• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

Love is everything

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:১৪

গ্রামের সাদামাটা ছেলে স্বপ্ন। বড় অসহায় ছেলে। যখন তার বয়স মাত্র ছয় মাস তখন তার বাবা মারা যান। মা-ই তার একমাত্র অবলম্বন। স্বপ্ন ছাত্র হিসেবে মেধাবী। তার মায়ের পড়াশোনা নেই বললেই চলে। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে রসায়নে অনার্স কোর্সে ভর্তি হয় স্বপ্ন। মেসের খরচ বহন করাটা তার মায়ের পক্ষে খুব কঠিন। নানান জল্পনা-কল্পনার পর মেসে উঠেছে। দুটা টিউশনি জুটিয়ে মোটামুটি চলে যাচ্ছে।

অন্য সবার মতোই স্বপ্নেরও প্রেম এসেছে নীরবে। তার ডিপার্টমেন্টেরই বান্ধবী জয়াকে তার খুব ভালো লাগে। জয়া ধনী ঘরের একমাত্র মেয়ে। তার বাসা শহরেই। খুব স্মার্ট মেয়ে। শুধু চলাফেরায় স্মার্ট নয় তার একটা স্মার্ট মনও রয়েছে। জয়ার মা মারা গেছেন। তার বাবা তাকে অনেক ভালোবাসে। জয়াকে মনের কথা বলার মতো সাহস স্বপ্নের নেই। তাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল স্যারের অ্যাসাইনমেন্টের কাজে জয়াকে সাহায্য করার সময়। স্বপ্ন সাহায্যটা করেছিল নিজে যেচে পড়ে। কারণ জয়াকে তার প্রথম দিন থেকেই ভালো লাগত। তাই কথা বলার উছিলা খুঁজছিল।

জয়াকে একদিন মন খারাপ করে ক্যাম্পাসে বসে থাকতে দেখে স্বপ্ন মন খারাপের কারণ জানতে চাইলে জয়া তাকে সবকিছু বলে। রনির সাথে তার তিন বছরের সম্পর্ক। কিন্তু গত সপ্তাহে রনি তাকে কিছু না বলেই সম্পর্ক ব্রেকআপ করে ফেলে। জয়া অনেক কান্নাকাটি করেছিল। কিন্তু জয়া কোনোভাবেই সম্পর্কটা জোড়া লাগাতে পারেনি। স্বপ্নের মনটা ভেঙে গেল। নিজের ক্রাশের মুখে এমন কথা শুনে খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক। কিন্তু মনে মনে শপথ করল জয়াকে সে যেভাবেই হোক সবসময় ভালো রাখার চেষ্টা করবে। শুরু হলো তাদের নতুন বন্ধুত্ব। বেশ চলছিল।

৮ ফেব্রুয়ারি, প্রপোজ ডে। সকাল বেলা স্বপ্ন জয়াকে ফোন দিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে বলে। দুজনে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ স্বপ্ন জনশূন্য জায়গা দেখে হাঁটু গেরে বসে সহসাই জয়ার পথ অবরোধ করে বলল:

- আচ্ছা তুই গত এক মাসে কেমন ছিলি? - অনেক ভালো কিন্তু তুই এভাবে আমার সামনে বসলি কেন? উঠ্ প্লিজ মানুষ দেখলে কী বলবে! - আগে বল কেমন ছিলি?

- বললাম তো বাবা অনেক ভালো।

- যদি বলি এরকম ভালো তোকে সারা জীবন রাখতে চাই। বলেই তার সামনে লাল টুকটুকে গোলাপ ধরে বলল- বাসবি ভালো আমায়?

- না।

- কী সমস্যা আমার বল?

- তোর সমস্যা হলো তুই লাল গোলাপ নিয়ে আমাকে প্রপোজ করলি। আরে গাধা তুই জানিস না প্রপোজ করার সময় পিংক রোজ আনতে হয়?

- আচ্ছা সরি। গোলাপ লাগবে না। বলেই গোলাপ ছুড়ে ফেলে। আই লাভ ইউ জয়া। তোকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।

- জানি তুই পারবি। লাভ ইউ টু।

হয়ে গেলো তাদের প্রেম। সুন্দর দিন কাটতে লাগল দুজনের। ক্যাম্পাসে বসে তারা দুজনে প্রতিদিন গল্প করে, ভবিষ্যৎ জীবনের পরিকল্পনা করে, বাদাম খায়। একদিন গল্প করতে করতে স্বপ্ন এক দোকানদারকে বলল- মামা ভুট্টার খইয়ের প্যাকেট কত? একথা শুনে জয়ার সে কী হাসি! আরে ওগুলোকে তো পপকর্ন বলে। স্বপ্ন বলল- ঐ হলো আর কী। তুমি যেটা পপকর্ন বলো আমি সেটাকে ভুট্টার খই বলি।

স্বপ্নের বিবেক তাকে বারবার তাড়া করছে তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তাদের ফ্যামিলির স্ট্যাটাস আর জয়াদের স্ট্যাটাস আকাশ-জমিন পার্থক্য। পরের দিন সকাল থেকে জয়া স্বপ্নকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু স্বপ্ন ফোন ধরছে না। এদিকে জয়া অস্থির। কাল রাতের পর আর কথা হয়নি।

দুপুরের পর স্বপ্ন জয়াকে ফোন দেয়। ফোন ধরেই জয়া বলে- কী সমস্যা তোমার? ফোন ধরছো না কেন?

- একটু ব্যস্ত ছিলাম।

- কী এমন ব্যস্ত জনাব যে আমাকে একটা মেসেজ পর্যন্ত করার সময়টাও আপনি পাননি।

- একটু ডাক্তারের কাছে গেছিলাম।

- ডাক্তারের কাছে কেন? কার কী হয়েছে?

- আমারই সামান্য একটু সমস্যা। আচ্ছা বাদ দাও। খাইছো তুমি?

- না বাদ দিবো কেন। জয়া শুনার জন্য মরিয়া।

স্বপ্ন বলল আমার গোপন সমস্যা। - কী এমন সমস্যা যা আমাকে বলা যায় না।

- আচ্ছা পরে বলবো।

তারপর কিছুদিন কেটে যায়। সমস্যাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বপ্ন আবার ডাক্তারের কাছে যায়। এবার ডাক্তারের রিপোর্ট শুনে স্বপ্নের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। জয়াকে সে কেমন করে বলবে। ধীরে ধীরে স্বপ্ন জয়াকে এড়িয়ে যেতে থাকলো। জয়া সেটা বুঝতে পেরে একদিন ডেকে বলল- স্বপ্ন, তুমি কেন আমাকে এড়িয়ে চলছো? তুমি তো আমাকে সুখী রাখবে বলে কথা দিয়েছিল তাহলে এমন করছো কেন? রনিকে হারিয়ে প্রায় শেষ হয়ে গেছিলাম। তুমি এসে রনির অভাব পূরণ করেছো। কিন্তু তোমাকে না পেলে বাকীটুকু থাকবো না স্বপ্ন। প্লিজ আমাকে ভুলে যেও না। আমার সাথে এমনটা কর না। স্বপ্ন নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো উত্তর না দিয়েই স্বপ্ন চলে গেলো।

রাতে জয়া স্বপ্নের বন্ধু অশেষকে ফোন দিয়ে বলল- স্বপ্নের কী হয়েছে তুমি জানো?

অশেষ- তুমি কী জানো না নাকি?

- না, সে আমাকে বলেনি তো। কোনোভাবেই বলছে না। তুমি বলো প্লিজ।

জয়ার জেদাজেদিতে অশেষ এক পর্যায়ে বলেই ফেলল। তার সেমিনোমা ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তার বলেছে এটা নাকি সেরে যায়। তবে এজন্য ৯ লাখ টাকা তার দরকার। কিন্তু পরিবার থেকে এতো টাকা মেনেজ করা কোনোমতেই সম্ভব নয়।

কথাগুলো শুনতে শুনতে তার দুচোখ দিয়ে আশ্রুধারা বয়ে যাচ্ছে। ফোন রেখে দিয়ে কী করা যায় তাই নিয়ে ভাবছে। পরের দিন জয়া তার ডিপার্টমেন্টের বন্ধুদের সবাইকে ডাকল। ডেকে সবাইকে হাত জোর করে আনুরোধ করল। সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল। পত্রিকায় সাহায্যের আবেদন জন্য খবর ছাপানো হলো। ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে টাকা তুলতে লাগল।

ছয় লাখ টাকা মেনেজ হলো। আরও তিন লাখ টাকা দরকার। সময়ও বেশি দিন নেই। এদিকে স্বপ্ন বাসায় চলে এসেছে। উপায় একটাই জয়ার বাবাকে বলতে হবে। কিন্তু জয়া তাদের রিলেশনের কথা বাবাকে কীভাবে বলতে পারে। পরের দিন সকালে ভয়ে ভয়ে বাবাকে সব বলল।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: ক্ষুধার্ত গাংচিল
--------------------------------------------------------

-বাবা আমি ছেলেটিকে খুব ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। তার চিকিৎসার জন্য আরও তিন লাখ টাকা দাও না বাবা। সত্যি তাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। জয়ার বাবা রাগ করে তাকে বিদায় করে দিল। এদিকে আবার ব্যবসায়ই জয়ার বাবার বেশ লোকসান হয়েছে।

সারারাত জয়ার ঘুম নেই। তার বাবা তাকে রুমে দেখে যাচ্ছে। জয়ার চোখ জলে ছল ছল করছে। সকালে তার বন্ধু ফোন দিয়ে বলল চিকিৎসার টাকা মেনেজ হয়ে গেছে। তুই চিন্তা করিস না। একজন ভদ্র লোক টাকাটা পাঠিয়েছেন। জয়া অনেক রাগ অভিমান আর ক্ষোভের সাথে বাবাকে ধিক্কার দিয়ে বলে গেলো লাগবে না তোমার টাকা। তোমার টাকা নিয়ে তুমি থাকো। আমি চললাম। আজ থেকে তোমার মেয়ে মরে গেছে।

অবশেষে স্বপ্নের চিকিৎসা করানো হলো। হাসপাতালের কেবিনে জয়ায় বাবা আসল। বাবাকে দেখে জয়া রাগে বন্ধুদের বলল তোমরা উনাকে চলে যেতে বলো। উনাকে উনার টাকা নিয়ে থাকতে বলো।

অশেষ বলল- উনি চার লাখ টাকা না দিলে স্বপ্নের চিকিৎসাটাই হতো না।

বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল জয়া।

বাবা বলল- তুমি ছাড়া আমার কে আছে রে মা। তোমার সুখই আমার সুখ। তোমার পছন্দই আমার পছন্দ।

❤ swapon kumar ghosh

* BiskClub-ভালোবাসার গল্পসল্প থেকে বাছাই করা পাঠকদের গল্প নিয়ে rtvonline ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে।

আরও পড়ুন:

সি/

মন্তব্য করুন

daraz
  • চলুন ভালোবাসার গল্প শুনি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প এবার স্টার সিনেপ্লেক্সে!
শেষ বিদায়ে ভালোবাসায় সিক্ত জাতীয় পতাকার নকশাকার
সমুদ্রের রোমাঞ্চকর গল্প বলেন তারা, শোনান গান
‘শেষমেশ’, যে গল্প কাঁদিয়েছে দর্শকদের
X
Fresh