অরেঞ্জ চিকেন। ইফতারে রুটি বা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন।
সুস্থতায় ইফতারে যা খাওয়া উচিত
তীব্র গরমের এই সময় রোজা রাখা এবং সুস্থ থাকাটা বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয়। আবহাওয়ার ওপর কারও হাত না থাকলেও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই কঠিন সময়ে আপনি পেতে পারেন স্বস্তি ও প্রশান্তি। এ জন্য ইফতার ও সেহেরিতে বেশকিছু খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম। আবার কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় রাখলে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে রোজা রাখার সময়টা কিছুটা হলেও সহজ হবে বলে আশা করা যায়। রমজানে আপনি যেসব খাবার খেতে পারেন, সেগুলো নিয়ে আজকের আয়োজন। বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ফারাহ মাসুদা ইফতারে এমন কিছু খাওয়ার পরামর্শ দেন যা উদরপূর্তির পাশাপাশি শরীরের সার্বিক পুষ্টিচাহিদা পূরণেও সহায়তা করে। তিনি পরামর্শ দেন, “গরমকালে সারা দিন শরীর থেকে প্রচুর পানি ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। রোজার দিনে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করা যায় না। তাই ইফতারে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।” পানির চাহিদা পূরণ করতে যে কোনো রসাল বা তরল খাবার যেমন- ফলের রস, শরবত, সুপ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এতে সারাদিনের পানির ঘাটতি কমে আসে।” বললেন এই অধ্যাপক। তিনি আরও বলেন, “একবারে বেশি পানি পান করা ঠিক নয়। ইফতারের পর থেকে খানিকক্ষণ পর পর অল্প পরিমাণে পানি পান করতে হবে।” তবে কোনোভাবেই কৃত্রিম রং মেশানো জুস বা কোমল পানীয় খাওয়া ঠিক নয়। এতে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাছাড়া সারাদিন কিছু না খেয়ে ইফতারে আজে বাজে খাবার না খাওয়াই ভালো- বলে মনে করেন এই পুষ্টিবিদ। তিনি বলেন, “ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে চাইলে অবশ্যই তেল সমৃদ্ধ ও ভাজাপোড়া-জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। তাছাড়া অতিরিক্ত মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। কেউ চাইলে হালকা মিষ্টিজাতীয় খাবার রাখতে পারেন। তবে তার পরিমাণ যেন খুব বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।” তার দেওয়া অন্যান্য পরামর্শগুলো হল- সরাসরি মিষ্টি না খেয়ে মিষ্টি ফল, পুডিং খাওয়া যেতে পারে। ঠিক ইফতারের সময় দুধের তৈরি মিষ্টি খাবার যেমন- পায়েস, সেমাই ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে ইফতারি শেষে এই ধরনের খাবার খাওয়া যেতে পারে। ইফতারে খেজুর একটি আদর্শ খাবার। মিষ্টি ফল হওয়ায় দ্রুতই রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়াও এটি ডাইজেস্টিভ এনজাইম বিতরণকারী হিসেবে কাজ করে যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কেবল খেজুরই নয় অন্য যে কোনো ফল ইফতারে রাখুন। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা সহজে পূরণ হবে। তাছাড়া ফল আঁশ বহুল হওয়ায় তা অন্যান্য খাবার হজমেও সাহায্য করে। ইফতার ও সেহেরিতে আঁশজাতীয় ফল খাওয়া ভালো। কারণ এই ধরনের ফল বেশিক্ষণ পানি ধরে রাখতে পারে। তাই ফলমূল ও সবজি শরীরকে ‘ডিটক্সিফাইন’ হতে সাহায্য করে। ফলে শরীর সুস্থ থাকে । এই সময় অতিরিক্ত চা বা কফি এবং কোমল পানীয় পান করা থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ অতিরিক্ত চা ও কফি শরীরের পানি শূন্যতার সৃষ্টি করে। অনেক ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়। ইফতারে পেট ঠাণ্ডা থাকে এমন খাবার যেমন দুধচিড়া বা দই-চিড়া অথবা মুড়ি খাওয়া ভালো। দই পেটের সার্বিক সুস্থতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। অনেকে ইফতারে তেহারি, বিরিয়ানি ধরনের খাবার খান। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কোনোভাবেই এই ধরনের খাবার ইফতারিতে খাওয়া উচিত না। কারণ এইগুলো পেট গরম করে, ফলে নানা রকমের পেটের অসুখ দেখা যায়। তাই সুস্থ থাকতে ইফতারের সময় বেশি করে তরল খাবার ও ফলমূল খেতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইফতার শুরু করার সময় খুব বেশি তাড়াহুড়া করে খাওয়া উচিত নয়। একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খাওয়া উচিত। প্রথমে, দুতিনটি খেজুর খেয়ে পানি পান করা। তারপর কিছু সময়, আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট বিরতি দিয়ে ভারি খাবার খাওয়া প্রয়োজন। কারণ মস্তিষ্কে খাদ্য সংবেদন পৌঁছাতে একটু সময় লাগে। নির্ধারিত সময়ের আগেই যদি খাওয়া শুরু করা হয় তবে অধিক ভোজনের সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ।
ভালো খেজুর চেনার উপায়
স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে খেজুর একটি সুপারফুড হিসেবে বিবেচিত। খেজুর স্বাদেও যেমন সুস্বাদু, এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। ইসলামি গবেষকরা বলেন, ইফতারে খেজুর খাওয়া সুন্নত। রমজানে খেজুরের চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। ফলে বাজারে এই চাহিদাকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ খেজুর বিক্রি করেন। তাই খেজুর কেনার আগে তাতে কৃত্রিম কোনো উপাদান মেশানো আছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। খেজুর চেনার বেশ কিছু উপায় আছে।  চলুন জেনে আসি- ভালো মানের খেজুরের চামড়া সাধারণত একটু কুঁচকানো হয়, তবে শক্ত নয়। আবার উপরের চামড়াও বেশি নরম হয় না, তবে চকচকে ও উজ্জ্বল হয়।আর যদি খেজুরের গায়ে দানাদার কিছু কিংবা তেল বা পাউডারজাতীয় কিছুর উপস্থিতি দেখেন তাহলে বুঝবেন সেটি ভেজাল, মানহীন কিংবা নিম্নমানের খেজুর। ভালো কিংবা খারাপ বা নিম্ন মানের খেজুর কি না তা যাচাই করার আরও এক উপায় হলো খেজুরে উপস্থিত মিষ্টির মাত্রার স্বাদ নেওয়া। খেজুরের প্রাকৃতিকভাবে থাকা মিষ্টি হয় সহনীয় পর্যায়ের। তাই অতিরিক্ত মিষ্টি স্বাদের খেজুরে কৃত্রিম কিছু মেশানো থাকতে পারে। খেজুর কেনার আগে কোন দেশেরটা কিনছেন তা জেনে নেওয়া জরুরি। খেজুর উৎপাদনের দিক থেকে মিশর বিশ্বে প্রথম। এরপর ইরান ও সৌদি আরবের অবস্থান তৃতীয়। বিভিন্ন ধরনের খেজুরের মধ্যে আজওয়া, আনবারা, সাগি বা সুগায়ি, সাফাওয়ি, মুসকানি, মরিয়ম খেজুর অন্যতম। আরও আছে খালাস, ওয়াসালি, বেরহি, শালাবি, ডেইরি, মাবরুম, ওয়ান্নাহ, সেফরি, সুক্কারি, খুদরি ইত্যাদি। এদেশে আজওয়া ও মরিয়ম খেজুরের চাহিদা বেশি। ভালো খেজুর চেনার আরও এক কৌশল হলো পিঁপড়া ও মাছির উপস্থিতি লক্ষ্য করা। যদি দেখেন খেজুরের সামনে মাছি ও পিঁপড়া ভিড় করছে, তার মানে সেটি ভালো খেজুর না। এটি পরীক্ষা করতে ঘরের কোনো খোলা স্থানে খেজুর রাখুন। তারপর পরীক্ষা করুন। প্যাকিং করা খেজুর কেনাই সবচেয়ে ভালো। এই খেজুরগুলোর প্যাকেটে সাধারণত মেয়াদ লেখা থাকে। এছাড়া খোলা খেজুর কিনতে হলে খেয়াল রাখতে হবে খেজুরে যেন পচা গন্ধ, পোকা ধরা, বেশি কালচে বা শুকিয়ে যাওয়া না হয়। খেজুর সাধারণত দেড় বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে ফ্রিজের নরমালে রাখলে খেজুর সবচেয়ে বেশি ভালো থাকে। সতর্কতা, অনেকেই ৫-১০ কেজি বক্সের খেজুর কিনে থাকেন। পরে দেখা যায়, বক্সের উপরে সাজানো বড় খেজুর ভেতরে এবং নিচে ছোট ছোট খেজুর। তাই বক্সের খেজুর কেনার আগে অবশ্যই বক্স খুলে সেটির উপরে ও নিচে একই ধরনের খেজুর রয়েছে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।